সুখের নির্বাসন
সুখের নির্বাসন
শ্বশুর বাড়িতে কদম রাখতেই শালিকা ছয় নাম্বার বিপদ সংকেত জানিয়ে গিয়েছে। সতর্ক বার্তা শুনতেই ভাবনায় ঘুড়ছে, কী কী করেছি আজ? নিশ্চয় বড়সর কোনো ভুল। ছোট হলে তিন নাম্বার বিপদ সংকেত দিতো। তেমন কিছু মনে করতে পারলাম না। ভাবনার সমাপ্তি টেনে বউকে খুঁজতে শুরু করলাম। কারণ সে ছাড়া কেউ রহস্য উদঘাটন করবে না। রান্না ঘর থেকে কথার আওয়াজ আসছে, মানে সে এখন পাকের ঘরে গিন্নিপনা করছে। রান্না ঘরের সামনে যেতেই চোখ-মুখ গোল্লা গোল্লা করে তাকালো আমার দিকে। তার পাশে দাঁড়িয়ে শ্বাশুরি মা গরম তেলে লুচি ভাজছে। সে আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে হরহর করে বলতে শুরু করলো- আসছে আটকুড়োর ব্যাটা। মান সম্মান আর কিছু রাখলো না।
তার কথার আগা-মাথা কিছুই মাথায় ঢুকলো না। আমি আবার কি করলাম, যে এভাবে ক্ষেপে আছে। বউকে ডাকবো কি ডাকবো না, দোটানায় ভুগছি। পরক্ষণে মনে হলো রহস্য উদঘাটন করতে হবে। এই যে শুনছো, বলা মাত্র বউ তার হাতে থাকা লুচির গোলা আমার উদ্দশ্যে ছুড়ে মারলো। নরম আটার দলা থুতনিতে চিপকে গিয়েছে। পরিস্থিতি বেশ গরম বুঝতে পেরে চুপচাপ ভিজা বেড়ালের মতো সোফায় এসে বসলাম। শালিকা আমার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বেহাল দশা।
আলুরদম আর গরম লুচি, আহা! রাতের খাবারে বেশ মানানসই। কিন্তু আজ আমার কপাল খারাপ। খাবার টেবিলে সবার ডাক পরেছে। শুধু আমি বাদে। নিজের বউ চোখের সামনে বসে কতই না তৃপ্তি সহকারে গরম লুচি ছিড়ে আলুর ঝোলে চুবিয়ে চুবিয়ে খাচ্ছে। বউ এর এমন তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া দেখে খিদে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কিছু করার নেই। শ্বশুর বাড়ি বলে কথা। ডাক না পরলে কিভাবে খেতে যায়? সবাই যে যার মতো খেয়ে হাত ধুঁয়ে টেবিল ছেড়েছে। শ্বাশুরি মা রুমে যাওয়ার আগে উচ্চ কণ্ঠে বলল- আয়শা বলে দে কোনো অকর্মা ঢেকির জন্য আজ খাবার নেই। যদি ক্ষুধাবোধ করে তাহলে বাহির থেকে খেয়ে আসতে। না হলে যাদের সাথে বসে সন্ধ্যায় আড্ডা দিচ্ছিলো তাদের বাড়ি গিয়ে খেয়ে নিতে।
এতক্ষণে বিষয়টি বুঝলাম। আজ সন্ধ্যায় বাহিরে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। পাড়ার মোড়ে যেতে দেখা হয়ে গেলো এক বড় ভাইয়ের সাথে। আয়শার চাচাতো ভাই। যদিও ওদের সাথে সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমি তো জামাই। আমাকে ডাকলে তো আর বলতে পারি না, ভাইজান আপানাদের সাথে আমার শ্বশুর বাড়ির কারো সম্পর্ক নেই, তাই আপনাদের সাথে কথা বলা যাবে না। লোকমুখে ডেকেছে না বলতে পারিনি। চায়ের দোকানে বসে খানিক গল্প করেছি। চা সিগারেট খেয়েছি। এই বুঝেছি, গল্প বা চা বিপদ সংকেত এর কারণ না। ছয় নাম্বার বিপদ সংকেত এর কারণ সিগারেট। সিগারেট খাওয়া হয় না। গল্পে গল্পে ভাইজানের সাথে টেনে বসেছি। সেটাই হয়তো কেউ দেখে জানিয়েছে।
বউ রাগের চোটে রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। কয়েক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে কতক্ষন বউকে ডাকলাম। কিন্তু সে দরজা খোলা তো দূরের কথা, জবাব পর্যন্ত দিলো না। সারারাত তো আর দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না, তাই চলে আসলাম নিজের বাড়িতে। দ্বিতীয় তলা থেকে চিলেকোঠা। আমার শ্বশুর বাড়ির চিলেকোঠায় হলো আমার নিজস্ব বাড়ি।
ছাত্র জীবনে যখন প্রথম এই ব্যস্ত শহরে এসেছিলাম তখন এই বাড়ির চিলেকোঠা ভাড়া নিয়েছিলাম। দেখতে দেখতে নয় বছর কেঁটে গিয়েছে। এখনো সেই চিলেকোঠায় রয়ে গিয়েছি। পরিবর্তন হয়েছে শুধু আগে সিঙ্গেল ছিলাম এখন বিবাহিত। চিলেকোঠায় থাকতে থাকতে কখন যে বাড়ির মেয়ের মনে জায়গা নিয়ে নিয়েছি তা আমি আজও বোধগম্য করতে পারিনি। সরকারি চাকুরীরত অবস্থাতেই শ্বশুর মশাই সবার থেকে চিরবিদায় নিয়েছে। আয়শা মানে আমার স্ত্রী। বাবার মৃত্যুর পরে তার মা যখন তাকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি শুরু করলো তখন সে তার মাকে সোজা-সাপ্টা বলে দিয়েছিলো, সে বিয়ে করলে আমাকেই করবে। না হলে বিয়ে করবে না। এর কারণ আমি নিজেও জানি না। আয়শার সাথে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না। মাঝে মধ্যে পড়াশুনার ব্যপারে সাহায্য করতাম। ওদের কোনো কাজের জন্য ডাক পড়লে যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম। এতেই না কি আমি তারমনে জায়গা পেয়ে বসেছি।
মেয়ের জেদ এর কাছে হার মেনে শ্বাশুরি আম্মা তার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিয়েছে। আমি বাবা-মা হারা এতিম ছেলে। গ্রামের বাড়িতে অল্প একটু জমি ছাড়া কিছু নেই। আয়শার কথা ছিলো- বিয়ের করেছো ঠিক আছে। হিসাবি হতে হবে। দু'জন মানুষের জন্য বড় রুমের দরকার নেই। আগে যেমন চিলেকোঠা ভাড়া নিয়ে থেকেছো, এখনও এই চিলেকোঠা ভাড়া নিয়েই থাকবে।
নিজের শ্বশুর বাড়ির চিলেকোঠায় ভাড়া রয়েছি বউ নিয়ে। মাসে পাঁচ দিন শ্বশুর বাড়ি থাকি। এই পাঁচ দিন চিলেকোঠা তালা লাগানো থাকে। তখন কেউ এখানে আসে না। পাঁচ দিন বাদে আমি বা আয়শা কেউ দ্বিতীয় তলা মানে শ্বশুরগৃহে কদম রাখি না। পঁচিশদিন শ্বাশুরি ছাদে আসে না। আমরা যে পাঁচদিন তাদের বাসায় থাকি ঐ পাঁচদিন তিনি সবার সাথে ছাদে আসেন। তখন চিলেকোঠা দেখে মনে হয় পরিত্যাক্ত একটি রুম।
আমার সারা গা পানিতে ভিজে একাকার। ঘুম ভাঙানোর সহজ উপায়। ভেজা শরীরে বউ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আয়শা রাগানিত্ব চোখে তাকিয়ে দারাজ কণ্ঠে বলল- তোমার জ্ঞান বুদ্ধি কবে হবে শুনি?
কারণ বুঝতে না পেরে নিরিহের মতো বললাম- আবার কি হয়েছে?
এবার আরও রেগে গিয়েছে। রাগে দাঁত কটমট করতে করতে বলল- তুমি এখানে কেন ঘুমিয়েছো?
-কি করবো তুমি তো দরজা খুললে না রাতে।
কণ্ঠস্বর কোমল করে বলল- বউ রাগ করলে রাগ ভাঙাতে হয় জানো না? আহম্বকের মতো চুপ করে থাকলে বউ এর রাগ কমে না।
-দরজা না খুললে রাগ ভাঙাবো কি করে?
-তুমি জানো মা তোমাকে পছন্দ করে না। তারপরও আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। তোমার বোকামি ভালো লাগে। তাই বলে তুমি যা কখনো ধরো না সেই জিনিস তুমি চায়ের দোকানে বসে খাবে?
-সিগারেট মানুষ চায়ের দোকানেই বেশি খায়।
ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলল- মানুষ খাক, তুমি খাবে না। তোমার যদি এতই সিগারেট খাওয়া জরুরি হয়, ছাদে খাবে। একা খাবে। কারো সঙ্গে খেতে পারবে না।
বেশ কিছুদিন আগে হয়েছে কি, আমি গিয়েছি শ্বশুরালয়। সাতসকালে বউ ঘুম থেকে টেনে তুলতে গিয়ে ব্যর্থ। ঘুমে চোখ খুলতে পারছি না। হঠাৎ করে আমার বা চোখ জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হওয়ার অবস্থা। চোখের মধ্যে অসহ্য রকম জ্বলছে। ছুঁটে ওয়াশরুমে গিয়ে পানি দিয়ে কচলে কচলে ধুঁলাম। তারপর খানিক স্বস্তি মিলেছে। বাহিরে এসে দেখি বউ মিটমিট করে হাসছে। হাসির কারণ জানতে চাইলে বলল- ঘুম ভাঙানোর নিঞ্জা টেকনিক এক প্রয়োগ করেছি। তার টেকনিক হলো, সে আমার চোখের মধ্যে পানির সঙ্গে কাঁচা মরিচের রস মিশিয়ে একফোঁটা ঢেলেছে।
চোখে জ্বালা পোড়া নিয়ে চলেছি বাজারের উদ্দশ্যে। সকাল বেলা তাজা সবজি খরিদ করতে। বাজারে গিয়ে এদিক-সেদিক ঘুড়ছি। কি কিনবো! কিছু বলেনি বউ। বাজারের ব্যাগ হাতে দিয়ে বলেছে বাজার করে নিয়ে আসো। ঘন্টা খানেক ঘুড়ে ফিরে টুকিটাকি কিনে বাসায় ফিরেছি। বাজারের ব্যাগ দেখে বউ বেশ খুশি। ইয়া বড় একটা ব্যাগ ভরে বাজার নিয়ে এসেছি। নিজের বাজার করার অভিজ্ঞতার কথা মনে হতেই নিজেই গর্ববোধ করছি। সদাই ব্যাগ থেকে বের করছে আর বউ চোখ বাঁকা চোখে আমাকে দেখছে। লাউ শাক সাথে বউ আমার নির্বাক চোখে চেয়ে আছে তার মায়ের দিকে। পঞ্চাশ টাকার শাক। নদীর গুড়া মাছ দেখে ভালো লাগলো, নিয়ে নিয়েছি। কিন্তু এই মাছ যে বিপদ সংকেত এর কারণ হবে বুঝিনি। শ্বাশুরি মায়ের প্যাকেট হাতে ধরেই বলল- অকর্মাটাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এই মাছ আমি কাঁটতে পারবো না। আয়শা আটকুড়োর ব্যাটাকে বল মাছ কেঁটে-কুটে দিতে। না হলে আজ ওর একদিন কি তো আমার একদিন।
মায়ের এমন কথা শুনে আয়শার চোখের মধ্যে নোনাজল উঁকি দিতে শুরু করেছে। নিরিহি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল- তোমাকে কতবার বলেছি এসব ঝামেলা করবে না। মাছ কিনতে পারো না বুঝলাম, তাই বলে একগাদা পঁচা গুড়া মাছ নিয়ে আসতে হবে।
আগের মাসে ছোট শালিকার জন্মতিথি ছিলো। আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম সেখানে। তখন আরেক কান্ড ঘটেছে। আমি অফিস শেষ করে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন বউ এর ফোন। রিসিভ করতে বউ বলল কেক নিয়ে আসতে। অনেকক্ষণ রিসার্চ করে ভালো মানের একটি কেক কর্ণারে প্রবেশ করলাম। নিজের পছন্দমতো কেক দরদাম করে প্যাক করে দিতে নিলাম। কেক নিয়ে বাসায় আসতেই শালিকা নাছোরবান্দার মতো লেগেছে, সে কেক দেখবে। মানে এখনি দেখাতে হবে। বউ কেক এর প্যাকেট খুলে চোখ কপালে তুলে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। শালিকা আমার দিকে। বউ কেকের প্যাকেট রেখে আমার পাশে বসে ফিসফিস করে বলল- তুমি কি সত্যি সহজ-সরল না কী ভং ধরে থাকো?
-কেক পছন্দ হয়নি?
বউ এর রাগ অপাদমস্তক বিরাজ করছে। চিৎকার করে বলল- হলুদ, বেগুনি রঙয়ের ক্রিম দিয়ে কেক কে বানায়?
কালারে কি সমস্যা বুঝলাম না! কেক তো কেক। সেটা যে রঙয়ের হোক। বউ এর হাত আলতো স্পর্শ করতেই হাত সরিয়ে নিয়ে বলল- মা সত্যি বলে, তোমাকে দিয়ে কোনো কাজই হবে না।
-কেক পছন্দ হয় নাই? আরেকটা নিয়ে আসি?
বউ দাঁতে দাঁত চেপে বলল- টাকা তো গাছ থেকে পড়ে। ঝাকি দিলাম টুপটুপ করে পড়লো।
-গাছ থেকে পাতা টুপটুপ করে পড়ে না। টুপটুপ করে পানি পড়ে। পাতা পড়ার প্রকৃত শব্দ কেমন হবে বলতে পারছি না।
-তুমি চোখের সামনে থেকে বিদায় হও। তোমাকে কিছু করতে হবে না।
শ্বশুরালয় থেকে এসেছি আঠার দিন হয়েছে। আর সাতদিন পর আবার যাওয়ার সময়। কিন্তু আজ সকাল থেকে দেখছি বউ অনেক ফুরফুরে মেজাজে কাজ করছে। ছুঁটির দিনে সাধারণত দেড়িতে ঘুম থেকে উঠি, আজ উল্টো হয়েছে। বউ ডেকে তুলে চা নাস্তা দিয়ে গিয়েছে। নাস্তার পর্ব শেষ করতেই বউ বলল- আজ একটু বাড়িতে যাবো। মা সকালে ফোন করে বলেছে তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে।
না বলার মানে বিপদ সংকেতময় পরিস্থিতি নিজে ডেকে আনা। গোসল শেষ করে দেখি পাঞ্জাবি, পায়জামা আয়রন করে বিছানায় রেখে দিয়েছে। শ্বশুরগৃহে মিষ্টির প্যাকেট হাতে প্রবেশ করে দেখি শ্বাশুরি আম্মা রান্না ঘরে খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। মা-মেয়ে গল্প-গুজব করছে। আমি শালিকার সাথে টিভিতে কার্টুন দেখছি। হালকা কানে ভেসে আসলো শ্বাশুরি বউকে বলছে জামাইকে নাস্তা দিয়ে আয়। দুপুরে খেতে একটু লেট হবে।
খাবার টেবিলে বসে আমার চোখ চড়াকগাছ। এত রকম খাবারের আয়োজন আগে শ্বাশুরি করেনি। রুই মাছ ভুনা, ডিমের কোরমা, বেগুন ভাজি, পটল ভাজি, পোলাও, সাদা ভাত, খাশির রেজেলা, গরুর কালা ভুনা, গরুর মাংস, রোস্ট, লাচ্ছা সেমাই, দই, বুরহানি, কোল্ডড্রিংস। আমরা খাচ্ছি, শ্বাশুরি পাশে দাঁড়িয়ে পরম মমতার সাথে পরিবেষণ করছে। খাওয়ার পর্ব শেষ করে খানিক বিশ্রাম নিতে বিছানায় গা মেলেছি।
ছোট শালিকা এসে ডেকে গিয়েছে। সোফায় গিয়ে বসতে বউ চায়ের কাপ হাতে দিলো। মিষ্টির প্লেট সামনে শ্বাশুরি বসে আছে। লক্ষণ ভালো লাগছে না। আবার কি আমি কিছু করেছি? মনে করতে পারলাম না। হঠাৎ শ্বাশুরি বলল- বাবা! আমি যে সব সময় তোমার সাথে ঝাড়ি মেরে কথা বলি, তোমাকে আটকুড়োর ব্যাটা, অকর্মা বলি এসব কিন্তু তোমাকে ছোট করতে বা ছোট নজরে বলি না। না তোমার উপর রাগ বা অভিমান থেকে বলি। তুমি হয়তো ভাবতে পারো আমি তোমাকে অপছন্দ করি। করতাম একটা সময়। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম তোমার মতো নরম, সরল মনের মানুষের স্বভাব সব সময় ঠকে যাওয়া। সরল মনের মানুষগুলো সব সময় ঠকে। তোমার শ্বশুর ছিলেন তোমার মতো সরল মানুষ। তাকেও তোমার মতো বলে বুঝিয়ে কাজ করাতে হতো। তাই বলে যে তাকে আমি ভালোবাসতাম না, তেমনটা না। ঠিক আমার মেয়েও তোমাকে ভালোবাসে। তোমার সাথেই সংসার করছে। যেমনটা আমি করে গিয়েছি। তোমাকে বকাঝকা করার কারণ বর্তমান যুগে এতটা সহজ-সরল হলে চলতে পারবে না। বর্তমান সমাজের কিছু মানুষেরা সরল মনের মানুষগুলোর মগজ চিবিয়ে খায়।
শ্বাশুরি মা বলছে। বউ অপলকে তার মায়ের মুখে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলতে পারছি না। কারণ আমি জানি তিনি আমাকে অপছন্দ করলেও ঘৃণা করে না। নিজের ছেলে ভেবে বকাঝকা করে। তার চোখের কোণা ভিজে এসেছে। আঁচল টেনে বিন্দু কণা নোনাজল মুছে বলল- নিজের ছেলে নেই। তোমাকে সেই প্রথম থেকে ছেলের মতো দেখি। আয়শা তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না শুনে আমি জীবনের সব থেকে বড় ধাক্কা খেয়েছিলাম। মেয়ের জেদ এর কাছে হেরে গিয়েছি। মেয়ের হাসি-মাখা মুখ দেখে মানিয়ে নিয়েছি। আয়শার প্রতি তোমার যে খেয়াল রাখা, ভালোবাসা হয়তো আমার পছন্দমতো বিয়ে হলে সেখান থেকে পেতো না! তোমাকে বিয়ে করবে শোনামাত্র ধাক্কা খেয়েছিলাম। এখন আবার ধাক্কা খেয়েছি। তবে সেটা দুঃখের না। সুখের ধাক্কা। আল্লাহুর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি সব সময় তোমাকে এভাবেই রাখুক। সব সময় পরিবর্তন হতে নেই। তোমাদের সংসারে সুখ প্রতিনিয়ত ফুলের মতো বর্ষিত হোক।
আয়শা আমাকে আষ্টে-পিষ্টে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। পরিবার বুঝি এমনই হয়! যেখানে থাকে মান-অভিমান, ঝগড়া-বিবাদ। মায়ের বকুনি, বউ এর চোখ রাঙানি? মায়েরা এমনি হয়, সন্তানের সুখের কাছে তাদের পছন্দ-অপছন্দ কিছুই না। আয়শার চোখের পানিতে আমার সাদা পাঞ্জাবী ভিজে গিয়েছে। আমার ভালো লাগছে। আমারও পরিবার আছে। আমারও মা আছে, যে মা ছেলেকে বাস্তবতা বোঝাতে আটকুড়োর ব্যাটা, অকর্মা বলে সম্মোধন করে। যে মা জায়নামাজে বসে আমার সংসারে সুখ ভিক্ষা চাই রবের নিকটে। আমার ঘরে নতুন মেহমান এর আগমন হতে চলেছে। দুনিয়ার সব থেকে সুখের সংবাদের মধ্যে হয়তো এই সংবাদটি- আপনি মা/বাবা হতে চলেছেন। ছোট্ট রক্তকুন্ডুলি থেকে ধীরে ধীরে বেরে উঠবে আমার সন্তান। দুনিয়াতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যখন প্রথম তাকে স্পর্শ করবো তখন আমার কেমন অনুভূতি হবে? পরিবার মানে আবেগ। পরিবার মানেই সুখের নির্বাসন।
আয়শা বুক থেকে মাথা তুলে চোখ মুছে নিলো। পাশে রাখা মিষ্টির প্লেট থেকে একটি মিষ্টি তুলে আমার মুখের সামনে ধরলো। আমি অর্ধেক খেয়ে বাকি অর্ধেক ওর মুখে পুরে দিলাম। সে মিষ্টি কয়েক চিবুন দিয়ে আমার দিকে ভ্রু ভাজ করে তাকিয়ে বলল- সত্যি তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। মিষ্টি টক কেন?
আশরাফুল ইসলাম অন্তর
Comments
Post a Comment