ভালোবাসার বন্ধন

-- জয়িতা আমার কথা শোন,প্লিজ যেও না।
রিফাতের হাত
থেকে বাচার জন্য আমি প্রাণপনে ছুটছি।কেন
জানি
মনে হচ্ছে ও আমাকে ধরতে পারলে মেরে
ফেলবে।আমি আর ছুটতে পারছি না।ধপ করে
বসে
পড়লাম।ও আমার কাছে চলে এসেছে।
--রিফাত আমাকে মেরোনা প্লিজ,
আমি ভয়ার্তস্বরে বললাম।
-- জয়ী আমার কথা শোন,আমি তোমাকে কেন
মারবো?
সত্যিই তো।ওকে আমি কেন ভয় পাচ্ছি।ও তো
আমাকে ভালোবাসে।আর আমিও।আমি ওর
চোখের দিকে তাকালাম।কি নিষ্পাপ নিরীহ
লাগছে
ওকে!!
ও আমার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিল।আমি ওর
হাতটা ছুতে গেলাম।কিন্তু তার আগেই ও
হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
.
--জয়ী ভয় পেয়েছ নাকি?নাও পানি খাও।কি
হয়েছে?
ইশানের কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম।এতক্ষণ
তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম।
-- তুমি কখন উঠলে? না ভয় পায়নি। তুমি শুয়ে
পড়।
-- আসো মাথায় হাত বুলিয়ে দিই।
-- লাগবেনা, আমি ওয়াশরুমে যাবো।
-- আচ্ছা যাও, ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে
গেছো, চোখে মুখে পানি দিয়ে এসো।
আমি ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে বসে
বসে কাঁদছি। অনেকক্ষণ পর ইশান দরজা
ধাক্কাচ্ছে
-- জয়িতা বেশী ভিজো না ঠান্ডা লাগবে
কিন্তু।
আমি বাইরে চলে এলাম
-- তুমি এখনো না ঘুমিয়ে জেগে আছো
কেনো?
(আমি)
-- ঘুম আসছেনা। তুমি বসো আমি তোমার মাথা
মুছে চুল আচড়ে দেই।
.
ইশানের সাথে বছরখানেক হল আমার বিয়ে
হয়েছে। মানুষ যে কতটা নিরীহ হতে পারে
সেটা ওকে না দেখলে বুঝতাম না।আমার
সাথে এডজাস্ট করার অনেক চেষ্টা করে।
কিছুটা মানিয়েও নিয়েছি আমি।
আমার অনেক অসহ্য ও সহ্য করে।তবুও ওর আমার
প্রতি কোন অভিযোগ বা রাগ নেই।
রিফাতকে নিয়ে এই দুঃস্বপ্নটা প্রায়ই দেখি।
ইশান আমাকে ডক্টর দেখাতে চায়।কিন্তু ও
তো জানে না এই রোগ ডক্টর সারাতে
পারবেনা। সেদিনের কথা
ভূলতে পারিনা যেদিন রিফাত আমাকে
বলেছিল,
'জয়ী',
"প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না। অনেক
ভালোবাসি তোমাকে।"
আমার থেকে বেশী ও কেঁদেছিল।কিন্তু আমি
অসহায় ছিলাম।হাত পা বাঁধা ছিল আমার।
পরিবারের কথা
ভেবে বিয়েটা করতে হয়।
আমার বিয়ের পর থেকে ওর টিকিটাও
দেখিনি।অনেক
খোঁজ করেছি কিন্তু পায়নি। বেঁচে আছে
নাকি মরে গেছে সেটাও জানিনা। নিজেকে
অনেক অপরাধী
মনে হয়। ওর স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায়। প্রচণ্ড
ডিপ্রেশনে ভুগি আমি।
একদিকে রিফাতের ভালোবাসাকে গলা
টিপে মেরে ফেলেছি অন্যদিকে আমার
স্বামী
ইশানকে তার প্রাপ্য ভালোবাসাটুকুও দিতে
পারিনা।মাঝে
মাঝে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করে।
কিন্তু আর কত নিষ্ঠুর আর স্বার্থপর হব আমি?
আমার ভেতরে যে সত্ত্বাটা বেড়ে উঠছে তার
জন্য তো আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। সে
তো কোন দোষ করেনি।
.
তিন বছর পর,,
খুলনা তে একটা শপিং মলে দাড়িয়ে আছি।
চিরচেনা
একটা কণ্ঠ শুনে থমকে গেলাম।
--কেমন আছ জয়ী?
--রিফাত তুমি!!! ওকে দেখে প্রথমে আমি কথা
বলার
ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম,পরে অনেকক্ষণ।
কথা হল
ওর সাথে।বেশ হাসিমুখে কথা বলছিল আমার
সাথে।
আমি চুপচাপ শুনছিলাম।
--জয়ী তুমি হয়ত ভাবছ আমি এখনও তোমাকে
ভুল
বুঝি।না, তোমার তো কোন দোষ ছিল না
প্রথমে অনেক কষ্ট পেতাম। তোমাকে খারাপ
ভাবতাম। কিন্তু শান্তা আমার জীবনে আসার
পর ভূলটা
ভেঙেছে। ও আমাকে বাস্তবতা শিখিয়েছে।
অনেক ভালো মেয়ে। ওকে বিয়ে করে
অনেক সুখে আছি।
রিফাত ওর স্ত্রী শান্তার সাথে আমার পরিচয়
করিয়ে
দিল।
--এটা তোমার মেয়ে নাকি?অনেক কিউট তো।
--হুম। আমার মেয়ে। মিথি।
--তারপর,তোমার হাজব্যান্ডের কি খবর?তাকে
তো দেখছি না।
ওর প্রশ্নটা শুনে ওখান থেকে চলে এলাম।কারণ
এর জবাব আমার কাছে নেই।
মিথির বয়স যখন দেড় বছর তখন ইশানকে ছেড়ে
ওকে নিয়ে এখানে চলে আসি। ও বাধা
দেয়নি।শুধু
বলেছিল,"আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ো না
কখনো। তোমার জন্য আমার দরজা চিরদিন
খোলা থাকবে।যখন মন করবে চলে এসো।
ভালো
থেকো।"
এখানে আসার পর মাঝেমধ্যে যোগাযোগ হত।
কিন্তু এখন আর হয়না।আমিই করিনা।।
.
শুধু নিজের কানে শুনলে অবিশ্বাস করতাম হয়ত।
কিন্তু
নিজের চোখেই তো দেখলাম রিফাত ওর
স্ত্রীকে নিয়ে বেশ সুখেই আছে।
আর আমি?
কতবড় ভূল করেছি!!নিজের স্বামীর সাথে এত
অন্যায় করলাম?
ভয়ে ভয়ে রিসিভারটা তুললাম।অনেকদিন পর
ওর সাথে
কথা বলব।
-- হ্যালো....
--হ্যালো জয়িতা? আমি জানতাম তুমি ফোন
দেবে।
--ইশান আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
আমাকে যা শাস্তি দেবে মেনে নেব। কিন্তূ
ক্ষমা কর।
--এই তুমি কাঁদছ কেন? হ্যাঁ শাস্তি দেবো তো।
তোমাকে অনেক বড় শাস্তি দেব।
--কি শাস্তি দেবে? আচ্ছা তুমি কি আবার
বিয়ে করেছ নাকি?
--নারে পাগলি। আমার বউ মেয়ে থাকতে
আবার বিয়ে করব কেন?
মনে মনে ভাবি মানুষটা এত বেশী ভালো
কেন?
সত্যিই অনেক অদ্ভূত!! আমাকে নিঃস্বার্থ
ভাবে ভালোবাসে আর ওকে শুধু কষ্টই
দিয়েছি। নাহ, আর কষ্ট দেবোনা, ফিরে যাবো
আমার ইশানের কাছে।
.
--মামণী আমরা কোথায় যাচ্ছি?
--সিলেট এ যাচ্ছি।
--কেন?কার কাছে?
--তোমার বাবার কাছে।
-কেন মামনী? বাবা তো খুব খারাপ,পঁচা।
--এভাবে বলতে হয় না,মা। তোমার বাবা অনেক
ভাল।
তোমার মামনী অনেক খারাপ। তোমাকে
এতদিন
তোমার বাবার থেকে দূরে রেখেছে।তোমার
বাবাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।আমাকে ক্ষমা
করে
দিস মা।
-না।তুমি খারাপ না। তুমি অনেক ভাল।
-তোমার বাবা আরো ভাল।তোমার বাবার
কাছে
যেতে ইচ্ছে করে না?
-করে তো।
-আজ থেকে আমি,তোমার বাবা,তুমি একসাথে
থাকবো, সারাজীবন।
ট্রেন থেকে নেমে ইশানকে খুঁজে
পেতে বেশী বেগ পেতে হলো না। কাছাকাছি
ছিল ও।
অনেক বদলে গেছে ও। অনেক রোগা
লাগছে।চোখে চশমা পরেছে।মুখে খোচা
খোচা দাড়ি।
-মিথি,মামনী ঐ দেখ তোমার বাবা।
ইশান হাত বাড়িয়ে আছে। মিথি ছুটে গেলো
ওর কাছে। বাবা মেয়েকে কাছে পেয়ে
জড়িয়ে ধরল। মনে
হচ্ছে আকাশের চাঁদ হাতে পাইছে। বাবা
মেয়ে
দুজনেই কাঁদছে। কিন্তু এটা সুখের কান্না।আমি
পাশে
দাড়িয়ে দেখছি আর ভাবছি এই মুহূর্তে
যত সুখ অনুভব করছি এটার তুলনায় এতদিনের কষ্ট
কিছুই ছিল না। নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে
সুখী ব্যক্তি মনে হচ্ছে এখন।
সুখ নামক প্রজাপতিটা আশেপাশেই ঘোরাঘুরি
করছিল এতদিন। কিন্তু হাতটা বাড়িয়ে কখনো
ছুয়ে দেখার
চেষ্টা করিনি।আজ সেটা ধরা দিয়েছে।
কখনো
ছেড়ে দেব না।ভালোবাসা দিয়ে আগলে
রাখব
সারাজীবন।।

Comments

Popular posts from this blog

একজন পতিতার প্রেমের গল্প

What are the benefits of exercising in the morning?

Know the right time to exercise