আপু এবং অসহায় ভাই!
-আমি তোকে কিস করবো ।
- কি বললি ?
- আজ না কি কিস ডে! তো তাই তোকে কিস করতে চাইছি।
এর পর রত্না আমাকে কিছু বলেছিল কি না তা মনে নেই এখন। শুধু মনে আছে, অল্প কিছুক্ষন পরেই আম্মুু আমাকে বাড়ির আঙ্গিনা ঝাড় দেয়া ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে ছিল মনের সুখ মিটিয়ে ! আব্বুও রেগে গিয়েছিল আমার উপর।
প্রাইমারি স্কুলে সে সময়ে আজকের মতো এত ভালোবাসার প্রকোপ ছিল না। এখন শুনতে পাই দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে সে মেয়েটাকেও নাকি প্রোপোজ করা হয়! এবং তাদের কারো কারো প্রেমিকও আছে ! কি অবস্থা! সে যাই হোক প্রাইমারীতে ভালোবাসার পাঠ না পেলেও ৬ষ্ট শ্রেনীতে ভর্তির দু মাস না যেতেই তার পাঠ নিলাম ! কিন্তু এই বোকা টাইপের আমি, সে ভালোবাসার পাঠ নিলেও ঠিক বুঝে উঠতে পারি নি।
রত্না আমার সমবয়সী চাচাতো বোন। ওর সাথে বেশ ভাব তখন, সারাক্ষণ দুজনে আড্ডা দেই, মনের কথা কই। ভেবেছিলুম ও আমাকে ভালোবাসে! তো ফেব্রুয়ারিতে অসুস্থ থাকার কারনে বেশ কয়েকদিন স্কুলে যাই নি, তের তারিখ গিয়ে শুনতে পাই, সবাই বলছে সেদিন না কি কিস ডে! পরের দিন ভালোবাসা দিবস। এখন এই কিস ডে তে ভালোবাসার মানুষকে না কি কিস করতে হয়!
আমি স্কুলে বসে হিসেব করেছিলাম, কজন কে আমি ভালোবাসি। রত্না, বড় আপু, আব্বু ও আম্মু। এই চার জন! বাড়ি গিয়ে তাদের কিস করবো! সেই সাথে রোজ ডে হতে হাগ ডে'র জন্য আফসোস হচ্ছিল। কেন যে আগে জানলুম না! অবশ্য রোজ ডের ব্যাখ্যা জানলেও প্রোপোজ, টেডি, হাগ যে কি সে সম্পর্কে নুন্যতম ধারনাও ছিল না আমার।
অতপর সেদিন বাড়ি ফিরে বই খাতা আমার ঘরে রেখেই প্রথমে রত্নার কাছে ছুটে গিয়েছি- তার পর কি ঘটেছিল আগেই বলেছি।
ইচ্ছেটা ছিল রত্নাকে কিস করার পর বড় আপুকে তার পর আম্মুকে শেষে আব্বুকে কিস করবো ! কিন্তু রত্নাকে কিস করতে চাওয়ার অপরাধে আম্মুর হাতে পিটুনি খেয়ে কিস করতে চাওয়ার ভয়াবহতা উপলব্ধি করে আব্বু আম্মুর কাছে গিয়ে কিস করার কথা বলার সাহস হয় নাই!
আপু কলেজ হতে ফেরে নি তখনো। আপু বাড়িতে থাকলে মা অমন করে পেটাতে পারতো না। এমনিতে অসুস্থ শরীর, মায়ের হাতে ঝাড়ু পেটা খেয়ে রাগ করে গিয়ে দরজা বদ্ধ করে শুয়ে পড়লাম। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই টের পেলাম শরীরে জ্বর ফিরে আসছে আবার।
আপু যখন কলেজ হতে ফিরে শুনলো মায়ের হাতে মার খেয়েছি, মায়ের সাথে রাগারাগি করলো সে খুব । হোক না সে আমার আপন মা, তবু আমাকে পেটাবে কেন? বাড়িকে সেই একমাত্র যে মাকে ভয় পেত না কখনো। বলা যায় বরং মা ই ওকে ভয় পেত । শ্বাশুড়ি বেঁচে না থাকলেও স্বামীর আগের স্ত্রীর মেয়েটা যেন মাকে শ্বাশুড়ির মতোই শাষন করতো! আমার জ্বরের প্রকোপে যখন আপুকে বললাম, "আপু কিস ডে তে না কি ভালোবাসার মানুষদের কিস করকে হয়! দেখেছো কেউ কিস করে নি আমাকে। কেউ ভালোবাসেনা আমাকে! তুই আমাকে কিস করবি না আপু? "
যে আপুটা এক সময় তার ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে গাইতো-
আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা...
আমার লক্ষী ভাইয়ের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা! সে চাঁদ কি আর আসে! তার ছোট ভাইটা বা তার কি বুঝতো! কিন্তু আপুটা চাঁদ না আসলেও সে তার ভাইয়ের কপালে বার বার চুমু খেতো। চাঁদ টিপ দিয়ে না গেলেও বোনের ভালোবাসার চুম্বনটা ঠিকই ছোট ভাইয়ের কপালে টিপ দিয়ে যেত। সেই ভাইটা একটু বড় হয়েছে তো কি হয়েছে? সে তো তার চেয়ে বড় হতে পারে নি! পারবেও না, সে তার কাছে চিরকালই ছোট থাকবে।
আপু আমাকে কাছে টেনে আমার কপালে বার কয়েক চুম্বন একেছিল সেদিন। খুব খুশি হয়েছিলাম সেদিন। খুব। খুব। অনেকদিন বছর চলে গেছে । আজ ফেব্রুয়ারির তের তারিখ। সেই স্মৃতি মনে পরে গেল । সেই সাথে চোখ বেয়ে জল পরা শুরু হলো । আপু আজ আর নেই, ক্যান্সারের সাথে জীবন যাপনের পর গত বছর চলে গেছে না ফেরার দেশে।
হঠাৎ করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে আপুর ফোন নম্বরে ডায়াল করলাম । জানি নম্বরটা বন্ধ, কল যাবে না - তবুও ডায়াল করলাম মনের খেয়ালে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই যান্ত্রিক নারী কন্ঠটা বলে উঠলো, "এই মহুর্তে আপনার.......সম্ভব হচ্ছে না" তার পর আপনা হতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলো। তখনো ফোনটা কানের কাছে ধরে রেখেছি। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। ফোন কানের কাছে ধরে ভোজা কন্ঠে বললুম,
" আপু আমর কপালে একটা চুমু দিবি?'
আপু এখন ওপারে। কেমন আছে জানি না। আমার ভেজা কন্ঠে বলা কথাটা শুনতে পেয়েছে কি? আমার আপু ওপারে ভালো থাকুক। সবার আপুরা ভালো থাকুক।
Comments
Post a Comment