পিচ্চি বউয়ের অভিমানী ভালোবাসা (ইরোটি২৪)
"মেয়েটার বয়স সর্বোচ্চ আঠারো হবে।এই
দুধের বাচ্চাকে আমি কিছুতেই বিয়ে করতে
পারবোনা।"
দুধের বাচ্চা?আমি?বলে কি?দুধের বাচ্চা
কথাটা শুনেই আমি চোখ খুলে ফেললাম।কিছু
একটা বলতে যাবো তখনই আন্টি থুক্ক হবু
শ্বাশুড়ী মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
"কি ব্যাপার চোখ খুলেছিস কেন?কথা
এখনো শেষ হয়নিতো।চোখ বন্ধ কর বন্ধ কর।"
বলে আমার কাছে এসে উনি হাত দিয়ে
আমার চোখ বুজে দিলেন।
.
আমি আবার চোখ বুজলাম।হবু শ্বাশুড়ী মা
বললেন "পা ঝুলিয়ে বসতে খারাপ লাগছে?
তাহলে সোফায় পা তুলে আরাম করে বোস।
তাহলে তুই ভালো করে আমার কথা শুনতে
পারবি আর দৃশ্য গুলো সহজেই কল্পনা করতে
পারবি।"হবু শ্বাশুড়ী মার কথা অনুযায়ী
সোফায় পা তুলে আরাম করে বসলাম।কোন
হবু বউ তার হবু শ্বশুরবাড়িতে এসে হবু
শ্বাশুড়ীর সামনে এভাবে পা তুলে সোফায়
বসতে আমি কোথাও দেখাতো দূরে থাক এমন
কথা শুনিওনি কখনো। উনি আমাকে এভাবে
বসতে বলার মানে হচ্ছে নাটক শেষ হতে
এখনো অনেক বাকি।
.
কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ হবু শ্বাশুড়ী মার ফোন
পেয়ে তাড়াহুড়ো করে উনার বাসায়
আসলাম।ফোনে উনার কথা শুনে মনে
হচ্ছিলো অনেক জরুরি কথা বলার জন্যই উনি
আমাকে ডেকেছেন।
দুবার কলিং বেল বাজানোর পর দরজা
খুললো।সামনে তাকিয়ে দেখি জনাব
সাব্বির সাহেব দাড়িয়ে আছেন। আমার
দিকে বিরক্তিভাব নিয়ে ভ্রু কুঁচকে
তাকালেন।আমি যে উনাকে দেখে লজ্জা
পাচ্ছি তা মনে হয় উনার চোখে লাগছেনা।
লজ্জা পাবোনা কেন?লজ্জা পাওয়াটাইতো
স্বাভাবিক।বিয়ের আগে হবু স্বামীকে
দেখে লজ্জা পাওয়াটা বাঙ্গালী মেয়েদের
অন্যতম বৈশিষ্ট্য।অনেক দিন পর উনাকে
দেখলাম।আগের থেকে আরও বেশী সুদর্শন
হয়েছে।চেহারায় আর শরীরের গঠনে এখনো
সেই যুবক যুবক ভাবটা রয়ে গেছে।দেখে মনে
হচ্ছে ভার্সিটি পড়ুয়া তেইশ বছরের কোন
তরুণ।উনি আমার দিকে না তাকিয়ে এদিক
ওদিক চোখ ঘুরাচ্ছেন।বোঝাই যাচ্ছে উনি
বেশ বিরক্ত।উনি নিশ্চয়ই আমাকে কোন
উপদ্রব ভাবছেন।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে
লাজুক হেসে বললাম "আন্টি বাসায় নেই?"
উনি হ্যা না কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই
পেছন থেকে আন্টি এসে বললেন
"এই আন্টি কিরে?তোকে না কতোবার
বললাম আমাকে আম্মু বলে ডাকতে?আয়
ভেতরে আয়" বলে আন্টি আমার হাত ধরে
ঘরে নিয়ে গেলেন। আমি উনাকে আন্টি বলে
ডাকি সেটা উনি একেবারেই পছন্দ
করেননা।উনি চান আমি যেন এখন থেকেই
উনাকে আম্মু বলে ডাকি।কিন্তু নিজের আম্মু
ছাড়া অন্য কাউকে আম্মু ডাকতে আমার
কেমন জানি লাগে।আর তাছাড়া শ্বাশুড়ী
মা কে কি আর আম্মু ডাকা যায়?কেমন যেন
জড়তা কাজ করে।আমি চিন্তা করলাম
বিয়ের পরে উনাকে আমি মা বলেই ডাকবো।
কিন্তু উনি চান বিয়ের আগে থেকেই ডেকে
ডেকে প্র্যাকটিস করে আমার সব জড়তা
কাটিয়ে তুলতে।
.
আমি সোফায় বসে জনাব সাব্বির সাহেবের
কথা ভাবছিলাম।একটা অদ্ভুত দৃশ্য আমার
চোখে ভাসছিলো।দরজার সামনে যখন
দাড়িয়ে ছিলাম তখন উনার পায়ের দিকে
আমার চোখ পড়লো।নিচের দিকে দুভাজ করা
জিন্স প্যান্ট এর নিচে উনার খালি পা দুটো
বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিলো।ছেলেদের পা
দেখতে সুন্দর হয় নাকি আবার?কিন্তু কেন
জানি বেশ ভালো লেগেছিলো।আমার
সামনে দিয়ে নিজের রুমে হেঁটে যাওয়ার
সময়ও উনার পায়ের দিকে তাকালাম।সাদা
টাইলস করা মেঝেতে উনি খালি পায়ে
হাটছেন এই দৃশ্য যে এতো ভালো লাগবে
ভাবতেও পারিনি।
.
"মা আমি বের হচ্ছি" বলে কিছু শোনার
অপেক্ষা না করেই হনহন করে বাসা থেকে
বেরিয়ে গেলেন জনাব সাব্বির সাহেব।
যাওয়ার সময় আমার দিকে রাগী আর
বিরক্তি চোখে তাকালেন যার অর্থ হলো
"শোনো মেয়ে,তোমাকে আমার পছন্দ না।
আর আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা।"।
.
আন্টি এক গ্লাস ঠান্ডা কোক এনে আমার
হাতে দিয়ে বললেন
-নে,এবার চোখ বন্ধ কর আর আমি তোকে
পুরো ঘটনা শোনাই।
-চোখ বন্ধ করবো কেন?
-যাতে তুই পুরো ঘটনা তোর চোখের সামনে
দেখতে পাস।
.
আমি চোখ বন্ধ করলাম আর একটু একটু করে
কোকের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছিলাম।চোখের
সামনে স্পস্ট ভাবেই সব ভেসে উঠছিলো
মনে হচ্ছে যেন আমার সামনে দাড়িয়েই
তারা মা ছেলে কথা বলছে।
-মা,মীমতো একটা বাচ্চা মেয়ে।তুমি
বুঝতেছোনা আমার সাথে ওর কিছুতেই ম্যাচ
হবেনা।
-ম্যাচ হবেনা মানে?আমি পরিষ্কার দেখতে
পাচ্ছি তোদের দুজনকে কি সুন্দর
মানিয়েছে।
-ব্যাপার টা সেই মানানো না।আমি চিন্তা
করছি ওর সাথে আমি মানিয়ে নিতে
পারবো কিনা বা ও আমার সাথে মানিয়ে
নিতে পারবে কিনা।ওর বয়স মাত্র পনেরো
আর আমার বয়স সাতাশ।বারো বছরের
ডিফারেন্স।
-পনেরো মানে?ও ভার্সিটিতে সেকেন্ড
ইয়ারে পড়ছে।ওর বয়স পনেরো কিভাবে হয়?
ওর বয়স তেইশ।
-তেইশ?মানে কি?যেই মেয়েটা মাত্র
অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে তার বয়স
কিভাবে তেইশ হয়?ও কি কোন ক্লাসে তিন
চার বার করে ফেইল করেছে?আর ওকে
দেখলেই তো বোঝা যায় ওর বয়স পনেরোর
বেশী হবেনা।আন্ডার স্ট্যান্ডিং ভালো
হবেনা আমাদের।ওর বয়স চব্বিশ পঁচিশ হলেও
কিছুটা মানা যাইতো কিন্তু
-তোর বাবা আর আমার বয়সের পার্থক্য কত
জানিস?পনেরো বছর।আমাদের মধ্যে কি
আন্ডার স্ট্যান্ডিং ভালো হয়নাই?
-তোমাদের যুগ আলাদা আর আমাদের যুগ
আলাদা।আমার ফ্রেন্ডস,কলিগরা দেখে কি
বলবে?বলবে একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে
করেছি আমি।
-তো তুই কি চাচ্ছিস?পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের
একটা বুড়িকে বিয়ে করতে?আর মীমকে
দেখলে বাচ্চা বাচ্চা মনে হয় কিন্তু ওর বয়স
হইছে।আর ছবিতে একটু বেশীই বাচ্চা
লাগতেছে।সামনে থেকে দেখলে বড়
দেখাবে।আর এইটা তো আরোও ভালো কথা।
এখনকার মেয়েরা বয়স লুকানোর
জন্য,চেহারা বাচ্চা বাচ্চা ভাব আনার জন্য
কত কিছু ব্যবহার করে আর ওর চেহারা
ন্যাচারালী বাচ্চাদের মতোই।তোর যদি
বিশ্বাস না হয় তাহলে আমি তোকে ওর জন্ম
নিবন্ধন কার্ড এনে দেখাতে পারি।
-কিচ্ছু দেখানো লাগবেনা।আমি ওকে বিয়ে
করবোনা
-আর কদিন আগেইতো রাতুল একটা এইচএসসি
পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করেছে।তাদের মধ্যে
কি আন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছে না?রাতুল তো
তোর চেয়ে বয়সে দু বছরের বড় হবে।
-হ্যাঁ আমার আর কাজ নেইতো।আমি তোমার
বোনের ছেলের মতো এতো বলদ না যে
বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করবো
-তুই না বলেছিলি তুই আমার পছন্দের
মেয়েকে বিয়ে করবি?এখন তাহলে না না
করছিস কেন?
-কিন্তু তাই বলে মীম কে কেন?অন্য কোন
মেয়েকে কি তোমার পছন্দ হয়না?
-না হয়না।আমার চোখের সামনে আমি শুধু
মীমকেই দেখি।আর তোর বউ হিসেবে আমি
মীমকেই দেখতে চাই।
.
আমি চোখ খুললাম।এতক্ষণ আমার মনে
হচ্ছিলো আমি ভারতীয় কোন সিরিয়াল
দেখছিলাম যেখানে মা ছেলে যুদ্ধ চলছে।
আন্টি একবার নিজের চরিত্রে আরেকবার
জনাব সাব্বির সাহেবের চরিত্রে অভিনয়
করছিলেন।আমি আন্টিকে বললাম
-এইগুলা তো পুরোনো কথা।উনি যখন
চাচ্ছেননা আমাকে বিয়ে করতে তাহলে
জোর করার কি আছে?
-চাচ্ছেনা মানে কি?চাইতেই হবে।ও বিয়ে
করবেনা ওর চৌদ্দ গোষ্ঠী করবে।তুই কোন
চিন্তা করিসনা।বিয়ে তোর সাথেই হবে।আর
শোন যে জন্য তোকে ডেকেছিলাম।তুই নতুন
করে জন্ম নিবন্ধন কার্ড বানা।তাতে তোর
বয়স দিবি তেইশ।
-মানেহ?সবাই বয়স কমায় আর আমি কিনা
বাড়াবো?আমি নিজেও তো দুই বছর কমিয়ে
দিয়েছি
-সর্বনাশ।তাহলে কার্ড অনুযায়ী তোর বয়স
কতো?
-আঠারো
-হায়রে কপাল
বলে উনি কপালে হাত দিলেন।তারপর কি
বুঝে কিছুটা দুষ্টুমির হাসি হেসে বললেন
-তুই কোন চিন্তা করিস না।সাব্বির তোকেই
বিয়ে করবে।আমি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে
দিলে ও ঠিকই রাজী হবে
-না থাক,দরকার নাই এভাবে রাজী
করানোর
-আরে আমি কি সত্যি সত্যি খাওয়া দাওয়া
ছাড়বো নাকি?সাব্বির জানবে আমি
খাচ্ছিনা,তারপর সিনেমার মা গুলোর মতো
অসুস্থ হওয়ার ভান ধরবো তখন সাব্বির রাজি
না হয়ে উপায় নেই।হাহাহা
.
এই মহিলার সাথে মানে আমার অনিশ্চিত হবু
শ্বাশুড়ী মার সাথে আমার অনেক বছর আগে
দেখা হয়।তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি।স্কুল
ছুটি হওয়ার পর ঘাড়ের দুপাশে দুই বেনী
দুলিয়ে হেলেদুলে ক্যাটবেরী খেতে খেতে
বাসায় ফিরছিলাম।চরম গরম পড়ছিলো
সেদিন।রাস্তা প্রায় জনশূন্য।এই দুপুর বেলা
ত্বক ফাটা রোদ্দুরে কেউই বের হবেনা
বাসা থেকে।গলিতে ঢুকতেই দেখি একজন
মহিলা মাথা ধরে রাস্তায় বসে আছেন।
সন্দেহ হওয়াতে কিছুটা কাছে
গেলাম।"আন্টি আপনার কি হয়েছে " বলে
গায়ে হাত দিতেই উনি আমার কাঁধে ঢলে
পড়লেন।আমি উনার ভারী শরীরের ভারে
আমি নিজেই পড়ে যাচ্ছিলাম।কোনমত
ে সামলে উনাকে ধরে বসলাম।উনি আমার
কাঁধে মাথা রেখে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে
ছিলেন।আমি কি করবো বুঝে উঠতে
পারছিলাম না।ব্যাগ থেকে পানির বোতল
বের করে উনার মুখে কয়েকবার ছিটিয়ে
দিলাম।উনি বিরবির করে বললেন "সুগার
লো"।সুগার লো হলে কি করতে হয় তা তো
আমি জানিনা।সুগার হাই করতে হয়।কিভাবে
হাই করবো?সুগার মানে চিনি খাইয়ে?হ্যাঁ।
আমি বললাম "আন্টি চিনির শরবত খাবেন?"
উনি কিছু না বলে দুর্বল ভঙ্গিতে মাথা
নেড়ে হ্যাঁ সূচনা জবাব দিলেন।চিনির শরবত
কোথায় পাবো আমি এখন?দেয়াটা ঠিক হবে
কিনা জানিনা তবুও আমি আমার হাতে
থাকা চকোলেট একটু ভেঙে উনার মুখে
দিলাম।এদিক ওদিক তাকিয়ে একজন
রিক্সাওলাকে ডাকলাম।তাকে দিয়ে একটা
জুসের বোতল আনালাম।উনি জুস খেলেন।একটু
একটু করে ঠিক হতে শুরু করলেন।কোনমতে
উনার কাছ থেকে বাসার ঠিকানাটা
জানতে পারলাম।রিক্সায় উনাকে ধরে বসে
উনার বাসায় নিয়ে গেলাম।সেখানেই জনাব
সাব্বির সাহেবকে দেখলাম প্রথম দেখলাম।
জনাব সাব্বির সাহেব বলার কারণ হলো উনি
আমাকে বাচ্চা মেয়ে ভাবেন তাই আমি
উনাকে সিনিয়র ভেবে নামের আগে পিঁছে
জনাব আর সাহেব লাগালাম।
.
সেদিন সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরলাম।আন্টি
আমাকে কিছুতেই ছাড়ছিলেননা।আম্মু
টেনশন করবে বলেছি দেখে আম্মুর সাথে
ফোনে কথাও বলেছিলেন।কথা বলার সময়
বারবার বলছিলেন "আপনার মেয়ে না
থাকলে আজকে আমি মরেই যেতাম।"আন্টির
কথা অনুযায়ী জনাব সাব্বির সাহেব
আমাকে বাইকে করে বাসায় পোঁছে দিয়ে
গেলেন।তার কিছুদিন পর একদিন হঠাৎ দেখি
আন্টি আমাদের বাসায় হাজির।সেদিন
থেকেই উনাদের বাসায় আমার আসা
যাওয়া।উনি ঠিক করে ফেললেন আমাকে
উনার ছেলের বউ করে নিয়ে যাবেন।এই কথা
শুধু আমি আর উনি ছাড়া আর কেউই
জানতোনা।এমনকি উনার ছেলে সাব্বির ও
জানতোনা।এখন অবশ্য সবাই জানে।জনাব
সাব্বির সাহেব দেশের বাইরে থেকে
এমবিএ কমপ্লিট করে আসার পর থেকেই
আন্টি বিয়ের জন্য তোড়জোড় লাগিয়ে
দিলেন।আমি পিচ্চি এইটা নিয়ে প্যান প্যান
করতে করতে দুইবছর হয়ে গেছে অলরেডি।
তবে আমার আব্বু আম্মুর সাথে বিয়ে নিয়ে
আন্টির তেমন কোন কথাই হয়না।যা কথা হয়
সব আমার সাথেই হয়।বিয়ে কবে
হবে,কোথায় হবে,শপিং কোত্থেকে
করবে,সাজবো কোথায় সব আমার সাথেই
কথা বলে ঠিকঠাক করে ফেলেছেন।অথচ
যার বিয়ে তারই খবর নাই মানে জনাব
সাব্বির সাহেব নিজেই এখনো রাজি হননি।
এতো তোড়জোড় এতো লাফালাফি,কে
জানে শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয় কিনা!
.
সব জল্পনা কল্পনার অবসান হয়ে অবশেষে
আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হলো।সাব্বিরকে
দেখে মনেই হচ্ছেনা যে ও এই বিয়েতে
রাজী না।জনাব সাব্বির সাহেব বলতে
ভালো লাগছেনা তাই শুধুই সাব্বির বলবো
এখন থেকে।যা বলছিলাম, সাব্বিরকে দেখে
মনে হচ্ছিলো ও বিয়ের অনুষ্ঠান টা বেশ
উপভোগ করছে।হাসি হাসি মুখে বন্ধুদের
সাথে কথা বলছে,দুষ্টুমি করছে।কেবল
আমার দিকে তাকালেই কেন জানি ওর মুখ
টা কালো হয়ে যায়।আর কেউ না বুঝলেও
আমি বুঝতে পেরেছি যে এই বিয়েতে ও
একটুও খুশি না।তবুও মনকে স্বান্তনা দিলাম
যে বিয়ে যখন হচ্ছে তখন নিশ্চয়ই সব ঠিক
হয়ে যাবে।আর আমার শ্বাশুড়ী মা থাকতে
আমার চিন্তা কি?আমার সাত জনমের ভাগ্য
যে আমি এইরকম একজন শ্বাশুড়ী পেয়েছি।
আমি আগে বান্ধবীদেরকে বলতাম ছেলে
দেখার আগে ছেলের মাকে দেখবো।মাকে
পছন্দ হলে সেখানেই বিয়ে করবো।এখন
দেখছি চাওয়ার থেকে অনেক বেশীই পেয়ে
গেছি।উনি আমাকে নিজের মেয়ের মতোই
দেখেন।সাব্বির আমাকে স্ত্রী হিসেবে না
মানলেও আমার কিছু যায় আসেনা।আর
তাছাড়া মায়ের কথা ভেবে ও আমাকে
একদিন না একদিন স্ত্রী হিসেবে মেনে
নেবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।এতক্ষণে
নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ও মায়ের বাধ্য
ছেলে।
.
বাসর ঘরে বসে আমি কথাগুলো ভাবছি ঠিক
তখনই সাব্বির ঘরে ঢুকলো।ওর গায়ে ডীপ
গ্রীন কালারের টি শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স।
ওকে দেখে কেউ বলবেওনা আজ একটু আগেই
ওর বিয়ে হয়েছে।ও আমার দিকে তাকিয়ে
অনিচ্ছা নিয়ে একটু হাসলো।ওকে দেখে
মনে হচ্ছে ও বেশ বিব্রত বোধ করছে।
বিছানার দিকে এমন ভাবে তাকিয়েছে
যেন আমি পুরো বিছানা জুড়েই বসে আছি
আর ওর বসার বা শোয়ার জায়গা নেই।আমি
ওর ইতস্ততা দেখে কিছুটা সরে বসলাম।ও খুব
সহজ ভাবেই আমার পাশে বসলো।তারপর
বললো
- কেমন আছো তুমি?
আমি চোখ এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ভাবছিলাম
"কেইস টা কি?উনি এতো তাড়াতাড়ি গলে
গেলো কিভাবে?তাহলে কি আমাকে উনি
মেনে নিয়েছেন?"।মাথাটা হালকা কাত
করে বললাম
-জি ভালো আছি
-তোমার কি আনইজি ফিল হচ্ছে?
-একটু একটু
-তুমি চাইলে ড্রেস চেঞ্জ করতে পারো।আই
থিংক এই ভারী শাড়ি পড়ে থাকতে তোমার
ভালো লাগছেনা।
-না না,আমি ঠিক আছি।
-তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো?
ভয়?ভয় পাবো কেন?কি আজীব!উনি এই
কথা কেন জিজ্ঞেস করলেন?উনাকে ভয়
পাওয়ার কি আছে?বললাম
-জিনা,ভয় পাচ্ছিনা
-ভয় পাচ্ছোনা?
উনি এমন ভাবে কথাটা জিজ্ঞেস করলো
যেন আমার উনাকে ভয় পাওয়া উচিৎ।আমি
বললাম
-জিনা
-ও আচ্ছা।তোমার কি ঘুম পাচ্ছে?
-জিনা
-প্রায় একটা বাজে।সকালে মেবি তোমার
ক্লাস আছে।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।এতক্ষণ রাত
জাগা ঠিক হবেনা।
-আমি কালকে ক্লাসে যাবোনা।
-যাবেনা?ক্লাস মিস দেয়াটা ঠিক হবেনা।
বাই দ্যা ওয়ে তুমি যেন কিসে পড়ছো?
-বিবিএ
-বিবিএ?গুড,এখন ঘুমাও।সকালে কথা হবে।
আচ্ছা লাইট অফ করলে কি তোমার প্রবলেম
হবে?মানে তুমি কি ভয় পাবে?আমি আসলে
লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাতে পারিনা
-আমিওনা
.
উনি লাইট অফ করে শুয়ে পড়লেন।আমি
কিছুক্ষণ বিছানায় চুপচাপ বসে রইলাম।
তারপর এক পাশে শুয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ পরে
উনি বললেন
-ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড,তোমাকে একটা
কোয়েস্চেন করি?
কথাটা শুনে আমি কেন জানি অনেক
উত্তেজিত বোধ করলাম। উৎসুক হয়ে উনার
দিকে পাশ ফিরে বললাম
-হ্যাঁ করেন
-তোমার বয়স কতো?
এমন একটা প্রশ্ন শুনে আমি কিছুটা হতাশ
হলাম।কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচু স্বরে বললাম
-সামনের জুলাইতে একুশ হবে।
-এইটা রিয়েল তো?মানে তোমার বয়স
একবার শুনি পনেরো, একবার
আঠারো,একবার তেইশ এখন আবার একুশ
-এটাই রিয়েল।
-ও আচ্ছা,গুড নাইট।
.
উনি সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছেন।আমার ঘুম
আসছিলোনা কিছুতেই।একে নতুন বিছানা
তার উপর পাশে সদ্য বিবাহ করা স্বামী
কিভাবে ঘুম আসে।একা একা জেগে থাকতে
আমার অসহ্য লাগছিলো।মনে হচ্ছে যেন
মহাকালরাত্রি যাপন করছি আমি।আমার ঘুম
আসলো একদম ভোর হওয়ার আগ মুহুর্তে।
.
আমাদের বিয়ের প্রায় তিনমাস হতে চললো।
এই তিনমাসে আমি যা বুঝতে পারলাম তা
হলো সাব্বির এখন আমাকে একজন বাচ্চা
মেয়ে ছাড়া কিছুই ভাবেনা।ওর আচার
আচরণে মনে হয় আমি ওর ছোট বোন যাকে
আদর আর শাসনে রাখা উচিৎ। ওর কাছে
আমার চলাফেরা,কথাবার্তা সবই বাচ্চাদের
মতো মনে হয়।আমার মনে হয়না ও কখনো
আমাকে স্ত্রীর নজরে দেখেছে।
.
আমি ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য এই
বাহানা সেই বাহানা করে ওকে ফোন
দিতাম আর ও ব্যস্ত আছি বলে ফোন কেটে
দিতো।
একদিন ওকে ফোন করে বললাম আমার জন্য
আইসক্রিম নিয়ে আসতে ,ও আমাকে কিছুটা
কড়া ভাবে বললো এই শীতে আইসক্রিম
খেলে ঠান্ডা লাগবে।আমি ওকে কিছুতেই
বুঝাতে পারলাম না যে শীতের রাতেই
আইসক্রিম খাওয়ার মজা বেশী।কখনো যদি
বলি "চলেননা ছাদে যাই।" ও আমাকে বলে
"রাতের বেলা ছাদে ভূত থাকে"।ওর ধারণা
আমি বুঝি ভূতের ভয়ে চুপসে যাই।আমি
টিভির সামনে বসলে আমার কাছ থেকে
রিমোট নিয়ে বলে "তোমার না সামনে
পরীক্ষা?এখন টিভির সামনে কি?" বলেই
আমাকে পড়াতে নিয়ে যায় আর নিজেই
পড়ায়।পড়ানোর সময় আমি গালে হাত দিয়ে
ওর দিকে তাকিয়ে থাকতাম যেন ও আমার
টিচার আর আমি টিচারের প্রেমে পড়েছি।
অথচ সেদিকে তার খেয়ালই নেই।একসাথে
জোৎস্না দেখা,আইসক্রিম খাওয়া,ঘুরতে
যাওয়া এইসবের মধ্যে ও রোমান্টিসিজম
দেখতে পেতোনা।দেখতে পেলেও হয়তোবা
ভাবতো আমি এইসবের উপযুক্ত না।কারণ
আমিতো বাচ্চা মেয়ে।
.
ও আমাদের বাসায় যেতে চাইতোনা।আমি
একা একাই বেড়িয়ে আসতাম আমাদের বাড়ি
থেকে।মাঝে মাঝে শ্বাশুড়ী মার ঝাঁড়ি
শুনে গেলেও কখনো রাতে থাকতোনা।ওর
নাকি নিজের বিছানা ছাড়া অন্য বিছানায়
ঘুম আসেনা বলে চলে আসতো। কখনো ফোন
করে জিজ্ঞেস ও করতোনা আমি কেমন
আছি বা কবে ফিরবো।মনে হয় যেন আমি ওর
লাইফে নাই।আমি ওকে কারণে অকারণে
প্রতিদিনই ফোন দিতাম।কখনো না বা ফোন
দিয়ে বলতাম
-আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন?
-তুমি এতো রাতে?ঘুমাওনি এখনো?এতো
রাত জেগে আছো কেন?শরীর খারাপ
করবেনা?
-না করবেনা
-রাত জেগে কি করছো?
-আমি আমাদের বিয়ের ভিডিও টা দেখছি।
আর আপনাকে মিস করছি।
-আবার বিয়ের ভিডিও?এই পর্যন্ত কয়বার
দেখেছো বলোতো?কিছুদিন আগেইতো
আমার সাথে বসে দেখলা এখন আবার
দেখছো?যাও ভিডিও অফ করো আর ঘুমাও
-না,আমি ঘুমাবোনা।আপনি ও উঠে বসেন
আর ল্যাপটপ ওপেন করে।আপনি বিয়ের
ভিডিওটা দেখবেন এখন তাহলে কি হবে
জানেন?আপনি ওখানে বসে দেখছেন আর
আমি এখানে বসে দেখছি মনে হবে যেন
দুজন পাশে বসেই দেখছি।
-মীম মাঝরাতে এইসব পাগলামীর মানে
কি?সাধে কি আমি তোমাকে বাচ্চা বলি?
এখন তুমি চুপচাপ ল্যাপটপ বন্ধ করবা আর
ঘুমাবা।
-আপনি আমাকে নিতে আসবেন কবে?আমার
আর এখানে ভালো লাগছেনা,আপনি এসে
নিয়ে যান
-আমার অফিসে অনেক কাজের চাপ,আমার
সময় নেই।আমি যেতে পারবোনা।তুমি তোমার
আব্বুর সাথে চলে আসো।আর মাত্র তো
গেলে ,এখনই চলে আসতে চাচ্ছো যে?
-মাত্র মানে?পাঁআআআচ দিন হয়েছে।
-আরও পাঁচদিন থাকো তাহলে
-আপনি আমাকে মিস করছেননা?
-ঘুমাও মীম।গুড নাইট
.
আমার জন্মদিনে আমাকে এক বক্স চকোলেট
গিফট করেছে।অথচ আমি ওর কাছ থেকে
শাড়ি বা জুয়েলারি টাইপ কিছু আশা
করেছিলাম।সেইগুলা না হোক স্ত্রী
হিসেবে অন্তত একটা ফুলতো আশা করতেই
পারি।আমি যে ওর সামনে সারাদিন তিড়িং
বিড়িং করে চলাফেরা করি সেটা ওর
চোখেই লাগেনা।কখনো আমার দিকে
রোমান্টিক চোখে তাকিয়েছে বলে মনে
হয়না।অফিস থেকে ভুল করে একটা কল ও
করতোনা আমাকে।আমিই প্রতিদিন ফোন
করে জিজ্ঞেস করতাম লাঞ্চ করেছে
কিনা।আমি যে ও লাঞ্চ না করা পর্যন্ত
কিছু খাইনা সেটাও ও ভালো চোখে
দেখেনা।ও আমাকে শাসিয়ে বলে
"টাইমমতো খাবার খাওনা কেন?শরীর
খারাপ করবেনা?আমার জন্য ওয়েট করতে
হবেনা।আমার মিটিং টিটিং এর জন্য খেতে
দেরী হবে।তুমি ঠিক দুটোর মধ্যেই খেয়ে
নিবে আর প্রতিদিন ফোন দিতে হবেনা
আমাকে।" আমি মন খারাপ করতাম,অথচ ও
কখনো বোঝার চেষ্টাই করতোনা।
.
একদিন দুপুরে আমি,আর মা খেতে বসেছি।
খাওয়ার এক পর্যায়ে হটাৎ আমার ঠোঁটে
কামড় পড়ে।হাত দিয়ে দেখলাম হালকা একটু
রক্ত ও বের হয়েছে ।মা আমার দিকে
তাকিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছিলেন।আমি
বললাম
-আমি আর খাবোনা,ঠোঁটে ব্যাথা
-জানিস তোর ঠোঁটে কেন কামড় পড়েছে?
-কেন আবার?বোকার মতো খাচ্ছি তাই
-আরেন্নাহ পাগলী এটার অন্য কারণ আছে।
-কি কারণ?
.
মায়ের কাছ থেকে কথাটা শুনেই আমি
দৌড়ে আমার ঘরে গেলাম।আমার কি যে
আনন্দ হচ্ছিলো।ফোনটা হাতে নিয়েই
সাব্বিরকে কল দিলাম।ও রিসিভ করেই
বললো
-আমি লাঞ্চ করেছি।তোমাকে না বলেছি
আমার জন্য ওয়েট করা লাগবেনা?
-আমি সেই জন্য ফোন করিনি
-তাহলে?
-আপনি কি ঠিক এই মুহুর্তে আমার কথা
ভাবছেন বা কারও সাথে আমাকে নিয়ে
কিছু বলেছেন?
-নাতো
-মিথ্যে বলবেননা,আমি জানি আপনি আমার
কথা ভাবছেন
-আমি তোমার কথা ভাববো কেন?
-তাহলে আমি ঠোঁটে কামড় দিলাম যে?মা
বললো কেউ কারও কথা ভাবলে নাকি যার
কথা ভাবে তার ঠোঁটে কামড় পড়ে?
-মা বলেছে এই কথা?এইসব কুসংস্কার কেন
বিলিভ করো?
-এইটা কুসংস্কার না।সত্যি কথা
-এইটা কুসংস্কার।আমি সিওর তুমি এখনো
এইটা বিশ্বাস করোযে কারও মাথার সাথে
ঠুকা লাগলে মাথায় শিং গজায়।কজ ওইদিন
রুমে ঢোকার সময় তোমার মাথার সাথে
আমার মাথা ঠুকা লাগার পর তুমি শিং
গজানোর ভয়ে আমার মাথায় আরেকটা ঠুকা
দিছিলা।
(আমি মনে মনে বলছি "গাধা,ঠুকা
দেয়াটাতো একটা উছিলা মাত্র।আমিতো
তোমার কাছে যাওয়ার জন্যই আবার ঠুকা
দিলাম)
-কিন্তু কামড় দেয়ার ব্যাপার টা সত্যি
-আচ্ছা মানলাম সত্যি।কিন্তু আমি তোমার
কথা ভাবিনি।তোমার কথা ভাবার টাইম কই
আমার?আর সবচেয়ে বড় কথা তোমার কথা
আমি ভাববো কেন?তোমার আম্মুকে ফোন
দাও,উনিই হয়তো তোমার কথা ভাবছেন।
.
আমি মন খারাপ করে কল কেটে দিলাম।উনি
এভাবে বললেন কেন কথাগুলো?এভাবে না
বললেও পারতেন?মানলাম আমাকে স্ত্রী
হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি তাই বলে কি
আমার কথা একটা বার ভাবার প্রয়োজন ও
মনে করেনা?মাকে আসতে দেখে
তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিলাম।আমার কাঁধে
হাত রেখে বললেন
"আমার ছেলেটা একেবারেই
আনরোমান্টিক।তোর শ্বশুর অনেক বেশী
রোমান্টিক ছিলো।আমার সাথে কথা বলার
জন্য কতো যে বাহানা করে ফোন দিতো।"
.
নাহ,এইভাবে হবেনা।আমি যতই উনার প্রতি
আগ্রহ দেখাচ্ছি উনি ততই আমাকে এভয়েড
করছে।আমি যে এতোদিন বলে আসছি উনি
আমাকে মেনে নেয়া না নেয়াতে আমার
কিছু আসে যায়না এইটা একেবারেই ভুল
কথা।আমার অনেক কিছুই আসে যায়।খালি
শ্বশুর শাশুড়ির আদরে তো কাজ হবেনা।যদি
স্বামীর সাথেই মনের মিল না হয় তাহলে
বিয়ে করার মানে কি?এই ছেলে এইভাবে
ঠিক হবেনা,একে টাইট দিতে হবে।অন্য
ভাবে খেলতে হবে।
.
আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে
শাড়ির কুঁচি ঠিক করছি আর ও টাই হাতে
দাড়িয়ে আছে।আমি ইচ্ছে করেই এমন ভাবে
দাড়িয়েছি যেন ও আয়নায় নিজেকে
দেখতে না পারে।ওর খালাতো ভাইয়ের
প্রথম বিবাহ বার্ষিকী আজ।সেই অনুষ্ঠানে
যাওয়ার জন্যই তৈরী হচ্ছি।অনেক্ষণ
দাড়িয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে বললো
- তোমার আর কতক্ষণ লাগবে?
-কুচিটা ঠিক করে দাওতো।
আমার মুখ থেকে এইরকম কথা শুনে সাব্বির
কিছুটা ধাক্কা খেলো।তার উপর আমি ওকে
তুমি করে বলছি।ও যেন সাত আসমান থেকে
পড়লো।ও অবাক হয়ে বললো
-কি?
-শুনতে পাওনি?আরেকবার বলতে হবে?ওকে
বলছি।আমার শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে
দাও
-আমি?
-হ্যাঁ তুমি।এখানে আর কেউ আছে নাকি?
-তুমি মায়ের ঘরে যাও,উনি ঠিক করে
দিবে।
-তোমাকে বলছি তুমি ঠিক করে দিবা।কি
হলো?এভাবে হেবলার মতো তাকিয়ে আছো
কেন?
.
শাড়ির কুচি ঠিক করার কিছুই নেই।জর্জেট
শাড়ির কুচি এমনিতেই ঠিক হয়।আমি শুধুমাত্র
ওকে ভড়কে দেয়ার জন্যই কথাটা বললাম।ও
বললো
-এইবার তো সরো,আমি টাইটা বাঁধি।
আমি ওর হাত থেকে টাইটা নিয়ে বললাম
-টাই বাঁধতে আয়না দেখা লাগে?
দেখি,দাড়াও সোজা হয়ে।
আমি টাইটা বেঁধে দেয়ার পর ও ব্লেজার টা
পরলো।আমি নাক কুঁচকে বললাম
"উঁহহু,ব্লেজারে ভালো লাগছেনা।থাক
ব্লেজার পড়তে হবেনা।খুলে ফেলো।"
বলে ওর অপেক্ষা না করে আমি নিজেই
ব্লেজার টা খুলে নিলাম।তারপর শার্টের
হাতা গুটিয়ে দিয়ে বললাম "এবার ঠিক
আছে।পারফেক্ট"
.খালামনির বাসায় যতক্ষণ ছিলাম ততক্ষণ ও
ঘুরে ফিরে আমাকেই দেখছিলো।আমার
আজকের আচরণ গুলো সম্ভবত ও আমার সাথে
মেলাতে পারছিলোনা।আমি ইচ্ছে করেই ওর
থেকে দূরে দূরে ছিলাম।
.
আমি রাতুল ভাইয়ের বউয়ের সাথে দাড়িয়ে
কথা বলছিলাম।আমার চেয়ে বয়সে দুই বছরের
ছোট হবে।ও সাতমাসের অন্তসত্তা।এই
অবস্থায় ও এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
ব্যাপার টা আমার কাছে বেশ ভালো
লাগলো।আমি বললাম
-পরীক্ষার হলে তোমার বাবু তোমাকে গুতো
দেয়না?
-হ্যাঁ দেয়তো।
-ব্যাথা পাওনা?
-উঁহু,ভালো লাগে।ফিল হয় যে আমার পেটে
কেউ একজন আছে।
.
আমার কেন জানি প্রেগন্যান্ট মেয়েদেরকে
আমার অনেক বেশী ভালো লাগে।প্রেগন্যান
্ট অবস্থায় মনে হয় যেন মেয়েদের চেহারায়
অনেক বেশী মায়া জড়ো হয়।পাঁচ ছয়মাসের
সময় যখন হালকা একটু পেট বাড়ে তখন মনে
হয় তাদের থেকে সুন্দর বুঝি পৃথিবীতে আর
কেউ নেই।রাতুল ভাইয়ের বউ আমাকে
জিজ্ঞেস করলেন আমরা কবে বেবী নিবো।
উনার কথা শুনে আমি হাসবো না কাঁদবো
বুঝতে পারছিলাম না।আমি বললাম" আমি
নিজেইতো এখনো বাচ্চা মেয়ে,আমি আগে
বড় হই তারপর না হয় দেখা যাবে"।
.
কিছুদিন আগেই সাব্বিরের সাথে আমার এ
নিয়ে কথা হয়।ওকে কিভাবে কথাটা বলবো
বুঝতে পারছিলাম না।তবুও অনেক লাজ
লজ্জা ভেঙে বলে ফেললাম।
-আমার একটা জিনিস লাগবে
-কি জিনিস?
-আপনি দিবেন কিনা বলেন?
-দেয়ার মতো হলে দিবো
-আমার একটা পুতুল লাগবে
-পুতুল?
-হ্যাঁ,মেয়ে পুতুল
-পুতুল দিয়ে কি করবা?
-বারে!বাসায় আমি আর মা শুধু।আমরা বোর
হইনা?একটা মেয়ে বাবু থাকলে আমরা তার
সাথে খেলতাম,তাকে ঘুম
পাড়াতাম,খাওয়াতাম আরও কত কিছু
করতাম।
-হুমম বুঝলাম।ওকে,কালকে দিবো।এখন
ঘুমাও।
.
কালকে দিবে মানে?আমি কি বললাম আর
সে কি বুঝলো?সে কি বুঝলো সেটা সেদিন
সন্ধ্যার পর বুঝলাম।তার হাতে পিংক
কালারের ইয়া বড় এক পান্ডা পুতুল।আমার
হাতে দিয়ে বললো
-মেয়ে পুতুল তো পাইনি তাই এইটা নিয়ে
আসলাম।এইটা দেখো সফট।তুমি এইটা জড়িয়ে
রাতে ঘুমুতেও পারবা।আর কালার টা সুন্দর
না?আই থিংক পিংক তোমার ফেভারিট
কালার।
আমার কান্না পাচ্ছিলো।তবুও হাসি হাসি
মুখে বললাম "হ্যাঁ,আমার ফেভারিট কালার
পিংক"
.
রাত প্রায় আড়াইটা বাজে।আমি ওর চুলে
হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম।ও কিছুই
বলছিলোনা।বাচ্চা ছেলের মতো আমার
চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চেহারায়
ভয়ের ছাপটা আমি স্পষ্ট দেখছিলাম।স্বপ্ন
ের ঘোরটা মনে হয় এখনো কাটেনি।ঠিক
স্বপ্ন নয় দুঃস্বপ্নই হবে হয়তো।নয়তো এভাবে
ঘুমের মাঝে লাফিয়ে উঠে বসে পড়তোনা।
কি এমন স্বপ্ন দেখলো যে আমার নাম ধরে
চিৎকার করে উঠলো?আমি মারা গেছি?
আমার থাকা না থাকা কি আদৌ ওর উপর
কোন প্রভাব ফেলবে?আমি নিজের মনের
কাছে হেরে গেলাম।সংযত রাখতে পারলাম
না নিজেকে।ওর খুব কাছে এলাম।ওর চুল
থেকে হাতটা নামিয়ে ছোট্ট বাবুদের মতো
গালটা হালকা টেনে দিলাম।নাকের সাথে
আলতো করে নাক স্পর্শ করার সময় উনার
উষ্ণ নিঃশ্বাসের ছোঁয়ায় আমি বারবার
শিহরিত হচ্ছিলাম।চোখ বন্ধ করে ওর ঠিক
ঠোঁটে নয় ঠোঁটের নিচে আলতো করে আমার
ঠোঁট ছোয়ালাম।বিয়ের পর এই প্রথম চুমু।
আবার চুলে হাত বুলিয়ে বললাম "ঘুমাও" । ও
কিছু বলতে চাইলো মনে হয় কিন্তু বলার
সুযোগ দিলাম না।অন্য পাশ ফিরে গেলাম।
কি লাভ ওকে আমার চোখের জল দেখিয়ে?
কিঞ্চিত মায়া থাকলে সে নিজেই আমার
অভিমান বুঝতে পারবে।
.
ও আর ঘুমুচ্ছিলোনা।একবার বিছানায় উঠে
বসে আবার শোয়।আমি চোখ বন্ধ করে অপর
পাশ ফিরে শুলেও ঠিক বুঝতে পারছিলাম যে
ও বেশ কয়েকবার আমার বাহুতে হাত রাখতে
চেয়েও রাখলোনা।আমার খুব ইচ্ছে করছিলো
ওকে জড়িয়ে ধরি কিন্তু নিজেকে সামলে
রেখেছিলাম।
-মীম
-হু
-কালকে তুমি তোমাদের বাসায় যাবা?
-হুম
-আমি অফিস যাওয়ার পথে তোমাকে
নামিয়ে দিয়ে যাই?
-না,থাক।আমি একাই যেতে পারবো।
.
কোন কিছুতেই আমার মন টিকছেনা।একবার
বারান্দায় গিয়ে বসি আরেকবার বিছানায়
গিয়ে গড়াগড়ি করি।ঘুমানোর চেষ্টা করলাম
কিন্তু ঘুমের দেখা নাই।পেটের ভেতর ইঁদুর
দৌড়াচ্ছে ভাবলাম ঘুমালে বোধহয় ইঁদুর
টাকে শান্ত করা যাবে।কিন্তু পেটে ক্ষিদে
নিয়ে ঘুমও আসছেনা।আমাদের বাসায় আসার
পর থেকে সাব্বিরকে একবার ও কল করিনি।
এইদিকে কল না করেও থাকতে পারছিনা।
ফোন হাতে থাকলে কল দিতে ইচ্ছে করে
তাই ফোনটা ওয়ারড্রবের ড্রয়ারে রেখে
দিয়েছি।যতো যাই হোক আমি ওকে কিছুতেই
ফোন দিবোনা।ফোনটা সাইলেন্ট করে
রেখেছি যাতে ও ফোন দিলেও আমি যেন
না শুনতে পাই।সে বুঝুক যে ফোন রিসিভ না
করলে কেমন কষ্ট হয়!আচ্ছা সে যদি কল
করে প্রথমবার আমাকে না পায় এরপর যদি
আর কল না করে?উঠে গিয়ে ফোনটা
জেনারেল মুড করে ওয়ারড্রবের উপরে
রাখলাম।বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি দেখে
আম্মু এসে বললেন
-কি হয়েছে?
-পেট ব্যথা করছে
-সকালে আসার পর থেকে এখনো পর্যন্ত
কিচ্ছু খাসনি। তোর পেটে ব্যথা করবে না
তো কি আমার পেটে করবে?আয় ভাত
খাবি,আমি তোর জন্য টমেটো ভর্তা
করেছি
-ক্ষিদে নেই আম্মু
-ক্ষিদে নেই মানে? আয় আমি খাইয়া
দিবো
-আম্মু আমি ঘুমানোর চেষ্টা করছি।আমাকে
ডিস্টার্ব কইরোনা।আমি রাতে উঠে
একসাথে খাবো।আমার ফোনটা একটু
ওয়ারড্রবের উপর থেকে এনে দিবা?
-এই না বললি ঘুমাবি?এখন আবার ফোন
কেন?
-সাব্বিরকে একটা ফোন দিয়ে দেখি ও
খেয়েছে কিনা?
.
ও কি খেয়েছে?অবশ্যই খেয়েছে।ফোন
দিয়ে একবার জিজ্ঞেস করবো?না
দিবোনা।দুনিয়া উল্টে গেলেও ফোন
দিবোনা।ফোন বন্ধ করে আমি ঘুমাই।না বন্ধ
করবোনা।ও যদি ফোন দেয়?নাহ ও ফোন
দিবেনা।থাক,ফোনটা বালিশের নিচেই
থাক।আমি ঘুমাই।আম্মাগো!পেটে ব্যথা।
.
চোখটা হালকা লেগে এসেছে তখনই মনে
হলো ফোন বাজছে।হাতে নিয়ে দেখি
সাব্বির ফোন করেছে।আমি কি করবো
বুঝতে পারছিলাম না।খুশিতে আত্মহারা মনে
হয় এটাকেই বলে।ফোন রিসিভ করলাম
-হ্যালো,হ্যালো হ্যালোওওওওও হ্যালো।
.
কাহিনী কি?কেউ কথা বলেনা কেন?চোখ
খুললাম আমি?তখনও ফোনটা আমার কানের
সাথে ধরে আছি।তার মানে আমি এতক্ষণ
স্বপ্ন দেখছিলাম!ধ্যাত্তেরি!এই ছেলে
জীবনেও আমাকে ফোন দিবেনা।আমিও
ফোন দিবোনা।সে যতোদিন না আমাকে
নিতে আসবে ততোদিন ওই বাসায়
যাবোওনা।দেই ফোনটা অফ করে।আরে!ফোন
বাজছে!সাব্বির কল করেছে।এইটাও স্বপ্ন
নাকি?নাহ,এখন তো আমি জেগে আছি তার
মানে সত্যিই।একটু দেরী করে ফোনটা
রিসিভি করি,সাথে সাথে রিসিভ করলে
সে ভাববে আমি তার কলের অপেক্ষায়
আছি।হুহ,আমি কেন তার কলের অপেক্ষায়
থাকবো?আমার কি অভিমান বলে কিছু নাই
নাকি?কথা বলার সময় গলে গেলে চলবেনা।
যথেষ্ঠ ভাব রেখে কথা বলতে হবে।
ইয়াআল্লাহ,আমাকে শক্তি দাও।আমিন।এই
এক্ষুনি কল কেটে যাবে।রিসিভ করি
তাহলে।
-হ্যালো (আমি )
-তোমার ফোনে ব্যালেন্স নেই? (ও)
-হ্যাঁ আছেতো
-তাহলে সকাল থেকে কল দিলেনা যে?
-কল দেয়ার কথা ছিলো নাকি?
-না মানে প্রতিদিন লাঞ্চ টাইমে তো কল
দাও
-আজকে দেইনি
- কেন?
-তুমি ব্যস্ত মানুষ তাই ভাবলাম ডিস্টার্ব না
করি
-আমি ব্যস্ত?তুমি ফোন দিলে আমি
ডিস্টার্ব ফিল করবো?
-করতেই পারো
-করতে পারি তাইনা?যাইহোক ,খেয়েছো?
- কি খেয়েছি?
- দুপুরের খাবার?
-এখন কয়টা বাজে?পাঁচটা।দুপুরের খাবার
তো সেই দেড়টার সময় খেয়েছি।এই মাত্র
নুডুলস খেলাম।এখন আবার চা আর বিস্কিট
খাবো।তুমি তো জানোই আমি সারাদিন
খাওয়ার তালেই থাকি।
-ও আচ্ছা।ভালো তো।খাও তাহলে।
-আচ্ছা
.
কন্ট্রোল মীম কন্ট্রোল।কিছুতেই ওকে
জিজ্ঞেস করা যাবেনা ও খেয়েছে কিনা।
কারণ আমি জানি ও খেয়েছে।জিজ্ঞেস না
করেও থাকতে পারছিনা।আমি কি করবো
এখন?আম্মাআআআ,আমি এরকম কেন?
ইয়াআল্লাহ তুমি আমাকে আর একটু শক্তি
দাও।নাহ,শক্তি দিলোনা।আস্তে করে
বললাম
-তুমি খেয়েছো?
-জোরে বলো।শুনতে পাইনি
-বললাম তুমি ভালো আছো?
-হ্যাঁ ভালো আছিতো।তুমি ভালো আছো?
-হ্যাঁ অনেক ভালো আছি
-অনেক ভালো আছো?
-হ্যাঁ
-গুড।(একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো) আমি
কিন্তু এখনো খাইনি
.
কিহ?এখনো খায়নি?আমি কি গাধী?এতক্ষণ
বকবক করেই যাচ্ছি।একটা বার জিজ্ঞেস
করলে কি হতো?থাপ্পড় দেয়া দরকার
আমাকে।আজিব তো!থাপ্পড় দিবো কেন?
আর জিজ্ঞেস করবো কেন?ভালো করেছি
জিজ্ঞেস করিনি।হুহু।আমি চুপচাপ ওর কথা
শুনছিলাম।ও বললো
-আমি ভেবেছিলাম তুমি খাওয়ার আগে
আমাকে ফোন দিবা।
-সবসময় ফোন দিবো এমনতো কথা নেই আর
আমার ফোন পেলে তুমি বিরক্ত হও।
-বলেছি এইরকম কিছু?
-বুঝিয়েছো
-বাহ,তুমি যে এতোকিছু বুঝো জানতাম না
তো
-জানিয়ে দিলাম
-গুড।আমি এখন খেতে বসছি।ভাবলাম
তোমাকে ফোন করে জানিয়ে দেই।নইলে
হয়তো তুমি না খেয়েই থাকবা এতক্ষণ।
-কিন্তু আমিতো খেয়ে ফেলেছি।তুমিইতো
বলেছো ক্ষিদে লাগলে খেয়ে নেয়া উচিৎ।
কারও জন্য অপেক্ষা করা ঠিক না
-হুমম।বলেছিলাম।আচ্ছা,আমি খেয়ে নেই
তাহলে।এখন ফোন রাখি,বাই
-আল্লাহ হাফেজ।
.
উফফ!পেটে ক্ষিধে নিয়ে খাওয়ার কথা বলা
যে কত কষ্টের তা এখন বুঝলাম।ও আমার
ফোনের অপেক্ষা করেছে এটা ভাবতেই
আমার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু
নাচার মতো শক্তি নেই।আগে খেয়ে নিই
তারপর নাচানাচি হবে ।গলা ফাটিয়ে
আম্মুকে ডাকলাম"আম্মুউউউউউউ,ভাত নিয়ে
আসোওওওওও।আমার ক্ষুধা লাগছেএএএএ"
.
এই কয়দিনে সাব্বিরের অনেক পরিবর্তন
হয়েছে।কারণে অকারণে আমাকে ফোন
দেয়।এতোবার ফোন দেয় যে আমি আর ওকে
ফোন দিতে হয়না।ভালোই পরিবর্তন হয়েছে
লোকটার।সে চায় সারাক্ষণ আমাকে তার
মাঝে ব্যস্ত রাখতে।আর আমি তাকে এড়িয়ে
চলি।এভাবে তাকে এভয়েড করতে থাকলে
একদিন সে সহ্য করতে না পেরে ঠিকই
আমার কাছে ছুটে চলে আসবে।আর আমিতো
এটাই চাই।
.
একদিন রাত বারোটার দিকে ফোন দেয়।
আমি তখন মোবাইলে ওর ছবি দেখছিলাম।
ফোন রিসিভ করে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বললাম
-হ্যালো
-ঘুমিয়ে পড়েছো?
-হ্যাঁ,তুমি এতো রাতে?ঘুমাওনি এখনো?
-না,ঘুম আসছেনা
-ঘুম আসছেনা মানে কি?এটা কিন্তু একটা
বদ অভ্যাস।রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো উচিৎ।
-জ্ঞান পরে দিও।এখন উঠো,উঠে ল্যাপটপ
অন করো
-কেন?
-আমি আমাদের বিয়ের ভিডিও টা দেখছি।
তুমিও দেখবা।তাহলে মনে হবে আমরা
একসাথে বসে দেখছি।
-মাঝরাতে এসব পাগলামীর কোন মানেই
হয়না।যাও ঘুমাও।সকালে তোমার অফিস
আছে।
-কালকে তো শুক্রবার
-তো?বেশী রাত জাগলে শরীর খারাপ হবে।
-বড়দের মতো কথা বলো কেন?
-তুমি বাচ্চাদের মতো কথা বলো কেন?ফোন
রাখো,ল্যাপটপ অফ করো আর ঘুমাও।গুডনাইট
.
ফোন কেটে দিলাম। তাড়াতাড়ি উঠে
ল্যাপটপ অন করে ভিডিওটা প্লে করলাম।
ইশশ এই মুহুর্তে যদি ও আমার পাশে থাকতো
তাহলে আমি ওর কোলে শুয়ে ভিডিওটা
দেখতে পারতাম।
.
সেদিন আম্মুর সাথে বসে বসে সাব্বির কে
নিয়েই কথা বলছিলাম।আম্মুতো তার
জামাইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।আমাদের
ফ্যামিলিতে যতো জামাই আছে তার মধ্যে
পড়াশোনায়,কথাবার্তায়,রূপে গুনে সাব্বির
নাকি সবার উপরে।আর এই নিয়ে আম্মুর
অহংকারের শেষ নেই।আম্মুর কাছ থেকে
সাব্বিরের প্রশংসা শুনে আমার অদ্ভুত
ভালো লাগছিলো।হঠাৎ আমার ফোন বেজে
উঠলো।সাব্বির ফোন করেছে।আমি ফোনটা
রিসিভ করে আম্মুর সামনে থেকে উঠে
এলাম।
- মীম,তুমি কি ঠিক এই মুহুর্তে আমার কথা
ভাবছো বা আমাকে নিয়ে কোন কথা
বলছো?
-কেন?
-না মানে হঠাৎ করে আমার ঠোঁটে কামড়
পড়ছে তাই ভাবলাম
-তার মানে কেউ তোমাকে গালি দিচ্ছে
- কিন্তু একদিন আমাকে তুমি ফোন করে
জিজ্ঞেস করেছিলে আমি তোমার কথা
ভাবছি কিনা বা বলছি কিনা কারণ তোমার
ঠোঁটে কামড় পড়েছিলো
-গালি দিলেও আমার কথা তো মনে
পড়েছিলো তোমার। সেটাই আমার জন্য
অনেক কিছু ছিলো
-তার মানে তুমি আমায় গালি দিয়েছো?
-আমি কেন তোমাকে গালি দিবো?দ্যাখো
তোমার কাছের কেউ হয়তো তোমার কথা
ভাবছে বা তোমার কথা বলছে কারও সাথে
-আমার কাছের কে?আমার কাছের তো
আব্বু,আম্মু আর
-আর?
-তুমি
.
আমি ওর কাছের কেউ?ঠিক এই মুহুর্তে
আমার নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে বেশী
সুখী মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীতে
আমার আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই।আমি বললাম
-আমি তোমার কাছের কেউ?
-নয়তো কি?দূরের কেউ?তুমি আমার বউ না?
বউ?এর থেকে আদুরে সম্বোধন আর কিছুই
হতে পারেনা।সাব্বির এই প্রথমবার আমাকে
বউ ডেকেছে।আমার ইচ্ছে করছে ওকে বলি
"আরেকবার বউ বলে ডাকো প্লিজ"।আমার
ইচ্ছে করছে এক্ষুণি দৌড়ে আমার সোয়ামীর
কাছে চলে যাই।বললাম
-আমি তোমার বউ?জানতাম না তো।
-জানতেনা মানে কি?
-আমি তো ভাবতাম আপনি আমার বড় ভাই।
-কিহ?হেইত,কি বলো বাচ্চাদের মতো
করে?পাগল নাকি?আমি তোমার ভাই হবো
কেন?
-তুমিইতো বলেছিলে।
-কি বলেছিলাম?
-বলোনি আমাকে তোমার ছোট বোনের মতো
মনে হয়?
-ধ্যাত।ওইটা অনেক আগের কথা।
-আমিতো একসময় আপনাকে ভাইয়া
ডাকতাম,তাইনা ভাইয়া?
-হেইত,ভাইয়া ডাকো কেন?আমি তোমার
হাজব্যান্ড না?
-না,আপনি আমার ভাইয়া
-আবার?আপনি তুমি মিক্সড করে বলো
কেন?
-আচ্ছা বাদ দাও।কি করো এখন?
-তোমাকে মিস করি
-সিরিয়াসলি?
-বিশ্বাস হচ্ছেনা?
-এটা বিশ্বাস হওয়ার মতো কথা না।
-আচ্ছা আমি কিভাবে বুঝবো তুমি আমাকে
ভাবছো কিনা,আমাকে মিস করছো কিনা?
-আমিতো তোমাকে মিস করিনা
-মিস করোনা?
-উঁহু
-ওহ আচ্ছা।ডিস্টার্ব করলাম তোমাকে।ফোন
রাখি তাহলে?
-রাখো
-সত্যি রাখবো?
-তোমার ইচ্ছা
-তোমার কি ইচ্ছা?
-সবসময় নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে
হয়।তুমিইতো বলেছিলে
-থাক,তোমার যখন ইচ্ছে নেই তখন আর কি
করা?বাই
-বাই
.
আমি কাঁদছি।কেন কাঁদছি জানিনা।জীবনটা
মাঝে মাঝে আমাদেরকে নিয়ে খেলে।
আমরা বিভ্রান্ত হই নিজেকে নিয়ে,নিজের
ভবিষ্যৎ নিয়ে।মাঝে মাঝে আমরা বেঁচে
থাকার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলি।মাঝে মাঝে
সুখী হওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলি।আসলে
ইচ্ছে হারাইনা,আমরা আমাদের বেঁচে
থাকার আর সুখে থাকার অবলম্বনটাই
হারিয়ে ফেলি।একসময় কোন না কোন ভাবে
আমরা আবার কোন অবলম্বন পাই।বেঁচে
থাকার ইচ্ছেটা তখন কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
সেই অবলম্বনকে ঘিরেই আমাদের সব সুখ।
এইসব কি ভাবছি আমি?যত্তোসব উদ্ভট কথা।
সাব্বিরের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।
এই ছেলেটার অলৌকিক একটা ক্ষমতা
আছে।আমার যখনই ওর সাথে কথা বলতে মন
চায় তখনই ও কল করে।ও কি বুঝতে পারে
আমি যে ওর কথা ভাবছি?
-মীম?
-বলো
-মন খারাপ?
-একটু
-কেন?
-জানিনা
-আমি আসি?
-তুমি আসলে?
-মন ভালো হবে
-তাই?
-হুম,আইসক্রিম খাবা?
-না
-কেন?
-ঠান্ডা লাগবে
-একদিন খেলে কিছুই হবেনা
-এতো রাতে আইসক্রিম কোথায় পাবো?
-আমি নিয়ে আসি?
-না থাক এতো রাতে আসতে হবেনা
- কতো রাত?আটটা বাজে মাত্র
-তুমি না আমাদের বাসায় আসতে লজ্জা
পাও?
-একটু একটু।
-তাহলে?
-তাহলে একটা কাজ করি?আমি বারোটার
পর আসি।তখন তোমার আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে
পড়বে।তুমি আস্তে করে বাসা থেকে বের
হবে তারপর আমরা ছাদে গিয়ে আইসক্রিম
খাবো
-মাথা খারাপ নাকি তোমার?এতো রাতে
ছাদে?ছাদে ভূত আছে
- ভূত বলে কিছু নেই
- আছে
- নেই
- আছে
-আমি বললাম নেই
-আমি বললাম আছে।
-আচ্ছা যাও তোমার কথাই ঠিক।ভূত আছে।
তুমি আসবা কবে?
-কোথায়?
-কোথায় আবার?আমাদের বাসায়
-মাত্র তো এলাম।এখনই চলে যাবো?
-মাত্র মানে?পাঁআআআচ দিন তোমার কাছে
কম লাগছে?
-আরও পাঁচদিন থাকি
-না
- তাহলে একমাস থাকবো।আমি তো চিন্তা
করলাম আমি আর যাবোনা তোমাদের বাসায়
-যাবানা মানে?
-গিয়ে কি করবো?
-তার মানে আমার ধারণাই ঠিক।তুমি
এতোদূর ভেবে ফেলেছো?আমি যে তোমার
প্রতি এতো আগ্রহ দেখাচ্ছি তাতেও তোমার
মন গলেনি?
-মানে?কিসের কথা বলছো?
-তুমি আলাদা হওয়ার কথা ভাবছোনা?
-আলাদা মানে?কিসের আলাদা?হ্যালো,হ্
যালো।
.
কি আজিব!ফোন কেটে দিলো কেন?
ব্যালেন্স শেষ ?আমার ফোন রিসিভ
করছেনা কেন?রেগে গেলো নাকি?কিন্তু
রেগে যাওয়ার মতো তো কিছুই বলিনি।আর
আলাদা মানে কি?
.
আব্বু আম্মু খেতে বসেছে।আমি গালে হাত
দিয়ে বসে আছি।আব্বু বললেন
-কিরে?তুই খাবিনা?
-হ্যাঁ,একটু পর।
.
আম্মু বললেন
-সাব্বির এখনো খায়নি মনে হয়ঃতোমার
মেয়েতো আবার তোমার জামাই না খাওয়া
পর্যন্ত খায়না
-তাই নাকি?বাহ,মেয়েকে দেখে কিছু
শিখতে পারোনা ?জীবনে কখনো আমার
জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করেছো?যখনই
তোমার ক্ষিধে লেগেছে তখনই খেয়ে
ঘুমিয়েছো।
.
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলতে
গেলাম।আমি জানতাম এরকম কিছু হবে তাই
দরজার সামনে সাব্বিরকে দেখে অবাক
হলাম না।তবুও অবাক হওয়ার ভান করে
বললাম
-তুমি?
-আমি।তোমার আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে পড়েছে?
-এতো তাড়াতাড়ি ঘুমায় কেউ?ভেতরে
আসতে চাও?
-চাইতো কিন্তু লজ্জা লাগছে
-এখন কি করবা তাহলে?চলে যাবা?
-চলে যাবো?তুমিও চলো আমার সাথে
.
পেছন থেকে আম্মু এসে সাব্বিরকে দেখে
টাশকি নামক অখাদ্য বস্তু টা খেলেন।মনে
হলো তার মেয়ে জামাই না আকাশের চাঁদ
আমাদের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।
অনেকদিন পর সাব্বিরকে আমাদের বাসায়
আসতে দেখে আম্মু যে কি পরিমাণ খুশি
হয়েছেন তা তার চেহারায় স্পষ্ট ফুটে
উঠেছিলো।তারপর ওকে ঘরে নিয়ে এলেন।
ওকে এতক্ষণ বাইরে দাড় করিয়ে রেখেছি
বলে আমাকে হালকা বকাও দিলেন।
পাত্রপক্ষ পাত্রী দেখতে এলে পাত্রীরা
যেরকম লজ্জা পেয়ে গুটি হয়ে বসে থাকে
সাব্বিরও ওইরকম ভাবে বসে আছে সোফায়।
আব্বু আম্মু ওর সাথে কথা বলছিলেন আর
আমি দরজার পাশে দাড়িয়ে ওর দিকে
তাকিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছি।বেচারা
এতো রাতে হুট করে আসার কোন কারণ
বলতে পারছেনা।আব্বু আম্মু অবশ্য কারণ
জানতেও চাইলেননা।বরং তারা বিশাল খুশি
হয়েছেন।সাব্বির আম্মুকে বললো"আম্মা
আপনি ব্যস্ত হবেননা"।আম্মা?সিরিয়াসলি?
সাব্বির এই প্রথমবার আমার আম্মুকে আম্মা
ডাকলো।তাহলে আব্বুকে কি ডাকবে?
আব্বা?হাহাহা।আমার ইচ্ছে করছে শব্দ
করে হাসি কিন্তু চুপচাপ দাড়িয়ে আছি।আম্মু
সাব্বিরকে খাবার জন্য টেবিলে ডাকলেন।
আমি বললাম "ও খেয়ে এসেছেতো।"
সাব্বির আমার কথা শুনে মুখটা কেমন যেন
কালো করে ফেললো।দেখেই বোঝা যাচ্ছে
ও খেয়ে আসেনি।আম্মু নতুন বেডশীট নিয়ে
আমার রুমের দিকে যাচ্ছিলেন আমি
আম্মুকে আটকে বললাম"বেডশীট চেঞ্জ
করতে হবেনা।ও থাকবেনা।চলে যাবে"।আম্মু
বললেন "চলে যাবে মানে?এতো রাতে কেন
চলে যাবে?" আমি বললাম "ওর নিজের
বিছানা ছাড়া অন্য কোথাও ওর ঘুম আসেনা।
এই জন্যইতো ও আমাদের বাসায় আসেনা"।
সাব্বিরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ও
আমার দিকে কেমন চোখে তাকাচ্ছে।আমি
যে ওকে তাড়িয়ে দিচ্ছি সেটা ও বুঝতে
পেরেছে।বেচারা আজকে সম্ভবত থাকবার
মতলবেই এসেছিলো।বসা থেকে উঠে
দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আব্বুকে
উদ্দেশ্য করে বললো "আব্বু,আমি আসি
তাহলে"।যাক ,আব্বুকে আব্বুই ডেকেছে
,আব্বা ডাকেনি।আব্বু থাকার জন্য ওকে
অনেক রিকোয়েস্ট করছে।যদিও ও না না
করছিলো তবুও মনে মনে নিশ্চয়ই বলছিলো
"আর একটু জোর করেন আব্বু"।আত্মীয়
স্বজনরা যখন আমাদেরকে পাঁচশ বা এক
হাজার টাকার নোট দিতে চায় তখন আমরা
উপর দিয়ে এইরকম "না লাগবেনা " বললেও
মনে মনে বলি "হাতের মধ্যে টাকাটা গুঁজে
দেন না "।
.
আমি ওকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম।
দরজা ধরে দাড়িয়ে আছি আর ও আমার
সামনে দাড়িয়ে।বললো
-আসি তাহলে ?
-আসো
-বাই
-বাই
-গুডনাইট
-গুড নাইট
-টাটা
-টাটা
-আচ্ছা আসি তাহলে?
-আসো
-আল্লাহ হাফেজ
-আল্লাহ হাফেজ
-বাই তাহলে
-বাই
-ইয়ে মানে
-কি?
-ক্যান আই হাগ ইউ?
-হোয়াট?
-আমি কি তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে
পারি?
-জিনা
-কেন?
-আমার ঘরে চলেন তারপর বলছি
.
রুমে গিয়ে আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই
সাব্বির আমাক জড়িয়ে ধরলো।মনে হচ্ছে
যেন আমি কোথাও চলে যাচ্ছি আর ও
আমাকে আটকে রেখেছে।কিন্তু আমিতো
কোথাও যাচ্ছিনা।আমি কিছুই বলছিলামনা।
আমার চোখের কোণ কেন জানি ভিজে
ভিজে আসছিলো।সাব্বির বললো
-আমি অনেক সরি।আর তোমাকে এভয়েড
করবোনা।তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে
যাইয়োনা
-মানে?আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো কেন?
কি বলো?কি হইছে তোমার?
-কিচ্ছু হয়নাই।তুমি আমাকে ছেড়ে যাবানা
এটাই শেষ কথা।তুমি আমার ওয়াইফ আমি
তোমার তোমার হাজব্যান্ড।সারাজীবন
আমরা একসাথে থাকবো
-হ্যাঁ,সেটাতো জানি।কিন্তু হঠাৎ এসব কেন
বলছো?দেখি ছাড়ো।শান্ত হয়ে বসে
আমাকে বলো কি হয়েছে?
-তুমি যেদিন আসছিলা তার আগের রাতের
কথা মনে আছে?
-কিছু একটা স্বপ্ন দেখে তুমি ভয়
পেয়েছিলে
-হ্যাঁ।আমি দেখলাম তুমি আমাকে ছেড়ে
চলে গেছো।তারপর আর একজনকে বিয়ে
করতেছো
-কিহ?মানে কি?
-হ্যাঁ।তুমি বলতেছো আমি নাকি বুইড়া
ব্যাটা।আমার সাথে নাকি তোমার
আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালোনা।তুমি নাকি
সেইম এইজের কাউকে বিয়ে করতে চাইছো
-যার মনে যা,ফাল দিয়ে ওঠে তা।এহহ
,ছেড়ে যাবোই যখন তাহলে বিয়ে করলাম
কেন?
-সেটাইতো।কিন্তু তুমি হঠাৎ করেই আমাকে
এভয়েড করতেছিলা।আমিতো ভয় পেয়ে
গেছিলাম
-এবার বুঝছেন তো কাউকে এভয়েড করলে
তার কেমন লাগে?
- হ্যাঁ
- এখন বসেন এখানে।আমি আপনার জন্য
খাবার নিয়ে আসি।
-তুমি খাইয়ে দিবা
-কেন?আপনার হাত নেই?আপনি কি বাচ্চা?
-হ্যাঁ আমি বাচ্চা
-এহহ বুইড়া মিয়ার বাচ্চা হওয়ার শখ।
.
রাত প্রায় বারোটা বাজে।আমি ওয়াশরুম
থেকে বেরিয়ে দেখি জনাব সাব্বির সাহেব
খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।আমি
বললাম
-আপনার না আমাদের বাসায় ঘুম আসেনা?
এতো রাতে আমাকে নিয়ে আসলেন ওই
বাসা থেকে।এখন ঘুমাচ্ছেন্না কেন?ঘুমান
ঘুমান
-আবার আপনি?
-জি ভাইয়া
-ভাইয়া?
-হ্যাঁ
-একটা কথা বলি?
-বলো
-আমার একটা পুতুল লাগবে?
-পুতুল লাগবে?
-হুম
-একটু অপেক্ষা করেন।
.
আলমারি থেকে পুতুলটাও বের করে
সাব্বিরের কোলে দিলাম।বললাম
-এই নাও পুতুল।সফট আছে।এটাকে জড়িয়ে
ধরে ঘুমালে আরাম পাবে।
-তুমি আমার সব কথা আমাকেই ফিরিয়ে
দিচ্ছো?
-জি।আমি তো বাচ্চা মেয়ে।বাচ্চারা তো
অনুকরণ প্রিয়।বড়রা যা করে তারাও তাই
করে।
-তাহলে আর একটু অনুকরণ করো
-কি?
-এখন…
- এখন কি?
-আমি…
-তুমি?
-তোমাকে…
-আমাকে?
-কানে কানে বলি?
-বলেন
-আমি তোমাকে
-আপনি আমাকে?
-আমি তোমাকে ভালোবাসি
-ও আচ্ছা এই কথা?আমিও আমাকে
ভালোবাসি
-দুষ্টু মেয়ে।তোমার খবরই আছে আজকে।
জাম্বুরার উপকার কত প্রকার ও কী কী
ReplyDeleteসেদিন সন্ধ্যা বেলা (গল্প)
ReplyDeleteVisit More Information
অনলাইনে আয় করার সহজ উপায় জানুন
ReplyDelete