একটি অ-মিমাংসিত গল্পের আড়ালে!
টিং টং।টিং টং।
.
রেনু দরজা খুলে অবাক হয়ে গেল।আজিজ সাহেব
দাঁড়িয়ে।
- আরে! বাবা তুমি!! তুমি আসবে আমাকে জানাবে না
আগে!এসো ভেতরে এসো। (রেনু)
- তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই চলে এলাম।
(আজিজ সাহেব)
- ভালই করেছ।মাকে নিয়ে আসতে।রাসেলের পড়াশুনার
কি খবর? (রেনু)
- ওর আর পড়াশোনা! পড়াশোনা করে নাকি ও? জামাই
বাবাজি কোথায়? (আজিজ সাহেব)
- ও? ও বাসায় থাকে কখন?ডিউটিতে গেছে।১০টার আগে
আসবে না।তুমি এসেছ ভালই হয়েছে। একা একা ভাল
লাগে না। (রেনু)
- ডাক্তার মানুষ তো এমন ব্যস্তই থাকে। (আজিজ সাহেব)
- হুম।পরিবারের জন্য কোনো সময়ই নেই ওর। (রেনু)
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রেনু।
- রেনু, মা আমাকে বিরিয়ানি খাওয়াবি? (আজিজ
সাহেব)
- এখন?তুমি তো আছই। কাল দুপুরে করি? আজ রাতে মুরগির
মাংস আর বাঁধাকপির ভাজি দিয়ে খেয়ে নাও।তুমি
বললে আরও কিছু করি। (রেনু)
- না রে।আমি আজআজ থাকব না।বিরিয়ানি খেয়েই চলে
যাব। (আজিজ সাহেব)
- এ কি কথা বাবা? তুমি আমার বাসায় এসেছ আর রাতে
থাকবে না? এটা কেমন কথা! তোমাকে থাকতেই হবে।
(রেনু)
- দেখ মেয়ের কাণ্ড! ধুর বোকা! পাগলামি করিস না তো।
বললাম তো বিরিয়ানি খেয়ে চলে যাব। (আজিজ সাহেব)
- বাবা! তোমার জামাই শুনলে কি বলবে! দাঁড়াও আমি
তোমার জামাইকে ফোন দিচ্ছি।ওর কথা তুমি ফেলতে
পারবে না। (রেনু)
রেনু ভেতরে গেল ফোন দিতে।কিন্তু মোবাইলে এক
ফোঁটা চার্জ নেই।বন্ধ হয়ে গেছে মোবাইল।রেনু মোবাইল
চার্জে দিয়ে আবার বাবার কাছে গেল।
- বাবা খবরদার বলছি তুমি যাবে না।তুমি বোসো।আমি
বিরিয়ানি রান্না করি। (রেনু)
আজিজ সাহেব হাসলেন কিছু বললেন না।
.
রাত ৯টা।
রেনু বাবার জন্য বিরিয়ানিসহ অনেক কিছু রান্না
করেছে।এতদিন পর বাবা তার বাসায় এসেছে।
- বাবা খাবার দিয়েছি।খেতে এসো। (রেনু)
খাবারের আয়োজন দেখে আজিজ সাহেব হা হয়ে
গেলেন।
- এ কি মা! তুই এতকিছু কেন রান্না করেছিস?আমি তো শুধু
বিরিয়ানি খেতে চেয়েছিলাম। (আজিজ সাহেব)
- বাবা তুমি না! খাও তো।সব তোমার জন্যই তো রান্না
করেছি। (রেনু)
- তুই খাবি না? (আজিজ সাহেব)
- ও আসলে পরে খাব।তুমি খাও বাবা। (রেনু)
আজিজ সাহেব তৃপ্তিভরে খেলেন।
- বাবা তুমি তো কিছুই তো খেলে না।আমি কতকিছু
রান্না করলাম। (রেনু)
- বিরিয়ানি খেয়েছি তো মা।খুব ভাল লাগল। তুই
অনেকদিন বেঁচে থাক। (আজিজ সাহেব)
রেনু আর তার বাবা বসে গল্প করছে।এমন সময় হঠাৎ রেনু
ভেতরে গেল মাকে ফোন দিতে।মোবাইল অন করার প্রায়
সাথে সাথেই রাসেলের ফোন আসল।
- হ্যালো হ্যাঁ রাসেল বল। (রেনু)
- আপু তুমি কোথায়? তোমার মোবাইল বন্ধ ছিল কেন?
(রাসেল)
- আমি বাসায় আর মোবাইলে চার্জ ছিল না।কি হয়েছে?
তুই কাঁদছিস নাকি? (রেনু)
- তুমি এখনই বাসায় চলে আস।একটা খারাপ খবর আছে।
(রাসেল)
- কি খারাপ খবর? কি বলছিস তুই? (রেনু)
- আপু বাবা... বাবা আর নেই। (রাসেল)
- রাসেল! এসব কি বলছিস? মাকে ফোন দে। (রেনু)
- হ্যালো (শামীমা বেগম)
- হ্যালো মা? রাসেল এসব কি বলছে? ফাজলামোর একটা
সীমা আছে।বাবা নাকি নেই! বাবা তো আমার এখানে....
- রাসেল ঠিকই বলছে।আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ করে তোর
বাবা... (শামীমা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়লেন)
- দুপুরে ঘুমাচ্ছিল মানুষটা।সন্ধ্যা হয়ে আসছে তবুও উঠছে না দেখে আমি ডাক দিতে গিয়ে দেখি তোর বাবা আর নেই। (শামীমা বেগম)
- মা! (রেনু)
শামীমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠেই বললেন,
"মানুষটা আজ সকালে বিরিয়ানি খেতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম কাল খাওয়াব।মানুষটা যাওয়ার আগে বিরিয়ানি খেয়ে যেতে পারল না।"
মায়ের কথা শুনে রেনু হতবাক হয়ে গেল।রেনু কিছুই বুঝতে পারছে না। ওরা সবাই মজা করছে না তো তার সাথে!
রেনু হন্তদন্ত হয়ে বসার ঘরে বাবার কাছে গেল।কিন্তু সোফাটা খালি। দু'মিনিট আগেই তো এখানে বাবা বসেছিল!
Comments
Post a Comment