ভালোবাসার আলিঙ্গন

আসবে একটু।
'
আজকে গরমটা একটু বেশীই।ফ্যানের বাতাসটাও কেমন যেন গরমের কাছে হার মেনে গেলো।আমি আরও একবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকালাম।সময় প্রায় হয়ে গেছে।কিন্তু মেয়েটা এখনও আসছে না কেন।একটু ভেতরের দিকে দেখা যাক।
'
আশেপাশে অনেককেই দেখতে পেলাম।এত মানুষের মাঝে ওকে কিভাবে খুজে পাবো।এদিকে ওর ফোনটাও বন্ধ পাচ্ছি।আমি ইতির ক্লাসের দিকে এগুতেই দেখি মেয়েটা বেশ ছায়াওয়ালা গাছের নিচে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।দূর থেকে ওর হাসি মাখা মুখটা দেখতে বেশ লাগছে।অনেকদিন পর দেখা তো তাই একটু বেশীই ভাললাগা কাজ করছে।
আমি ওদের সামনে গিয়ে ইতির দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আসবে একটু।
আমার কথায় সবাই মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো।তবে ইতির তাকানোটায় কেমন যেন অন্য রকম আভা দেখতে পেলাম।আসলে ও হয়তো আমাকে এসময় এখানে কোনভাবেই আশা করেনি।আমি ইতির দিকে তাকিয়ে আবারও বললাম,
-আসবে একটু।
আমার কথায় ইতি মাথা নাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। ওদের থেকে বিদায় নিয়ে আমার পাশে এসে বললো,
-হুম চলো।
ইতির কথায় আমি ওর সাথে হাটতে শুরু করলাম।আসলে এতদিন পর এভাবে আমাকে এখানে দেখে ও বেশ কিছুটা অবাক হয়েছে।ইতির সাথে হাটতে বেশ লাগছে।চারিদিকের নীরবতা ভেঙে আমি বললাম,
-কেমন আছো?
-ভাল।তুমি?
-এইতো চলছে।
-হঠাৎ এতদিন পর এখানে?
-কেন,আসতে মানা।
-কথা পেচানোর অভ্যাসটা রয়েই গেছে তোমার।
-তুমি কিন্তু আগের থেকে অনেকটাই সুন্দরী হয়ে গেছো।
-কোথায় যাচ্ছি?
-এটুকু শিওর থাকো,তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি না।
আমার কথায় ইতি আর কিছু বললো না।ওর কলেজ থেকে বের হয়ে রিক্সা নিলাম।অনেকদিন পর ইতির সাথে কাছাকাছি বসতে পেরে বেশ লাগছে।ওর চুলের গন্ধ নাক ডুবিয়ে পেতে ইচ্ছে করছে।অনেক দিন ওর হাত ধরে রিক্সায় বসা হয়না।আজ ইচ্ছে হলেও কেন যেন ওর হাতটা ধরতে পারছি না।
তবে আমার ইচ্ছেটা হয়তো ইতি বেশ ভালভাবেই বুঝে গেলো।আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-হাত ধরবে?
-অন্য কেও রাগ করবে না তো।
আমার কথায় ইতি কিছু বললো না।আমার হাতটা শক্ত করেই ধরলো।আমি এবার ইতির হাতটা কাছে টেনে একটা চুমু একে দিলাম।হয়তো মিষ্টি নয়তো তেতো।
"
রিক্সাটা এসে থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে।আমি ভাড়াটা দিয়ে ইতিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।এসির বাতাসে শরীরটা একদম ঠান্ডা হয়ে গেলো।
এই সময় রেস্টুরেন্ট বেশ ফাকাই থাকে।আমি ইতিকে নিয়ে কোনার এক টেবিলে গিয়ে বসলাম।আমরা বসতেই ওয়েটার কেকটা টেবিলে দিয়ে গেলো।সাথে মোববাতি।
আজ ইতির জন্মদিন।তাই সবকিছু আগে থেকে প্লান করে রেখেছিলাম।আমি ইতির মুখের দিকে তাকাতেই দেখি মেয়েটা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।আমি মোমগুলা জ্বালিয়ে ইতির পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলাম।ওর হাতে চাকুটা দিয়ে বললাম,
-কেকটা কাটো?
-তোমার মনে ছিল?
আমি ইতির প্রশ্নের কোন উত্তর দিলাম না।ওর হাত ধরে কেকটা কাটতে বললাম।ইতি কোন কিছু না বলে কেকটা কাটতেই আমার সাথে আশেপাশের সবাই,মানে রেস্টুরেন্টের লোকগুলা একসাথে বলে উঠলো,
-হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ
-হ্যাপি বার্থ ডে ডিয়ার ইতি
-হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।
কেকটা কেটে আমি ইতিকে খায়িয়ে দিতেই ওর চোখের পানি গড়িয়ে নিচে পড়লো। আমি ওর চোখের পানি মুছে দিতেই ইতি আমাকে বেশ শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলো।আজকে আমার ভাল লাগার কথা।কিন্তু কেমন যেন ভাল লাগাটা খুজে পাচ্ছি না।এটাই কি আমাদের শেষ দেখা।
"
ইতির সাথে আমার রিলেশন ছিল বেশ কিছু দিন।আমি থাকি সিরাজগঞ্জ আর ইতি কুমিল্লা,নোয়াখালী তে।বেশ চলছিল আমাদের।কিন্তু সন্দেহ আমাদের আর একসাথে থাকতে দেয়নি।তুচ্ছ কারনেই ব্রেকআপ হয়েছিল আমাদের।কিন্তু ইতিকে আমি ভুলতে পারিনি। তাই গতকালই চলে এসেছিলাম।এখানেই একটা হোটেলে উঠেছি।ইতির জন্মদিনে ওকে সারপ্রাইজ দেবো বলে ওকে কিছু জানাইনি।
"
ইতিকে রেখে কেমন যেন আসতে ইচ্ছে করছিল না।ও কি আমাকে এখনও ভালবাসে।ভালবাসলে অন্তত একবার আটকাতো আমাকে।আমি আর দেড়ি করলাম না।বাসে উঠে পড়লাম।যেতে হবে তো।শুধু শুধু মিথ্যে মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে আর কষ্ট পেতে চাই না।
ইতিকে ওদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে এসেছি।আসার সময় ওর চোখের কোনে জমে থাকা পানিটুকু আমার চোখ এড়ায়নি।
'
বাসটা ছাড়তেই মেসেজ টোনটা বেজে উঠলো।ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আমি মেসেজটা সিন করলাম।ইতির মেসেজ। খুব ছোট্ট করে লেখা,-ভালবাসবে আমায় এভাবে সারাটাজীবন।
আমি আর দেড়ি করলাম না।ইতির মেসেজের রিপ্লেটা দিয়েই দিলাম।এভাবেই ভালবাসবো সারাাটাজীবন।
রিপ্লেটা দিয়ে আমি বাসের সিটে গা এলিয়ে দিলাম।বেশ লাগছে।হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার মাঝে যত আনন্দ পাওয়া যায় তা অন্য কিছুতে পাওয়া সম্ভব না।আমি মেসেজটা আবারও পড়লাম।
-ভালবাসবে আমায় এভাবে সারাটাজীবন।
-এভাবেই ভালবাসবো সারাটাজীবন।
-------------------------------------
(শুভ জন্মদিন)

Comments

Popular posts from this blog

একজন পতিতার প্রেমের গল্প

What are the benefits of exercising in the morning?

Know the right time to exercise