চেক
অভ্র রুহির দিকে একটি চেক বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-আজ থেকে তোকে কিনে নিলাম। আজ থেকে তুই আমার।
রুহি কিছু টা অবাক ই হলো। ও রুহিকে চেক দিচ্ছে কেন?
রুহি আগ্রহ নিয়েই চেক টা নিলো।
চেকের এমাউন্টটার দিকে তাকিয়েই হেসে ফেলল।
এমাউন্টের ঘরটায় খুব ছোট্ট করে লিখা ছিলো..'I love you..'
আর নিচে ছিলো 'আজিজুল ইসলাম ' নামের একজনের সাইন।
তার মানে অভ্র ওর বাবার সাইন করা ব্লাঙ্ক চেক টা চুরি করে নিয়ে এসেছে। আর এতক্ষণে ওর বাবার নজরে সেটা পড়লে দারুণ কেলেঙ্কারি বেধে যাওয়ার কথা।
রুহি হাসি হাসি মুখ করে বলল,
-এই চেক টা কোথায় ভাঙাব??
-কেন আমাকেই দিয়ে দে। আমি ভাঙিয়ে আনছি।
-আচ্ছা, শোন আমি বাসায় যাচ্ছি। আজকে বাসায় মেহমান আসবে।
-চল আমি এগিয়ে দেই।
-না, আমি যেতে পারব।
অভ্রর দেয়া চেক টা ও খুব যত্ন করে নিজের ব্যাগে রেখে দিল।
অভ্র জানতেও পারল না ওর দেয়া সেই চেক টা রুহির কাছে অনেক বেশি মূল্যবান।
রুহির বাসার অবস্থা দেখে বুঝতে পারল মেহমান গুলি শুধু বাবার বন্ধু না। রুহিকে দেখতে এসেছে।
রুহির মা রুহিকে এসে বলল,
-শোন, এই শাড়িটা পরে আয়।
রুহি কিছুটা রাগত স্বরেই বলল,
-মা, আমি এসব শাড়ি টাড়ি পরে বসতে পারব না।
ওর বাবা এসে তখন বলল,
-ওকে শাড়ি পরতে হবে না। মা, তুই যেভাবে আছিস সেভাবেই চল।
রুহির সাথে পাত্রকে আলাদা করে কথা বলতে দেয়া হয়েছে।
অন্য কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ছেলেটি রুহিকে জিজ্ঞেস করল,
-আপনার ব্যাগ টায় কি মূল্যবান কিছু আছে?
-আপনার এমন কেন মনে হলো?
-না মানে, আপনি ব্যাগ টা চাইলে কোথাও রেখে আমাদের সামনে আসতে পারতেন। কিন্তু আপনি ব্যাগ টা সাথে করেই আমাদের সামনে আসলেন। এমনকি এখনো ব্যাগ টা এমন ভাবে ধরে আছেন যেন কেউ আপনার ব্যাগ থেকে মূল্যবান কোন কিছু কেড়ে নিয়ে যাবে।
-না এমনি। ব্যাগ টা আমার ভীষণ প্রিয়।
-ওহ আচ্ছা।
রাতে ও অভ্রর দেয়া চেকটার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক খুব একটা পড়ছে না। চোখ দিয়ে জল ও পড়ছে।
রুহি ভাবছে,
-তুই কখনো আমার প্রতি সিরিয়াস হবি না, অভ্র। সবসময় সব কিছু নিয়ে ফান করিস। আজকে হয়ত চেক টাও তুই ফান করেই দিয়েছিস। কিন্তু বিশ্বাস কর প্রথমবার তোর এই লেখাটা দেখে আমি কতটা খুশি হয়ে গিয়েছিলাম বুঝাতে পারব না। আনন্দে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কিন্তু পরে মনে হলো এটাও তোর ফান। শুধুই ফান।
অভ্র রুহিকে দেখতে পেয়ে বলল,
-কিরে তুই আমাকে এভোয়েড করছিস কেন?
-কই না তো।
-আমি বেশ বুঝতে পারছি। তুই আমার কল ধরছিস না। মেসেজ এর রিপ্লাই দিচ্ছিস না। চেকটা তোকে ফান করে দিয়েছি। তুই ওইটার জন্য আমাকে এভোয়েড করছিস না তো? চেকটা আমাকে ফিরিয়ে দে তাহলে।
শেষ কথা গুলি রুহির মনে তীরের মত বিধলো। আসলেই ও ফান করেই বলেছে। ও মুখ তুলে অভ্রর দিকে তাকাল। এরপর আবার চোখ নামিয়ে নিলো।
-আমি জানি তুই ফান করে বলেছিস। আমি সেটা সিরিয়াসলি নেই নি। আসলে আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই রিপ্লাই করতে পারিনি। আর চেকটা আমি ফেলে দিয়েছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে। এই ফুল গুলি রাখ তো।
এই বলে অভ্র রুহির হাতে ফুল গুলি দিয়ে কিছু না বলেই চলে গেল।
রুহি অভ্রকে পেছন থেকে ডাকলেও কোনো সাড়া দিলো না।
অভ্রর চোখের কোণায় পানি টা যেন রুহি না দেখে ফেলে সেজন্য আর পেছন ফিরে তাকাল না অভ্র। নাহলে বেশ লজ্জায় পড়তে হবে। অভ্র ভাবছে 'তুই সত্যি ই কি সব কিছুকে ফান হিসেবেই নিলি রুহি? একবারও তোর মনে হয় নি এই অভ্র তোকে সত্যি সত্যি ই I love You বলতে পারে? নাহ তুই যেহেতু পুরো বিষয় টা ফান হিসেবেই নিয়েছিস তাহলে তোর সামনে সেগুলি ফান হিসেবেই থাকুক।'
আজকে রুহিকে সীমা দেখতে আসে। ওরা দুইজন খুব ভালো বন্ধু।
-কিরে বিয়েটা করেই ফেলছিস তাহলে?
-হ্যাঁ
-অভ্র কে তোর মনের কথা গুলি জানাবি না?
-না
-কেন?
-ওর কাছে পুরো বিষয় টাই ফান। ও আমাকে প্রপোজ ও করেছিল।
-কী বলিস সত্যি!!
-হ্যাঁ, তবে সেটা ফান করে। সিরিয়াসলি না।
-তাহলে তুইও তো ওকে প্রপোজ করতে পারতি?
-তাহলে সেটাও ওর কাছে ফান মনে হবে।
-তোর যা ভালো মনে হয় সেটাই কর।
স্টেজে বৌ সেজে রুহি বসে আছে।
অভ্র দূর থেকে দাঁড়িয়ে রুহিকে দেখছে। এত মানুষের ভিড়ে রুহি অভ্রকে এখনো দেখেনি। অভ্র রুহির সাথে গিয়ে বসল।
রুহি অভ্রর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো।
অভ্র হেসে রুহির কানের কাছে মুখ টা নিয়ে বলল,
-তোকে খুব সুন্দর লাগছে রে।
-থ্যাংক্স।
অভ্র বলার মত আর কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না। হঠাৎ ওভ্র রুহির হাত টা খেয়াল করে বলে উঠল,
-কিরে তুই হাতের মধ্যে কি রেখেছিস দেখি?
রুহি কিছুটা চমকে উঠে বলল,
-ক..কই কিছু না তো।
-আমি কিন্তু দেখলাম। কিছু একটা নিশ্চয়ই আছে।
-আরে সালামি।
-নাহ। এটা টাকা না। তুই আমাকে দেখাবি কিনা বল। নাহলে কিন্তু এক্ষুণি আমি তোকে এখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবো।
রুহি আস্তে করে বলল,
-নিয়ে যা না, কে বারণ করেছে?
-কিছু বললি?
-কই? কিছু না। এই নে দেখ।
এই বলে রুহি হাতের মুষ্টি টা খুলে অভ্রর দিকে বাড়িয়ে দিল।
অভ্র দেখল রুহির হাতে অভ্রর দেয়া সেই চেক টা যেটা দিয়ে অভ্র রুহিকে কিনতে চেয়েছিল আর এমাউন্টের জায়গায় লেখা ছিল 'I Love You'
চেক
অরণী মেঘ
Comments
Post a Comment