ভালোবাসার অবেলায় সন্ধ্যে নামে
![]() |
ভালোবাসার গল্প |
আইরিন ভাবিকে কেনো যে আমার এত বেশি ভালো লাগে এর কোনো যুক্তিগত কারণ খুজে পাইনি। আইরিন ভাবির চোখ দুটো আমার সবচাইতে বেশি আকর্ষণ করে। অন্যের বউয়ের প্রতি এমন আকর্ষণ ঘোর অন্যায়। কিন্তু আমার ওনাকেই বেশি ভালো লাগে। এই ভালোলাগার জন্য ওনার সামনে আমি লজ্জাতে তেমন যেতেই পারিনা। সিঁড়ি দিয়ে উঠছি। আইরিন ভাবির সামনেই পড়লাম। ওনার মুখের দিকে তাকাতেই মুখে একটা মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে। আমার বুকের ভিতরে হঠাৎ কাঁপুনি অনুভব হয়। নিজেকে এত বোঝানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু তবুও আমার দৃষ্টি ওনার মুখের দিকেই চলে যেতে চাইছে। আমাকে দেখে বললো..
"আরে আবির যে.. তা কেমন আছো? তোমাকে তো দেখিইনা। কোথায় থাকো তুমি?"
"জ্বি ভাবী ভালো। আপনি কেমন আছেন? জাহিদ ভাই ভালো আছে? আরুশা কেমন আছে?"
আরুশা নাম শুনতেই ভাবির মুখে থাকা হাসির রেখা নিমিষেই উবে গেলো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। আমি কিছু বললাম না। ভাবী জোরে একটা শ্বাস নিলেন। আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বললেন...
"বাড়িতে আজ এসো, দাওয়াত রইল। আসবে কিন্তু.. তোমার ভাইয়ের অনেক আত্বীয় এসেছে।"
কথাগুলো বলে উনি চলে গেলো। আমি ওনার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আইরিন ভাবির প্রতি আকর্ষণটা রাখা আমার উচিৎ না। এ জন্য নিজে থেকে ওনার সামনে আমি একদমই পড়তে চাইনা। ওনারা চার তলাতে। আমি থাকি পাঁচতলায়। তিনতলার সিঁড়িতেই দেখা হয়েছে ওনার সাথে। আইরিন ভাবির হাসিমাখা মুখটা আমার চোখের সামনে থেকে যাচ্ছেই না। আমি সেখান থেকে বাড়িতে আসলাম। দরজায় কলিংবেল চাপ দিতেই যাবো, বুঝতে পারি দরজা খোলা আছে। ভিতর থেকে উচ্চস্বরে হাসির শব্দ। আমি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম। আইস্পা আপা বসে আছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম। দশ বছর পর আমি আমার আপাকে হাসতে দেখলাম। এখনো হাসির শব্দ থামেনি। আমাতে হাসতে হাসতে আপা বললো..
"আবির, আসছিস.. দেখ মেয়েটা কত মজার। করলা রান্না করছে চিনি দিয়ে, সেই গল্প করছিল। শুনে হাসি লাগবে না। অনেক্ষণ ধরে মেয়েটার সাথে কথা বলছিলাম। ধুর কিসের মেয়ে মেয়ে করছি, ওর নাম তো নিরু। এই নিরু, এইটা হল আমার ছোট ভাই আবির।"
আইস্পা আপু এভাবে এত কথা তাও হেসে হেসে বললো। ভাবতেই আমার চোখে যেন পানি চলে এসেছে। মানুষের ভিতরে থাকে অনেক রঙ। ঠিক রঙধনুর মত যেন রঙগুলো গচ্ছিত অবস্থায় থাকে। আকাশের রঙধনু বৃষ্টির পরেই আবির্ভাব হয়। আর মানুষের রঙধনু আবির্ভাব হয় খুশির মুহুর্তে। দশ বছর যে মানুষটাকে আমি প্রয়োজন ব্যতীত কথা বলতে শুনিনি সে কিনা আজ উচ্চস্বরে হাসছে। আমি সোফাতে বসা মেয়েটার দিকে তাকালাম। আইরিন ভাবির চোখের মত সেম একজোড়া চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অনিমেষ দৃষ্টিতে অবলকন করি মেয়েটার মুখ। বেশ অপরূপা নিরুপমা। আমি মুচকি হেসে সালাম দিলাম। নিরু বলে "আইস্পা আপু, তাহলে যাচ্ছি। ঐদিকে ভাবি একা মানুষ। একটু হেল্প করতে হবে। আপনি কিন্তু একটু পরেই আসবেন।"
মেয়েটা কথাগুলো বলে চলে যায়। আমি আড়চোখে মেয়েটার চলে যাওয়া দেখলাম। আপু আমার সামনে এসে হাতে তুঁড়ি দিয়ে বললো "কি ব্যাপার ভাই.. কি দেখিস?" আমি মাথা ঘুরিয়ে আপুর দিকে তাকালাম। কিঞ্চিৎ হেসে বললাম.."তুই আজ কতবছর পর হাসলি বলতো।" মুহুর্তেই আপুর হাসি মুছে গেলো। আমার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে দ্র্রত হেঁটে আপু ভিতরে চলে যায়। আমি জোরে শ্বাস নিলাম। তিনদিন পর বাড়িতে এসেছি। অফিসের কাজের জন্য ফেনীতে গিয়োছিলাম। যদিও অফিসের কাজটা দুইদিনে শেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষের দিন আদ্রিতার বাড়ির সামনে যেয়ে সকাল থেকে বিকেল অবদি দাঁড়িয়ে ছিলাম।
.
প্রথম যে মেয়েটাকে আমি চুমু খাই সে হল আদ্রিতা। মেয়েটার সাথে আমার সখ্যতা প্রচন্ড গভীর ছিল। সে নেই। আদ্রিতাকে কতটুকু ভালোবাসতাম তা বোঝাতে পারিনি আমি কখনো তাকে। আমি বলেছিলাম চলে যাচ্ছি, ভালো থেকো। সে একবারো বলেনি, ফিরে এসো আমি অপেক্ষা করবো। প্রয়োজনে সে বলেছিল, আমি পিছুটান রাখিনা। হয়ত আমি তার গল্পে অপরাধী, কিন্তু আমার গল্পে সে সবসময় ভালোবাসার আবেগ। আদ্রিতাকে খুব ভালোবাসতাম। মানুষ প্রথমবার যাকে ভালোবাসে, তাকে ভালোবাসাটা বোঝাতে অক্ষম হয়। সঠিকভাবে ভালোবাসতে পারেনা। ভালোবাসা তো থমকে থাকার জিনিস নয়। ভালোবাসা বেঁয়ে চলে জলের মত।
আদ্রিতার বিয়ে হয়ে যায়। ঠিক সেদিন অনুভব করেছিলাম, আমার বুকের ভিতরটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে। কেমন যেন পানি পিপাসা পেয়েছিল প্রচন্ড। আমি অনুভব করি বুকের বাম পাশে ব্যাথা। প্রিয় মানুষ ছেঁড়ে চলে গেলে নিজেকে কিছুটা হলেও সামলানো যায়। কিন্তু প্রিয় মানুষটা একবার অন্য কারো হলে, আপনার বুকের ভিতরে যে শুন্যতা, ব্যাথা, খা খা অনুভব যখন হবে, বুঝবেন আপনি তাকে সত্যিই ভালোবেসেছিলেন। ভালোবাসি বলে বলে মুখে ফ্যানা তুলে দেওয়াটাকে ভালোবাসা বলেনা। তার জন্য প্রচন্ড শুন্যতা অনুভব করে নাওয়া খাওয়া ছেঁড়ে দিবেন, সেটাই ভালোবাসা। আদ্রিতা একবারো আমাকে বলেনি "মিস্টার.. আমি কিন্তু তোমাকে ছেঁড়ে যাচ্ছিনা, অপেক্ষা করছি চলে এসো। ঝগড়া, মান অভিমান হয়েছে তো কি হয়েছে? আমি থাকবো।" এমনটা হয়নি একদমই। আদ্রিতা সত্যিই অন্যের হয়ে যায়।
অফিসের কাজ শেষ করে, একটা দিন ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তিনবছর হল সে আমার থেকে হারিয়ে গেছে। কি কারণে যে এখানে প্রায় আসি আমি জানিনা। ফেনী নাম শুনলেই বুকটা কেমন যেন করে ওঠে।
.
"আবির.. রেডি হয়ে নে। আইরিন আপুর বাড়িতে যাবো। নিরু এসে দাওয়াত দিল না? ওহ তোকে তো বলিনি। নিরু হল জাহিদ ভাইয়ের চাচাতো বোন। বেড়াতে এসেছে আজ। তাই বাড়িতে অনুষ্ঠান। রেডি হ জলদি।"
আইস্পা আপুর কথা শুনে চেতনাতে ফিরলাম। আমি তখনো বিছানায় বসে আছি। আইস্পা আপু আমার সাথে ঠিকভাবে কথা বলতো না। আজ হঠাৎ নিরু মেয়েটার সাথে বসে তাকে হাসতেও দেখলাম। কে মেয়েটা? ম্যাজিক জানে নাকি? মেয়েটা বেশ চঞ্চল টাইপ। মুখের এক্সপ্রেশন দেখে সেটাই মনে হল। যাই রেডি হয়ে আসি।
কয়েক ঘন্টা পর আমি রেডি হয়ে বাইরে আসলাম। আইস্পা আপুকে বেশ হাসিখুশি আর সাজগোছে দেখে আমি আবারো অবাক হচ্ছি। আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো চারতলাতে। বিল্ডিং এর কয়েকজন আছে খাবার অনুষ্ঠানে। আমি ভিতরে যেতেই আপু আমার হাত ছেঁড়ে দিয়ে নিরুর কাছে চলে গেলো। দুজনে এক কোণায় দাঁড়িয়ে বেশ ভালোই গল্প করছে আর হাসছে। আইরিন ভাবি ছুটোছুটি করছে বেশ। ওনার চোখের সাথে চোখ পড়লো। মুচকি হেসে নিলেন তিনি। কেনো হাসবে উনি? ওনার হাসি দেখলেই আমি কেমন যেন অন্যরকম অনুভব করি। তখন উদ্ভট চিন্তা নিয়ে ভাবি 'ধুর কেনো যে আইরিন ভাবি জাহিদ ভাইকে বিয়ে করেছিল, কেনো যে আগে হইনি আমি?'
দুপুরের খাবার শেষ করলাম। আমার আপু নিরুর সাথে বেশ ভালোই মানিয়ে নিয়েছে। নাহ, মেয়েটার সাথে কথা বলা দরকার। সুযোগই হচ্ছে না। কিন্তু এখানে থাকাও যাবেনা। আইরিন ভাবির আশেপাশে থাকা আমার জন্য হারাম বলা যায়। আমি বের হয়ে আসার প্রস্তুতি নিলাম। জাহিদ ভাই ডাক দিল। আমি যেয়ে ওনার পাশে বসলাম। উনি সবাইকে ডাকলেন। এতক্ষণ আরশুকে দেখিনি। দরজায় হেলান দিয়ে আরশু দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকাতেই সে মুচকি হাসলো। আমিও হাসলাম। আরশু হল আইরিন ভাবির মেয়ে। ছয় বা সাত বছর বয়স হবে। আমাকে খুব ভালো করেই চেনে। জাহিদ ভাই আমার হাত ধরলেন। সবার উদ্দেশ্যে বললো..
"এর নাম আবির। ছেলেটা অনেক ভালো। চাচা, আপনি তো নিরুর জন্য ছেলে খুজছিলেন বিয়ে দেবেন বলে। আমি আপনাদের এ জন্যই আসতে বলেছি এখানে। আবিরকে দেখাবো, তার ব্যাপারে খোজ নিবেন। তবে আমি যতটুকু জানি, খোজ নিয়েছি। ছেলেটা যথেষ্ট ভালো। সবকিছু যদি ঠিক থাকে, তাহলে নিরুর সাথে আবিরের বিয়ে দিতে চাই। আইস্পা তুই কি বলিস?
"আমার তো নিরুকেই লাগবে।" (আইস্পা)
"আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তুই যেহেতু আছিস, সাপোর্ট করছিস। তাহলে তোরা যেটা বলবি সেটাই হবে।" (আংকেল)
"কিন্তু নিরু? নিরুর তো পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে। আপনারা অনুমতি দিলে ওরা দুজনে কথা বলে একটা সিদ্ধান্ত দিক। তারপর না হয় আপনারা নিজেদের মতামত দেবেন।"
আইরিন ভাবি কথাটা বললো। আমি ওনার দিকে আবার তাকালাম। ওনার চোখে মুখে সরলতার ছাপ। আমার ভিতরে ওনাকে নিয়ে যে অপ্রতিরোধ্য অনুভতি তা হঠাৎ করে কোথায় যেন গায়েব হয়ে গেছে। জাহিদ ভাই বললো "হ্যা এটা ঠিক বলেছো, যে ওরাও কথা বলে ঠিকঠাক করুক, আমাদের মতের সাথে মিল আছে কিনা যাচাই করুক দুজনে।"
.
ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি। ফিরফিরে বাতাস বইছে। বিকেল নেমে এসেছে প্রকৃতিতে। চারপাশের বড় বড় বিল্ডিং এর জন্য অলস সূর্যটাকেও দেখা যায়না। আমি দাঁড়িয়ে আছি ছাঁদের পাঁচিল ধরে। আমার থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে নিরু। বাতাসে ওর চুলগুলো উড়ে, এলোমেলো হয়ে মুখের উপর এসে পড়ছে। নিরু আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম..
"আপনাকে আমি কেনো বিয়ে করবো? প্রথম সাক্ষাতে ঠিকভাবে কখনো ভালোলাগাও যেখানে তৈরী হয় না, সেখানে মানুষ সরাসরি বিয়ের সিদ্ধান্ত শুনতে চায়। এটা হাস্যকর নয়? আপনি লোক মুখে আমার ব্যাপারে যতটুকু শুনবেন, সেটা ভেবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বোকামো হবে। আপনার ক্ষেত্রেও একি ব্যাপার। আপনি কেনো আমাকে বিয়ে করবেন? সেটার কারণ আপনি বলবেন। তবে আমি আগে বলি, আমি আপনাকে কেনো বিয়ে করবো..
আমার আপুর বয়স যখন আঠারো বছর.. তখন তিনি ধর্ষিতা হয়। ওরা তিনজন আমার আপুকে মাংসের মত খুবলে খেয়েছিল। ছোট বেলায় আমার মা আমার দেড় বছর বয়েসে মারা যায়। কারণটা কি ছিল জানেন? বাবা আমি হলেই মাকে রেখে চলে যায় অন্য কারো সাথে। মা সেদিন কষ্টে, অভিমানে, নিজেই নিজেকে মেরে ফেলে। আপু আমাকে খুব কষ্ট করে বড় করে। আপু আমার থেকে চার বছরের বড়। আপু খুব কষ্টে, আমাকে পড়াশোনা করিয়েছে। যদিও মায়ের ভাগের সম্পত্তির জেরে এতদূর অবদি এসেছি।
আপু রোজ পড়া শেষ করে বিকালে ফিরতো। কৃত্তার বাচ্চাগুলো আপুকে তুলে নিয়ে দুইদিন রেখেছিল। কিছুই করতে পারিনি। কি করবো আমি একা? কাকে বলবো আমি? রাতে আপুকে রেখে চলে যায়। এরপর থেকে আপু আমার সাথে প্রয়োজনের থেকেও কম কথা বলেছে। আমি কখনো সেদিনের পর আপৃকে হাসতে দেখিনি। আপু ছিল সাদা মেঘের মত। হারামিরা কালো মেঘের মত উড়ে এসে সাদা মেঘটাকে নষ্ট করে এক পশলা বিভাষিত বৃষ্টি ঝরিয়ে গিয়েছিল। দশ বছর পর আপুকে আমি এত কথা বলা, এত হাসতে দেখেছি আপনার সাথে। সেদিনের পর আপুকে নিয়ে এ শহরে চলে আসি। কেউ কিছু জানেনা। যদি আপনার সাথে ঘর বাধতে হয়, তাহলে এগুলো জানা দরকার। জানিনা আপনি কাউকে বলবেন কিনা। তবে অনুরোধ রইল।!
নিরু আমার দিকে চেয়ে থাকে কিছুসময়। মুখের উপর পড়া চুলগুলো সে এখন সরাচ্ছে না। বেশ ভালোই লাগছে নিরুকে এভাবে দেখতে। সুন্দরী মেয়ের মুখের উপর এলোমেলো হয়ে থাকা চুল, যেকোনো ছেলেকে প্রেমে ফেলতো বাধ্য করবে। আমি তাকিয়েই আছি সেদিকে। নিরু ওর মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে বললো..
"ঠিক বলেছেন। প্রথম দেখাতে ভালোলাগাটও ঠিকভাবে তৈরী হয়না সবসময়। সেখানে বিয়ে করার বিষয়টা অনেক বড় ব্যাপার। তবে কিছু মানুষ থাকে যাকে দেখলেই মায়া লাগতে শুরু করে। যার সাথে কথা বললেই মনের প্রফুল্লতা আসে, এমন মানুষকে কি না করা যায়? আমি কেনো আপনাকে বিয়ে করবো? যুক্তিগত কারণ ছিল না কিছু সময় আগে। এখন একটা কারণও আছে। তবে যাইহোক... আপনাকে একটা গল্প বলি শোনেন...
আমি একটা ছেলেকে খুব খুব ভালোবাসতাম। আড়াই বছরের রিলেশন ছিল। হঠাৎ ছেলেটা একদিন বলে 'আমাদের মনে হয়না রিলেশনটা রাখা উচিৎ। বাড়ি থেকে আমাদের রিলেশন মেনে নেবে না কখনো। আমি বাড়িতে তোমাকে নিয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছে কখনো তোমাকে ওনারা গ্রহন করবে না।' আচ্ছা আপনি বলুন তো, কথাগুলো খুব হাস্যকর না? আমি হাসি তার কথা শুনে। সে বলে 'নিরু, আমি তোমাকে আসলেই গ্রহন করতে পারবো না। আমাকে মাফ করে দিও। আমি কি করবো বলো?" আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। নীরাবতা ভেঙে বলেছিলাম 'তুমি কি আদৌ আমাকে ভালোবেসেছিলে? ভালোবাসা টা কি সস্থা নাকি? ইচ্ছে হল রিলেশনে আসলা, তারপর মেনে নিবেনা এক্সকিউজ দিয়ে চলে যেতে চাইছো। কি মনে হয় আমাকে? এগুলো বললে আর আমি তা মেনে নিয়ে তোমাকে সাধুবাদ জানাবো?"
চেষ্টা করেছিলাম সব কিছু ঠিকঠাক করে নিতে। কিন্তু কি আর করার। উনি এটাই কারণ দেখিয়ে চলে যায়। এরপর ভালোবাসাটাকেই হাস্যকর মনে হয়েছে। কেউ প্রপোজ করলে বলতাম 'কতদিনের জন্য সম্পর্ক চান?' কেউ কোনো কথা বলতো না। আমি বুঝলাম না, ভালোবাসা সহজ হয়ে গেছে এত? ইচ্ছে হলে থাকলাম, না হলে চলে গেলাম? যাইহোক, এখানে এসে সবকিছু আবিরময় হয়ে গেছে। আপনার আপুর সাথে কালকেই দেখা হয়েছিল। উনি বেশ ভালো একজন মানুষ। ওনার কথা শুনে বুঝেছিলাম উনি হাসেনা। আমি আবার নিজে কষ্টে থেকে মানুষতে হাসাতে বেশ উস্তাদ। শুরু হলো তাকে হাসানোর চ্যালেন্জ। জিতেও গিয়েছি নিজে আমি। হাসিয়েছি, খুশি হতে দেখেছি ওনাকে। আপনার কথা শুনেছি, ওনার মুখে নয় শুধু, ভাবি, ভাইয়ার মুখ থেকেও। ছেলেটা খারাপ না আপনি। লজিক্যালি যদি ভাবা হয়, তাহলে হ্যা বলা যেতেই পারে। কিন্তু ভালোবাসা কবেে কখন তৈরী হবে আমি তা জানিনা। এবার আপনি হ্যা বলতে পারেন। আমি আপনার পরেই না হয় জানাবো উত্তর।"
.
আইরিন ভাবির সাথে সন্ধ্যায় ছাঁদে দেখা হল। নিরুর কথা বলার পর আজ চারদিন হয়ে গেছে। সেদিন সবার সামনে বলেছিলাম সিদ্ধান্তটা পরে জানাবো। পরে জানাতে জানাতে চারদিন হয়ে গেছে। আইরিন ভাবি পাশে এসে দাঁড়ালো। আমাকে বললো..
"আমার ননদকে পছন্দ হয়নি?"
"পছন্দ না হওয়ার অপশন কই?"
"তাহলে হ্যা বলছো না কেনো?"
"এমনি। আরশু আসেনি?"
"নাহ.."
"ওকে এখানে রাখেন না কেনো?"
ভাবি চুপচাপ আমার দিকে তাকায়। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বললো "আবির, জানোই তো আমি ভিডোর্সি ছিলাম। আরশু আগের ঘরের মেয়ে। জাহিদ আরশুকে পছন্দ করেনা। তাকে থাকতে দেয়না এখানে। মেয়েটা খুব কান্না করে আমার জন্য। কিন্তু কি করবো? আমারো যে যেতে ইচ্ছে করে। যাইহোক, বাদ দাও। নিরু কিন্তু ভালো মেয়ে। ভালোবাসা শুরু করলে আর নিতে পারবা না কিন্তু। উতরে উঠবে সব। হ্যা বলে দাও বিয়ে খাবো তো।"
উনি কথাগুলো বলে যায়। আমি দাঁড়িয়ে থাকি। হাস্যকর মনে হল বিষয়গুলো। সমাজে ধর্ষিতা মেয়ের বিয়ে হয়না। ডিভোর্সি মেয়ের বিয়ে হয়। ডিভোর্সি হলে যদি আগের ঘরেরর সন্তান থাকে, তাহলে ছেলেরা সেটাকে গ্রহণ করেনা। কি সব নিয়ম।
আরো দুইদিন পর জাহিদ ভাইয়ের সাথে দেখা হল আমার। নিরুরা চলে গিয়েছে তার পরেরদিন। জাহিদ ভাই প্রশ্ন করলো..
"কি ব্যাপার, আমার বোনকে নিয়ে কি ভাবলে?"
"কিছুই না। তবে আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।"
"হ্যা বলো।"
"ভাই.. আরশু আপনার সৎ মেয়ে। সমাজে একটা কথা আছে সৎ জিনিস একটু বেশিই ঝামেলা প্রবণ হয়। আপনি কি তাকে ভালোবাসতে পারবেন না। বাচ্চা মেয়েকে আগলে নিন, দেখবেন সে আপনার পরিচয়ে বড় হচ্ছে, আপনাকে নিয়ে গর্ব করে বলতে পারছে তারও বাবা আছে। ধরুন, নিরুর সাথে আমার বিয়ে হল, আমি পাঁচ বছর পর ছেঁড়ে দিলাম কোনো কারণে। বাচ্চাও হলো, আপনারা নিরুকে অন্য কোথাও বিয়ে দিলেন। আপনারা কিভাবে নেবেন তখন এটা? আপনাদেরও কি খারাপ লাগবে না?"
জাহিদ ভাই কিছু বললেন না। তিনি হেঁটে যেতে থাকে। আমি পিছন থেকে বললাম "ভাই, নিরুকেই বিয়ে করবো, জানিয়ে দিন সবাইকে। ভয় নেই, তাকে ছেঁড়ে যাবো না। আরশুর মত হবেনা কিছুই।" উনি থামলেন। ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেলেন আবার।
.
এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। আপু নিরু নিরু করে মাথা খারাপ করে দিয়েছে। আমি অফিস শেষ করে সিঁড়ি দিয়ে আসছি। চারতলাতে আসতেই শুনতে পেলাম "আবি আংকেল.. আজকে কিন্তু চকলেট খাওয়াতে হবে।" আমি ঘুরে তাকালাম আরশু দাঁড়িয়ে আছে। অবাক হলাম, আরশু জাহিদ ভাইয়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জাহিদ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনি হাসলো। আমি বুঝে গিয়েছি কেনো হেসেছেন তিনি। আরশুকে গ্রহন করেছেন। আমি কিছু বলতে যাবো, তার আগেই আরশু বলে..
"একটা চকলেট আনলে হবেনা। দুইটা আনতে হবে। নিরু আনটিও চকলেট খাই।"
কথাটা শেষ করতেই জাহিদ ভাই সরে দাঁড়ালো। পিছনে নিরু দাঁড়িয়ে। নিরুর পাশে আমার আপু দাঁড়ানো। জাহিদ ভাইয়ের পাশে আইরিন ভাবি এসে দাঁড়িয়েছে। আরশু নিরুর হাত ধরে আমার কাছে এনে দাঁড় করালো। আমি একটু হাসলাম। নিরু আস্তে গলায় বললো..
"বিয়েটা তাহলে হচ্ছেই। আমার তো সমস্যা নেই।"
"আমারো সমস্যা নেই।"
"ঐ সবাই আজকে ডিনার পার্টি হবে। ব্যবস্থা করছি। পরশুই বিয়ে আবিরের সাথে নিরুর। ইনজয় ইট।"
সন্ধ্যা বেলা ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি। অবেলায় সন্ধ্যে নাকি? পাশে নিরু দাঁড়িয়ে। আমার হাত ধরে আছে। আমরা দুজন সন্ধ্যা বিলাশ করতে থাকি।
---------(সমাপ্ত)---------
.
ভালোবাসার অবেলায় সন্ধ্যে নামে
Abir Hasan Niloy
Comments
Post a Comment