ভার্জিন
।..আপনি কি ভার্জিন?
বাসর রাতে সদ্য বিবাহিত স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে ইতস্তত হয়ে যায় রিয়া।
তার মুখে কোনোই কথা নেই। ঘৃনার্থ চাহুনিতে শুধু একবার তাকালো তার স্বামীর দিকে। মাথাটা সাথে সাথে নামিয়ে নিল। বাসর রাতে তার স্বামীর প্রথম প্রশ্নটা যে এমন হবে তা সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।
রিয়াকে চুপ থাকতে দেখে রিয়াদ(রিয়ার স্বামী)আবার বলে উঠলো:
।.. না মানে আজকালকের মেয়েরা তো বিয়ের আগেই বয়ফ্রেন্ডের সাথে রুমডেটে গিয়ে রুম কাপায়।একের পর এক বয়ফ্রেন্ড আসছে যাচ্ছে।কত জনের সাথে যে রুমে উঠলো তার হিসাবই হয়ত নেই তাদের কাছে। তাই কথাটা জিজ্ঞেস করলাম।তুমি সতী তো?
স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে চোখের কোণে পানি চলে আসলো তার।এমন একটা নিচ মানসিকতার মানুষের সাথে তার বিয়ে হবে সে কখনোই ভাবতে পারেনি।এই হীন মানুষটার সাথেই তার সারাজীবন থাকতে হবে কথাটা ভাবতেই তার দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
রিয়াকে চুপ থাকতে দেখে রিয়াদ আবার বলে উঠলো..
।.. কিছু বলছো না যে?নাকি তুমিও বিয়ের আগেই বয়ফ্রেন্ডের কাছে নিজের সতীত্ব বিলিয়ে দিয়েছ?
কথাটা শোনা মাত্রই রিয়ার মাথায় রক্ত উঠে গেল। কিন্তু নিজেকে সংযত করে বললো..
।.. আমার জীবনে আপনিই প্রথম পুরুষ।এর আগে দ্বিতীয় কোনো পুরুষ আসেনি।
কথাটা শুনে তার স্বামীর মুখে স্পষ্ট হাসির ছাপ দেখতে পেলো রিয়া। কিন্তু তার মনে শুধুই বিষন্নতা।বাসর রাত নিয়ে হাজারও কল্পনা ছিল রিয়ার।কিন্তু তার স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে সব স্বপ্নই তার চুরমার হয়ে গেল।আজ তার মনে হচ্চে তার মনটা যেনো সমুদ্রের তীরে গড়া বালি দিয়ে কোনো ভাসকার্য,যা সামান্য বাতাসেই ভেঙে পড়ে। কিন্তু এমনটাতো ছিল না?জীবনের কত কঠিন পরিস্থিতি সে দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেছে।কখনো সে হার মানেনি। ভেঙে পড়েনি।তবে আজ?রিয়ার মনে হাজারও ব্যাথা, হাজারও কথা বাসা বাঁধতেছে।
হঠাৎ লক্ষ করলো রিয়াদ বিছানার ওপরে সাদা তোয়ালে পারতেছে।কিছু বুঝতে না পেরে রিয়া জিজ্ঞেস করল..
।..চাদর তো আছেই।আবার তোয়ালে পারার কি দরকার?
রিয়ার কথা শুনে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রিয়াদ বলল:
।..দরকার আছে বৈকি?কাল সকালে বুঝতে পারবেন।
রিয়ার সমস্ত মন জুড়ে শুধুই বিষণতা ছিল।তাই ব্যাপারটা নিয়ে না ভেবে শুয়ে পড়লো।
রিয়া সাধারণ ঘরের সাদামাটা একটা মেয়ে। পড়াশোনা শেষের পথেই। অন্যদিকে বড়লোক বাপের ছেলে রিয়াদ। পেশায় বেকার হলেও বাপের অঢেল সয়সম্পত্তি থাকায় রিয়ার বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে সে এককথায় রাজি হয়ে যায়। বিরাট ধুম ধামের সাথে বিয়েটা শেষ হয়। তারপর পরের ঘটনাতো আপনারা জানেনই।
(আপনি যদি গল্প প্রেমী হন এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প পড়তে ভালোবাসেন,
সকাল সাতটা বেজে গেছে। এখনও রিয়ার ঘুম ভাঙেনি। হঠাৎ কেউ সজোরে লাত্তি মারায় খাট থেকে পরে যায় রিয়া।ঘুমের ভিতর চিৎকার দিয়ে ঊঠে। রিয়াদের দিকে চোখ পড়তেই দেখে রাগী চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে সে।দেখে মনে হচ্ছে দুচোখ দিয়ে যেন অগ্নিবর্ষণ হচ্ছে।
রিয়া একটু মাথা উঠিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিয়াদ তার চুলের মুঠি ধরে হিচড়িয়ে খাটের ওপর তলে। ব্যাথায় কুকড়ে ঊঠে রিয়া।
রিয়ার মাথাটা বিছানার সাথে চেপে ধরে বলে..
।..তুই নাকি কোনো ছেলের কাছেই যাসনি? আমিই নাকি তোর জীবনে প্রথম পুরুষ? আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষ নাকি আসেনি?তাহলে বিছানায় রক্তের দাগ
কোথায়?
।।...বাসর রাতে সহবাসের পর রক্তক্ষরণ হলো না কেনো?
কথাটা বলেই রিয়াকে খাট থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় মেঝেতে। রিয়া নিস্তব্ধ।তার মুখে কোনোই কথা নেই। এতকিছু হয়ে গেল তার সাথে তবু সে টু শব্দও করেনি।
এদিকে রিয়াদ এসে রিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে রুম থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে।
বাড়ির সবাই এই দৃশ্য দেখে নানান রকম প্রশ্ন করলেও কারু প্রশ্নেরও জবাব সে দেয়নি।রিয়াকে নিয়ে সোজা চলে আসে তার শশুড় বাড়ি।
এত সকালে মেয়ে আর নতুন জামাইকে দেখে রিয়ার বাবা মা অবাক হয়ে যায়।
এদিকে রিয়াদ রিয়ার হাতটা ছেড়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মাটিতে।বলতে শুরু করে..
।।..আপনাদের মেয়েকে দিয়ে গেলাম।আপনাদের কাছেই রাখুন।যে মেয়ে কিনা বিয়ের আগে তার সতীত্ব বিলিয়ে দেয়,তার জায়গা এই রিয়াদ চৌধুরীর বাড়িতে নেই।
রিয়ার বাবা কথা গুলো শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়ল। কাকুতি মিনতি করে বলতে লাগলো..
।।.. দেখো বাবা কোথাও হয়তো ভুল হচ্ছে।আমাদের মেয়েকে আমারা এই শিক্ষা দিয়ে মানুষ করিনি।।
।।.. ঠিকই বলছি।কি করে সাহস হয় এই নষ্টা মেয়ের আমার সাথে বিয়ে দেয়ার?কাল ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিব যেন সই করে পাঠিয়ে দেয়।
(আপনি যদি গল্প প্রেমী হন এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প পড়তে ভালোবাসেন,
কথাগুলো বলে রিয়াদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেল।এদিকে এখনো রিয়ার মুখে কোনো কথা নেই।চুপ করে বসে আছে।রিয়ার বাবা মা তাকে এমন ভাবে বসে থাকতে দেখে তার কাছে গেল। রিয়ার মা কাদতে কাদতে বলতে লাগলো..
।।..যে মেয়ে আমার অবৈধ সম্পর্ক তো দূরের কথা কখনও কোনো অপরিচিত পুরুষের সাথে কথা পর্যন্ত বলেনি তার নামে এমন অপবাদ। যার হাজারও কল্পনা, স্বপ্ন ছিল যে স্বামী নিয়ে আজ সেই স্বামীই তারে এমন মিথ্যা অপবাদ দিল?
রিয়া মায়ের হাতটা ধরে বলতে লাগলো..
।।..তুমি কিচ্ছু ভেবো না মা সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।আর বাবা?তুমি যত দ্রুত সম্ভব এই শহর ছাড়ার ব্যাবস্থা কর।আমার দূরে কোথাও চলে যাব।
কয়েক দিনের মধ্যে রিয়ারা অন্য শহরে চলে যায়।পেরিয়ে যায় দশটা বছর।রিয়ার পড়াশোনা শেষ হয়েছে।এখন সে এই শহরের একজন নামকরা গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। চেম্বারে বসেছিল। হঠাৎ তিনটা লোক রুমে প্রবেশ করলো।
রিয়া সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল।কারণ তাদের তিন জনের মধ্যে একজন ছিল রিয়াদ।
রিয়াদও রিয়াকে ডাক্তারের চিয়ারে দেখে বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলঃ
।।..তুমি এখানে?
।।.. হ্যাঁ।তবে পার্সোনাল ব্যাপারগুলা ছাড়া অন্য কোনো কাজে আসলে বসতে পারেন।অন্যথায় চলে যান।
রিয়াদ চেয়ারে বসে ইশারা দেখিয়ে বললো..
।।..এটা আমার বোন আর এটা আমার দুলাভাই। কালকেই তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু..
।।.. কিন্তু কি বলুন?
।।..বাসর রাতে সহবাসের পর রক্তপাত না হওয়ায় এখন দুলাভাই আমার বোনের সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বাসায় এখনো কেউ এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।এখন আমার বোনের মান সম্মান আপনার হাতে।আপনিই বলুন সত্যটা কি?
রিয়া রিয়াদের মুখের দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে তার দুলাভাই কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো:
।।..আমাদের দেশের মানুষের একটা ভুল ধারণা আছে।শুধু আমাদের দেশের বললে ভুল হবে আশেপাশের আরো অনেক দেশের মানুষের মাঝে এই কুসংস্কার প্রচলিত আছে যে মেয়েদের সতী পর্দা(hymen) থেকে আর যা প্রথম সহবাসের সময় ছিঁড়ে বা ফেটে গিয়ে রক্ত পাত হয়।যা সম্পূর্ণই একটা ভুল ধারণা।
অনেকের মনে এই বদ্ধমূল ধারণা আছে যে নারী যদি কুমারী হয় তবে বাসর রাতে সহবাসে সময় চাদরে রক্তের দাগ অবশ্যই লাগবেই লাগবে।
এ বিষয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে এটাই বলবে যে সহবাসের সময় সতীচ্ছদ পর্দা ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত হয়।
কিন্তু আপনি কি আসলেই জানেন সতীচ্ছদ পর্দা আসলে কি?
বিখ্যাত গাইনোকলিজ থাইলেস এর মতে,
সতীচ্ছদ ছিঁড়ে না কারণ এটা কোন পর্দা নয় যেটা যোনিকে ঢেকে রাখে।
এটা যদি সম্পূর্ণ বদ্ধই হতো তবে কিভাবে মেয়েদের মাসিক হত?তবে হ্যাঁ কিছু কিছু মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা বদ্ধ থাকে, সেক্ষেত্রে তাদের সামান্য একটা অপারেশন করিয়ে নিতে হয়।
প্রথম বার সহবাসের ক্ষেত্রে সতীচ্ছদ পর্দা ছিঁড়ে যাওয়া অসম্ভব,ভুলে যাও যা শুনেছো।
হাইমেনের কারণে কেউ তোমার কুমারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না।
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে অধিকাংশ নারীর প্রথম সহবাসের পর রক্তপাত কোনো হয়?
বাস্তবে রক্তপাত তখনই ঘটে যখন যৌনমিলন সঠিকভাবে না হয়। অর্থাৎ আপনি আপনার স্ত্রীকে আঘাতের ফলে এমনটা হয়।
আমাদের পার্শ্বব্তী দেশ ভারতে রীতিমত বিয়ের আগে গোপনে হাইমেন রিকগনেশন সার্জারী শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ মুসলিম রক্ষণশীল পরিবারের নারীরা এমনটা করিয়ে থাকেন।বাস্তবে যেখানে এটা ছিঁড়েই না তাহলে পর্দা শিলায় বা করে কিভাবে?
দেশের হাজার হাজার মেয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা এই সার্জারীর পিছনে খরচ করতেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রীতিমত এটা মানবাধিকার লংঘন বলে দাবিও উঠেছে।
একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন।এটা কখনো নারীর সতীত্ব প্রমাণের মাধ্যম হতে পারে না,এটা নির্যাতনের মাধ্যম, জুলুমের মাধ্যম।
কথাগুলো শুনে রিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে সবাই খুশি মনে বেরিয়ে গেল। হঠাৎ রিয়াদ ফিরে এসে বলে..
।।.. আমাকে মাফ করে দিও।আমি সত্যটা না জেনেই তোমার সাথে অন্যায় করেছিলাম।আজ চাইলেও আর তোমায় ফিরিয়ে নিতে পারবো না।কারণ তোমাকে ডিভোর্স দেয়ার কিছুদিন পরই আরেকটা বিয়ে করেছি।এখন আমার দুইটা সন্তানও আছে।
রিয়া রিয়াদের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলে..
।।..তোমার সাথে যদি সংসারটা টিকিয়েই রাখতেই চাইতাম তাহলে সেদিনই এ কথা গুলো বলতাম।সত্য বলতে আমি কখনোই চাইনি এমন নিচ মানসিকতার মানুষের সাথে সংসার করতে।
কথাটা শুনে রিয়াদ মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়।আর রিয়া অবিরাম হাসতেই থাকে।
আরও কয়েক দিন কেটে যায়।একদিন সকালে রিয়া কফি খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ছিল। হঠাৎ একটা পাতায় চোখ আটকে যায়। কাগজে রিয়াদের ছবি।হেড লাইনে বড় বড় অক্ষরে লেখা..
“দুই সন্তানের বাবা হওয়া সত্বেও পরকীয়া করতে গিয়ে ধরা পড়লো এই শহরের অন্যতম বিজনেসম্যান রিয়াদ চৌধুরী”
রিয়া কাগজটা ছুঁড়ে ফেলে মনে মনে ভাবতে লাগলো..
আসলেই যে অন্যর সাথে যেমনটা করে তার সাথেও ঠিক তেমনটিই হয়, যে বাস্তবে যেমন সে অন্যকে তে
বর্তমান আধুনিক যুগে এসেও এই একটা কুসংসার এর কারণে আজও হাজার হাজার নারীর সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।গল্পটার মাধ্যমে চেষ্টা করেছি সত্যটা সবার সামনে তুলে ধরার।কতটা পেরেছি জানি না।তবে সবশেষে একটা কথায় বলবো যে,আসুন মেয়েদের সতীত্ব প্রমাণ নিয়ে এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসি এবং অন্যকেও সাহায্য করি। কারু কাছে গল্পটা খারাপ লাগে থাকলে দুঃখিত।
ধন্যবাদ..❣️
Comments
Post a Comment