অমানুষের ভালোবাসা!
অমানুষ
..
..
- আবির তুমি একটু বাইরে যাও। আমি রিয়ার সাথে একটু কথা বলবো।
ল্যাপটপে একটা ডকুমেন্ট খুঁজছিলাম। এমন সময় আমার অফিসের স্যার আমাকে উপরের কথাটা বললেন। আমিও তার কথামত বাইরে চলে এলাম। যাক এবার একটা সিগারেট জ্বালানো যায়।
সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে ফোন দিলাম ফিরোজ ভাইকে।
- ভাই আজ রাতে একটা রুম লাগবে। (আমি)
- কার জন্যে? (ফিরোজ)
- আর কার জন্য? আমার বসের জন্য। হালকা পানির ব্যবস্থা রাখবেন। এবার টাকা মনে হয় একটু বেশিই পাবেন।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তোমাকে জানাচ্ছি।
..
আমি আবির। একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করি। আমি কোম্পানির সিইওর ব্যাক্তিগত সহকারি।
অবশ্য স্যারের একজন মেয়ে সহকারিও আছে। তবে সে অফিসের চেয়ে বেশি বিছানায় স্যারকে সাহায্য করে।
আমার স্যার আসলে মানুষের চামড়া পরা এক অমানুষ। কিছুদিন পরপর আমাদের অফিসের কোন না কোন মেয়েকে নিয়ে রাত না কাটালে তার হয়তো পেটের ভাত হজম হয় না।
আর রাত কাটানোর যাবতীয় বন্দোবস্ত আমাকেই করতে হয়। প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো এমন পাপের ভাগীদার হতে। কিন্তু এখন সয়ে গেছে। আসলে পেটে ভাত না থাকলে পাপ পূন্যের কোন ফারাক থাকে না।
..
আজ যে মেয়েকে নিয়ে আমার স্যার রাত কাটাবেন তার নাম তানিয়া। মাত্র দুইমাস হলো সে চাকরিতে যোগ দিয়েছে। প্রথম দিনেই সে স্যারের নজরে পড়ে যায়। আর নজরে পড়া মানেই শিকারে পরিণত করা।
..
- আবির এই নাও। এটা রাখো তোমার কাছে। আর ব্যবস্থা সব হয়েছে?
- জী স্যার সব ব্যবস্থা হয়েছে। এই নিন ঠিকানা। এসি রুম, সাথে হালকা ড্রিকংসের ব্যাবস্থাও করতে বলেছি।
- ভেরি গুড আবির। যাও আজ তোমার ছুটি।
..
পকেটে কড়কড়ে পাঁচটা হাজার টাকার নোট। স্যারের কাছ থেকে বকশিশ। শরীরটা হালকা গরম গরম লাগছে। আসলে টাকা থাকলে সবার শরীরই গরম হয়ে যায়।
..
পরদিন অফিসে ঢোকার সময় দেখলাম একটা মেয়ে রিসিপশনে বসে আছে। হাতে একটা ফাইল।
রিসিপশনে বসা নাহার ম্যাডামকে জীজ্ঞেস করে জানতে পারলাম মেয়েটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। অনেকদিন ধরেই একটা পোস্ট খালি পড়ে আছে। হয়তো সেই পোস্টেই মেয়েটা অাবেদন করেছে।
মেয়েটা এক দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক পড়ছে না। কি দেখছে সে মেঝের দিকে তাকিয়ে?
..
মেয়েটার নাম সাহারা। আমাদের নতুন স্যাম্পল এক্সিকিউটিব। চেহারা খুব একটা অাকর্ষনীয় নয়, তবে খুবই মায়ামাখা। বিশেষ করে ওর চোখদুটো আমায় আকর্ষন করছে প্রবলভাবে। যেন সাহারা একটা চুম্বক, আর আমি একটা ছোট্ট আলপিন। আমাকে তো ওই চুম্বকের কাছে যেতেই হবে।
..
স্যার মোবাইলে কার সাথে যেন ঝগড়া করছে। অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দিচ্ছে। এসব শুনতে ভাল লাগে না। তাই একটা ফাইল স্যারের টেবিলে রেখে বেরিয়ে এলাম।
ইদানিং শুনছি সিগারেটের দাম বাড়ানো হবে। গরীবের উপর সরকার আর কত অত্যাচার করবে? এখন থেকে হিসাব করে সিগারেট খেতে হবে।
- অফিসের ভেতর সিগারেট খাচ্ছেন?
সবেমাত্র সিগারেট ধরালাম, এমন সময় কেউ একজন পেছন থেকে কথাটা বলে উঠলো। পেছনে তাকিয়ে দেখি সাহারা। ওর গলার স্বর এত মিষ্টি আগে জানতাম না।
- নাহ মানে.........
- সিগারেট খেলে ক্ষতি হয় জানেন না?
- হুম জানি।
- তাহলে জেনেশুনে কেন খান?
- না খেলে মাথাটা খোলে না।
- দেখবেন কোনদিন যেন মাথা খুলে পড়ে না যায়।
এই কথাশুনে আমি শব্দ করে হেসে উঠলাম।
- আপনার হাসিটা কার মত জানেন?
- কার মতো?
- মিশা সওদাগরেরর মত। বাংলা ছবির ভিলেন।
- সত্যিই?
- হুম সত্যি।
- খুব গর্ববোধ করছি আমার হাসি নিয়ে।
..
এভাবেই প্রতিদিন সাহারার সাথে কথা হতে থাকে। এভাবেই প্রতিদিন একটু একটু করে আমি ওর প্রতি দূর্বল হতে লাগলাম। একমূহুর্ত ওকে না দেখলে মনে হয় এক যুগ হয়ে গেল সাহারাকে দেখি না।
হঠাৎ করে এতটা দূর্বল হওয়ার কারন কি? সাহারা দেখতে তো এতটা আহামরি না। তাহলে কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে?
আমি কেন সাহারার প্রেমে পড়ে গেলাম হঠাৎ করে? ওর মাঝে এমন কি আছে যার কারণে ওকে সারাজীবনের জন্য কাছে পাওয়ার আদম্য ইচ্ছা মনে লাফালাফি করছে?
নাহ কোন প্রশ্নের কোন উত্তর পাচ্ছি না। তবে সাহারাকে আমি চাই, সারাজীবনের জন্য।
..
- আবির কিছুদিনের মধ্যেই আরেকটা রুম বুকিং দিতে হবে। সংকেতের অপেক্ষায় থাকো।
- আচ্ছা স্যার।
- এই নাও এই চেক রাখো। এটা তোমার বকশিশ।
- ধন্যবাদ স্যার।
..
আবারো একটা পাপের কাজে সাহায্যের অপেক্ষা। জীবনটা নরকে পরিণত হতে আর কি লাগে?
একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে খুব। তবে পকেটে সিগারেট নেই। কারন সাহারা নিষেধ করেছে। ইদানিং ওর আর আমার সম্পর্কটা আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে।
এখন চেষ্টা করি ওর প্রতিটা কথা রাখার।
তবে দুইদিন ধরে সাহারার মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। কেমন যেন মনমরা ভাবে বসে থাকে। ওকে এর আগে কখনই এমন অবস্থায় দেখিনি। কিছু জীজ্ঞেস করলেও যুৎসই উত্তর দিচ্ছে না।
- কি হয়েছে সাহারা?
- কিছু না। (অন্যমনষ্ক ভাবে)
- নাহ কিছু তো একটা অবশ্যই হয়েছে।
- আরে নাহ কিছু হয়নি। মাথাটা ব্যাথা করছে তাই।
- তুমি ভালভাবে মিথ্যা বলতে পারোনা। কি হয়েছে বলো প্লীজ।
হঠাৎ সাহারার চোখটা ছলছল করে উঠলো। কারণটা ধরতে পারলাম না।
- আবির আমি হয়তো আর এখানে চাকরি করতে পারবো না।
- কেন?
- তোমার স্যার আমাকে............।
সাহারা আর বলতে পারলো না। ওর কন্ঠ বন্ধ হয়ে গেছে কান্নার কারনে। স্যার তাহলে সাহারার দিকে নজর দিয়েছে?
- জানো এই চাকরিটা ছাড়লে আমাদের সংসার কিভাবে চলবে জানিনা। ছোট ভাইটা এবার এসএসসি দিবে। কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না।
- শান্ত হও।
- হয় চাকরি ছাড়তে হবে নয়তে স্যারের সাথে রাত........................।
সাহারার মুখটা চেপে ধরলাম।
- চুপ আর কোন কথা নয়। আমি একটা ব্যবস্থা করছি।
- কি করবে তুমি?
- স্যারের সাথে কথা বলবো। স্যার হয়তো আমার কথা ফেলবেন না।
- ধন্যবাদ আবির।
- ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবে না। ভালবাসার মানুষের জন্য এতটুকু তো করতেই পারি।
সাহারা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। আমি তখন মুচকি হাসছি। এভাবে হঠাৎ করে ভালবাসার কথাটা মুখ ফস্কে বেরিয়ে যাবে ভাবিনি।
..
- হ্যালো রায়হান কই তুই? (আমি)
- মামা ল্যাবে আছি রে। (রায়হান)
- তুই থাক মামা আমি আসছি।
- আচ্ছা আয় তাড়াতাড়ি।
স্যারকে বলে কোন লাভ হবেনা আমি জানি। স্যার যাকে একবার টার্গেট করবে তাকে বিছানায় নিয়েই ছাড়বে। তাই অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
..
- আবির কি খবর তোমার?
- জী স্যার ভাল।
- মনে হয় কালকেই রুম বুকিং দিতে হবে। তৈরি থাকো।
- জী স্যার।
- আচ্ছা এখন যাও আর হ্যা, লিটনকে এককাপ কফি দিয়ে যেতে বলো।
- ঠিক আছে স্যার।
..
- লিটন স্যার তোকে স্বরণ করেছে। যা এককাপ কফি দিয়ে আয় স্যারের টেবিলে।
- হ ভাই যাচ্ছি।
- আর শোন এক বাটি আপেল কেটে নিয়ে যা। কফির সাথে আপেল খেতে নাকি দারুন লাগে।
- বলেন কি? এই প্রথম শুনলাম এটা।
- আমিও প্রথম শুনলাম। স্যার বললো নিয়ে যেতে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
লিটন আপেল কাটছে। এই ফাঁকে আমি কফিতে কয়েকফোটা ব্ল্যাকল মিশিয়ে দিলাম। ব্যস আমার কাজ শেষ আপাতত।
..
- সাহারা চলো আজ ঘুরে আসি।
- কোথায় যাবে?
- জানিনা। তবে তোমার জন্য একটা সুখবর আছে।
- কি সুখবর?
- চলো যেতে যেতে বলি।
- ঠিক আছে চলো।
রিক্সায় বসে আছি আমি আর সাহারা। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সাহারার একটা হাত আমার হাতের উপর।
- জানো সাহারা স্যার আমার কথা রেখেছে।
- সত্যি?
- হ্যা সত্যি। শুধু তাই না, স্যার তোমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছে।
- তাই?
- হুম তাই।
..
ব্ল্যাকল খুবই ভয়ংকর একটা ড্রাগ। এটার জন্ম স্পেনে। একটা অতি বিষধর সাপ আর মাকড়শার বিষ মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই ড্রাগ। মূলত যারা সাধারন নেশায় সুখ খুঁজে পায় না তারাই এই ব্ল্যাকল নেশা হিসেবে ব্যবহার করে।
এই ড্রাগ মানুষের স্নায়ুকে মূহুর্তের মধ্য অতিমাত্রায় আন্দোলিত করে তোলে। মানুষের শরীর ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই আবার ঝীম মেরে যায়।
তবে এই ড্রাগ মাত্রাতিরিক্ত নিলে অতিরিক্ত স্নায়ুবিক চাপে মানুষের মৃত্যু অনিবার্য।
আর আমি আমার স্যারকে অনেক বেশি পরিমানেই ব্ল্যাকল দিয়েছি। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।
ভালবাসার মাঝখানে কেউ দেয়াল হয়ে দাঁড়ালে তাকে সরিয়ে দেওয়াটাই ভাল। আর স্যার ছিল একটা অমানুষ। উনাকে সরিয়ে দিয়ে পাপের বোঝাটা হালকা করে নিলে কিছুদিনের মধ্যেই সাধু হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।
..
সাহারাকে নিয়ে ঘুরছিলাম। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। বিরক্তি ভাব নিয়ে ফোনটা দেখলাম। নাহার ম্যাডামের ফোন।
- হ্যালো।
- আবির সাহেব আপনি কোথায়?
- এইতো বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি।
- আমাদের সিইও স্যার মারা গেছেন। হঠাৎ হার্ট এটাক হয়েছিল। পাঁচমিনিটের মধ্যেই মৃত্যু।
- বলেন কি? আমি এক্ষুনি আসছি।
সাহারাকে ধীরেসুস্থে তাদের বাসায় পৌছে দিয়ে অফিসের দিকে রওনা হলাম। এবার অমানুষটাকে দাফন করার ব্যাবস্থাও বোধহয় আমাকেই করতে হবে। তবুও মনটা হালকা লাগছে।
জীবনটা কি বিচিত্র পাঞ্জেরী!
Comments
Post a Comment