প্রবাসী_জীবন

#অনুগল্প
গভীর রাত প্রায় দু'টো বাজতে চললো তখনি কানের কাছে রিতুর ফোনটি কেঁপে কেঁপে বেজে ওঠে! ফোনের রিংটোনের আওয়াজ কানে যেতেই রিতুর ঘুম ভেঙে যায়! ঘুমঘুম চোখে ফোনের স্ক্রিনে রাজীব লেখা দেখে এক নিমিষেই ঘুম খানি ওড়াল দেয় চোখ থেকে! বুকের মধ্যে অজানা ভ-য় গ্রাস করে ওঠে রিতুর! মানুষটা এতো রাত্রে কল করেছে কোনো কিছু হলো না তো?  সে তো এখন নাইট ডিউটি করছে তাহলে ডিউটির মধ্যে এতো রাত্রে ফোন কেনো? মাথায় এসব চিন্তা ভাবনা নিয়ে ফোন রিসিভ করতেই রাজীব বলে ওঠলো,,,, 

-"ঘুমিয়ে গেছিলিরে বউ? এতো রাইতের বেলা তোরে ফোন দিয়া ডিস্টাব করলাম ক্যান?"

রাজীবের গলার আওয়াজ শুনে রিতু বললো,

-"না গো ডিস্টাবের কথা কি কও? তুমি আমাগো লাইগা এই পরিবার আত্মীয় স্বজন সব ছাইড়া সেই সুদুর বিলেতে পাড়ি জমাইছো তুমি যদি ফোন দেও ডিস্টাব হইতে পারি বুঝি? এতো ক-ষ্ট করো আমাগো লাইগা আর আমি এই দেশে বইয়া তোমার লগে দুইখান কথা কইতে পারমু না বুঝি? এইডা কি কোনোদিনও হয় কওতো?" 

-"আরে বউ তুই তো জানোসই অহন আমার নাইট ডিউটি চলতাছে রাত্রেবেলা ডিউটি করতে গেলে ঘুমে চোখ দুইখান  বুইজা আহে কিন্তু তাও করতে হয়। কি করমু ক? মালিকে তো রাইতের বেলায়ই ডিউটি দিছে। সংসার আর তোগো লাইগা সব করতে হইবো আমারে। এই যে অহন খাওনের সময় আমি ভাত কয়ডা খাইছি একটু আগে। কিন্তু বউ হঠাৎ কইরাই না আজকে বুকের বেথাডা বড়ো বাড়ছে রে! আজকাই একটু বেশি বেথা করতাছে ক্যান জানি। বুকের বেথায় ভিতরডা ছি-ড়া যাইতাছে লাগে।"

রাজীবের কথা শুনে উত্তে-জি-তো কন্ঠে রিতু বলে,,,,

-"তোমার এই বুকের বেথা আইজকা কয়দিন ধইরাই কইতাছো। আইজকা যহন এতোই বেথা বেশি করতাছে তুমি যাইয়া ডাক্তার দেহাও। তোমার ওইসব ডিউটি ফিউটি করন লাগদো না আগে তুমি যাও ডাক্তার দেহাও গিয়া। পরে কিছু হইয়া গেলে কি হইবো কও তো? বিদেশ তো কেউই নাই যে তোমারে দেখবো আল্লাহর দোহাই লাগে তুমি যাইয়া ডাক্তার দেহাও।"

-"ডাক্তার দেহানের সময় নাই রে বউ। এই যে ডাক পইরা গেছে সময় শেষ অহন ডিউটির সময় শুরু হইছো রে বউ রাইখা দেই পরে ফোন দিমু নে।" 

রাজিবের কথা শুনে রিতুর আর টেন-শ-নে ঘুম আসলো না! রিতুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রাজীব ফোন কেটে দেয়। ওদিকে রিতুর মনের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করে যাচ্ছে সমানতালে। রাজীব খুবই গরীব পরিবারের ছেলে পড়ালেখাও করতে পারেনি যার দরুন কোনো চাকরি বাকরিও করতো পারিনি। সংসারে বো-ঝা টানতে বাধ্য হয়েই বিদেশে পাড়ি জমায় বউ, সন্তান, পরিবার সব রেখে। 

রাজীবের চিন্তায় সারারাত ঘুম আসেনি রিতুর। সকালবেলা ফজরের নামাজ পড়ে ফোন লাগায় রাজীবের ফোনে কয়েকবার রিং হবার পরে ফোন ধরতেই রিতু বলা শুরু করে,,,,,

-"ও হালিমার বাপ! কি হইছিলো তোমার রাইতের বেলা ফোন  ঢুকে নাই ক্যান? তোমারে যে কইছিলাম ডাক্তার দেহাইতে দেহাইছিলা? এখন বুকের বেথা কেমন তোমার? আমি নামাজ পইড়া আল্লাহর কাছে দোয়া করছি তুমি সু-স্থ হইয়া যাইবো গো এহন খালি ডাক্তার দেহাও। আমার কথা হুনো তুমি বরং দেশে আইয়া পড়ো আমার লাগবো না টেহা পয়সা তুমি থাকলেই হইবো গো।"

-"রাজীব মা-রা গেছে! আমি ওর বন্ধু বলছি। রাত্রেবেলা কাজ করার সময় ও মারা যায়। ওর হার্টে অনেক বড়ো অসুখ ছিলো ও সেরম গুরুত্ব দেয়নি আগে তাই এবার মারা গেছে!"

হাত থেকে ফোনটি ফেলে দিয়ে চিৎ-কার করে কাঁদছে রিতু!

-আল্লাহ গো! তুমি আমারে কি হুনাইলা গো! ও হালিমার বাপ তুমি ফিরা আহো। আমি আর কোনোদিনও তোমারে কমু না সংসারের লাইগা টেহা পয়সা আনো। আর কমু না আমারে কিছু কিনা দাও। আর কোনোকিছু চামু না তোমার কাছে। আর কমু না তোমারে বিদেশ যাইয়া টেহা পয়সা রুজি কইরা আনো। আল্লাহ গো আমার স্বামীরে তুমি ফিরাইও দেও। মরার আগে তোমার জীবিত মুখখানও দেখবার পারলাম না গো! তোমার হালিমা যে তোমার লাইগা পথ চাইয়া আছে গো ফিরা আহো তুমি!
গল্পটা ভালো লাগলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে সাথে থাকুন ধন্যবাদ সবাইকে। 
চিৎকার করে কাঁদছে রিতু! গগন কাঁ-পানো চি-ৎকা-র যাকে বলে। কিন্তু যে চলার সে তো চলেই গেছে অনেক আগে না ফেরার দেশে। হয়তো কিছু ছিন্নমূল মানুষদের প্রিয় জনের প্রবাসী জীবন এমনই হয়! ম-রে গেলে কেউ কেউ তো লা-শটুকুও দেখতে পারে না টাকা দিয়ে আনার ফলে। জীবনখানি হাতে বা-জি রেখে সুদুর প্রবাসে যায় দু'টো টাকা রোজগারের জন্য যাতে পরিবারে হাসি মুখে। হয়তো কেউ সেই হাসি ফুটাতে পারে হয়তো আবার কারোর হাসি চিরতরে মুছে যায়! হ্যাঁ এটাই প্রবাসী জীবন😢 আল্লাহ সুস্থ রাখুক সবাইকে।  বাস্তবতাই তুলে ধরেছি। গল্পটি কেমন লেগেছে জানাবেন সবাই। 

#সমাপ্ত
#প্রবাসী_জীবন 
#তাহিরা_মিসবাহা

Comments

Popular posts from this blog

একজন পতিতার প্রেমের গল্প

What are the benefits of exercising in the morning?

Know the right time to exercise