ভালোবাসার শেষ ইচ্ছা
এই সজল উঠ,উঠ।পানি ঢাললাম কিন্তু উঠ বলছি।(সুমু)
--কি হয়েছে?? এত রাতে ডাকতেছিস কেন?যা তো ডিস্টার্ব করিস না তো ঘুমাতে দে।
আর কি পানি আমার মুখে।লাফিয়ে উঠে এইটা কি করলি??পানি দিলি কেন??(রাগ করে)
--তুই উঠস না কেন।এতক্ষণ ধরে ডাকতেছি।চল আইসক্রিম খেতে যাব।(সুমু)
--এতরাতে।।কয়টা বাজে জানিস?? রাত ১২টা।এতরাতে আইসক্রিম তোর জন্য বসে আছে।
তুই কি যাবি কিনা বল নাকি অন্য ব্যাবস্থা করব??(সুমু)
--যাব না যা করার কর বলতেই আমার গলা চেপে ধরেছে।কি করছিস ছাড়।লাগছেতো ছাড়।
--আগে বল যাবি কিনা বল???
--ওকে যাব,ছাড়।
--সত্যি বলছিসতো??নাহলে কিন্তু...
--সত্যি বলছি যাব,ছাড় এইবার??
--যা ছেড়ে দিলাম।এখন চল তাড়াতাড়ি?
--শান্তিতে ঘুমাব তাও পারি না।কিসের জন্য যে আম্মু এই মেয়ের বাসার পাশে বাড়ি করল।আমার জীবনটাই শেষ।বাসায়টা মনে হয় ওর যখন তখন আসে।আম্মু আব্বুও কিছু বলে। কি বলবে তাদের সামনে তো উনি ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।
--কিছু বললি তুই??
--না কি বলব।আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে তোকে কিছু বলব।চল..
বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটছি দুজনে
--কি যে ভুতে ধরে তোরে মাঝেমাঝে।এতো রাতে কোন দোকান খোলা থাকবে না আইসক্রিমওয়ালা তো দূরের কথা।
বাসা থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ খোঁজার পর একটা দোকান খোলা পেয়েছিলাম।আর এক মিনিট দেরি হলেই পাওয়া যেত।আর যে মেয়ে।না পেলে সারা রাত ঘুরাইতো নিশ্চিত।
সুমু হল আমাদের পাশের বাসার আতাউর আংকেল আর মেয়ে। ওর পুরো নাম হল জান্নাত জাহান সুমাইয়া।আমি ওকে সুমু বলি মাঝেমধ্যে জানু বলি মজা করে। তাছাড়া ওর আরেক নাম আছে মিষ্টি।এই নামটা ওর কাছেই মানুষই জানে শুধু। ওহ আমি সজল।আগেই শুনেছেন। আতাউর আংকেল হলেন আমার বাবার ছোট বেলার বন্ধু।সেই হিসেবে তাদের সাথেই বাড়ি করা।আমি আর সুমু একসাথেই বড় হয়েছি।আমরা এক ক্লাসে পড়ি মানে আমি আর সুমু ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে কিন্তু আমাদের কলেজ আলাদা।ওর শর্ত একটা তাহল ওকে কলেজ থেকে আমাকেই নিয়ে আসতে হবে।জানেন একদিন বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতে ওকে আনতে যেতে ভুলে যাই। বাসায় এসে পরি।সন্ধ্যায় আন্টি আসে বলে ও বলে বাসায় আসে নি।আমার আর বুঝতে যে কিসের জন্য আসেনি।আমি তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাই আন্টিকে বললাম আমি ওকে নিয়ে আসতেছি।আপনি চিন্তা করবেন না।
বাসায় থেকে বের হয়েই একটা রিকশা নিয়ে সোজা ওর কলেজের দিকে যাই।গিয়ে দেখি পাগলীটা দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখতেই এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।বুঝতে পারলাম ভয় পেয়েছে।আমারই ভুল হয়েছে জানি।যাক যা হবার হয়েছে এখন বাসায় নিয়ে যেতে হবে আংকেল আন্টি চিন্তা করছে ওর জন্য।
--ওই ছাড় সবাই দেখছে।কি ভাববে??
--যা ভাবার ভাবুক(সুমু)
--বাসায় যাবি না নাকি এইভাবে ধরে দাঁড়িয়ে থাকবি।অবশ্য আমার কিন্তু ভালই লাগছে।
-- শয়তান (ছেড়ে দিয়ে)তুই কথা বলবি না আমার সাথে।(সুমু)
--সরি ভুল হয়ে গেছে।আর কোন দিন ভুল হবে না।বাসায় চল তাড়াতাড়ি আংকেল আন্টি চিন্তা করছে অনেক।
রিকশায় উঠে বাসার দিকে যেতে লাগলাম।
সুমাইয়া আমার হাত অনেক শক্ত করে ধরে আছে।
বাসার কাছে এসে পড়েছি ম্যাডাম।হাতটা ছেড়ে দেন আর চলেন বাসায় নিয়ে যাই আপনাকে।
বাসায় ঢুকতেই আন্টি বলে উঠল সুমুকে কই ছিলি তুই মা।
এই কাজ সারছে যদি বলে দেয় আমার জন্য এইসব করছে তাহলে আমি শেষ।(মনে মনে)
---আম্মু আমি আমি অর্নিলার বাসায় গিয়েছিলাম। দরকার ছিল।(সুমু)
তো গিয়েছিস ঠিক আছে।একটা ফোন দিবি তো। আচ্ছা চল আমি খাবার টেবিলে দিচ্ছি তুই ফ্রেস হয়ে আয়।সজল তুমিও খেয়ে যাবে(আন্টি)
না আন্টি আমি বাসায় গিয়ে খাব। আম্মু অপেক্ষা করছে।(আমি)
আমি বলছি তোমার বাসায়।থাকো তুমি আমি আসতেছি।(আন্টি)
সুমু চলে গেল।রাগ করছে।রাগটা ভাঙ্গাতে হবে। কিন্তু যে অবস্থা দেখতেছি কথা বলতে গেলে কি যে করবো ওই জানে। আজকে তো কেন আগামী এক সপ্তাহ কথা বলবো নাকি সন্দেহ আছে।
আমি টিভি দেখতেছি। আন্টি খাবার টেবিলে রেখে দিয়ে আমাদের ডাক দিলেন। আমি তো চলে আসছি কিন্তু মহারানীর কোন খোঁজ নেই।
ও আসতেই আমার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল ওর দিকে।কালো রঙের ড্রেস কপালে ছোট একটা টিপ সাথে চোখে হালকা করে কাজল দিয়েছে আর ভেজা চুল। এতোটা সুন্দর লাগছে ওকে যে চোখটাই সরাতে পারছি না। পাশে যে আন্টি আছে সেদিকে খেয়াল নেই।ও আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। অবশ্য ওকে আরও সুন্দর লাগছে। খেতে বসতেই আমার পায়ে নখের চাপ অনুভব করতে লাগলাম। এইটা ওরই কাজ।
আস্তে আস্তে বেশি চাপ দিতে লাগল। এখন ব্যাথা লাগতেছে। আন্টি আছে বলে কিছু বলতে পারছি না। আন্টি না চিল্লাচিল্লি শুরু কইরা দিতাম।আর এই সুযোগে নিজের রাগ আমার উপর ঢালতেছে আর মনে মনে বলতেছে আমাকে দাঁড়া করিয়ে রাখার শাস্তি তোর।
যতই পা সরিয়ে আনতে চাচ্ছি আরো বেশি করে নখ দিয়ে পা চেপে ধরছে। এদিকে ব্যাথায় আমি মইরা গেলাম।আজ বুঝতে পারলাম মেয়েরা নখ রাখে কেন। একটা উপায় তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে পড় নাহলে তোর পা শেষ আজকে। খেয়ে উঠে পড়লাম।পা চামড়া তুলে ফেলেছে একটু। বাসায় আসার পরেই সে এসে হাজির সাথে ওষুধ আর একটা টিফিন বক্স নিয়ে। এসেই আমার রুমের দরজা লক করে পায়ে মলমটা লাগিয়ে দিতে লাগল।পা ধরতে না দেওয়ায় এমন ভাবে তাকাল যে ওর কাছে ছুরি থাকলে পেটে ঢুকিয়ে দিত। নিজের হাতে পায়েস রান্না করে আনছে। কারণ ও জানতো আমি পায়েস অনেক পছন্দ করি। নিজের হাতে সেদিন খাইয়ে দিয়েছিল আজকেও তাই করছে কিন্তু কারণ অন্য। এইটা আমার শেষ পায়েস খাওয়া তোর হাতে তোর রান্না করা। আমার কাছে হয়তো বেশি সময় নেই। ডাক্তার এক সপ্তাহের কথা বলেছিল বেঁচে থাকার সময়। হ্যাঁ আমার ব্লাড ক্যান্সার।।আর কিছু করার নেই। এখন শুধু মৃত্যুর প্রহর গুনছি। সাতদিন শেষ হয়ে আজ আট দিন চলছে। আল্লাহ হয়তো আমার আর এই একটা দিন বেশি দিয়েছিলেন। কিছু মানুষের কপালে সব থাকে না।সুমু আমাকে অনেক ভালোবাসতো। তবে পাগলামো একটু বেশি করতো।ওর ইচ্ছে ছিল আমাদের বিয়ের পর আমাদের টুইনস বেবি হবে। আমিও অনেক ইচ্ছে ছিল পাগলীটার সাথেই বৃদ্ধ হবো আমাদের রুমের বারান্দায় বসে জোৎস্না রাতে চাঁদ দেখবো। আজ ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হয়ে রয়ে গেল।
আপু চলো জয় ভাইয়া মানে তোমার বর এসে পড়ছে। আপু তুমি কান্না করতেছো। মনে নেই ভাইয়া চলে যাওয়ার আগে বলছিল না কান্না করবে না ওর কথা ভেবে। তাহলে ও কষ্ট ভাবে। তুমি তাড়াতাড়ি এসো আমরা বসে আছি রুমে। (সানজিদা)
দেখসিস সানজিদা তোর ছোট্ট বোন আজ বড় হয়ে গেছে সব কিছু সামলাতে শিখছে।।আজ ও অনেক খুশি কিন্তু আজও ওর মন কারণ ওর ইচ্ছে ছিল আমি ওর ভাবী হয়ে আসবো।ওর ইচ্ছেটাও আমাদের ইচ্ছেটার মতো অপূর্ণ রয়ে গেল । কিন্তু বুঝতে দেয় না। সজল আজ পাঁচ বছর হয়েছে তুই চলে গিয়েছিস।জানিস তুই চলে যাওয়ার পর জয় আমাকে তোর মতো ভালোবাসে। আমার অনেক যত্ন নেয়।ও তোর মতো। জানিস আজকে আমার বিয়ে জয়ের সাথে।জানোস তোকে আজ অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তুই অনেক দূরে চলে গেছিস। আচ্ছা তুই কি আমাকে দেখতে পারোস?জানি না পারোস কিনা।তোর শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করতে যাচ্ছি।তুই বলছিলি না এক ভালো ছেলেকে পছন্দ করে বিয়ে করতে যাকে আমি ভালবাসবো।
কিন্তু তুই আমার প্রথম ভালোবাসা। তুই থাকবি।
আপু তুমি এখন কান্না করছো। তুমি কান্না করলে ভাইয়ারও কষ্ট পাবে।
ভাইয়া বলছিল না চলে যাওয়ার আগে কোনো যদি অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে মনে তাহলে ভাইয়া সুখেই আছে আর ভাইয়া সুখে থাকবে তখনই যখন আমরা তার জন্য চোখের পানি না ফেলবো।(সানজিদা)
হুম।(সুমু)
চলো তো জয় ভাইয়াকে আর কত অপেক্ষা করাবা।আর অপেক্ষা করলে পাগল হয়ে যাবে।
দুইজনেই হেসে উঠলো।
জানিস সানজিদা আজকে মনে হইতেছে সজল আমাদের আশেপাশেই আছে।(সুমু)
হুম। ভাইয়া সব সময় আমাদের সাথেই আছে।এখন চলো। দেরি হয়ে যাচ্ছে।(সানজিদা )
হুম চল।(সুমু)
পিছনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম ভালো থাকিস যেখানেই থাকিস।
যাওয়ার আগে আমার মতো চাঁদের দিকে হয়তো সুমু আপু এইটাই বলল ভালো থাকিস যেখানেই থাকিস।
--কি হয়েছে?? এত রাতে ডাকতেছিস কেন?যা তো ডিস্টার্ব করিস না তো ঘুমাতে দে।
আর কি পানি আমার মুখে।লাফিয়ে উঠে এইটা কি করলি??পানি দিলি কেন??(রাগ করে)
--তুই উঠস না কেন।এতক্ষণ ধরে ডাকতেছি।চল আইসক্রিম খেতে যাব।(সুমু)
--এতরাতে।।কয়টা বাজে জানিস?? রাত ১২টা।এতরাতে আইসক্রিম তোর জন্য বসে আছে।
তুই কি যাবি কিনা বল নাকি অন্য ব্যাবস্থা করব??(সুমু)
--যাব না যা করার কর বলতেই আমার গলা চেপে ধরেছে।কি করছিস ছাড়।লাগছেতো ছাড়।
--আগে বল যাবি কিনা বল???
--ওকে যাব,ছাড়।
--সত্যি বলছিসতো??নাহলে কিন্তু...
--সত্যি বলছি যাব,ছাড় এইবার??
--যা ছেড়ে দিলাম।এখন চল তাড়াতাড়ি?
--শান্তিতে ঘুমাব তাও পারি না।কিসের জন্য যে আম্মু এই মেয়ের বাসার পাশে বাড়ি করল।আমার জীবনটাই শেষ।বাসায়টা মনে হয় ওর যখন তখন আসে।আম্মু আব্বুও কিছু বলে। কি বলবে তাদের সামনে তো উনি ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।
--কিছু বললি তুই??
--না কি বলব।আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে তোকে কিছু বলব।চল..
বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটছি দুজনে
--কি যে ভুতে ধরে তোরে মাঝেমাঝে।এতো রাতে কোন দোকান খোলা থাকবে না আইসক্রিমওয়ালা তো দূরের কথা।
বাসা থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ খোঁজার পর একটা দোকান খোলা পেয়েছিলাম।আর এক মিনিট দেরি হলেই পাওয়া যেত।আর যে মেয়ে।না পেলে সারা রাত ঘুরাইতো নিশ্চিত।
সুমু হল আমাদের পাশের বাসার আতাউর আংকেল আর মেয়ে। ওর পুরো নাম হল জান্নাত জাহান সুমাইয়া।আমি ওকে সুমু বলি মাঝেমধ্যে জানু বলি মজা করে। তাছাড়া ওর আরেক নাম আছে মিষ্টি।এই নামটা ওর কাছেই মানুষই জানে শুধু। ওহ আমি সজল।আগেই শুনেছেন। আতাউর আংকেল হলেন আমার বাবার ছোট বেলার বন্ধু।সেই হিসেবে তাদের সাথেই বাড়ি করা।আমি আর সুমু একসাথেই বড় হয়েছি।আমরা এক ক্লাসে পড়ি মানে আমি আর সুমু ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে কিন্তু আমাদের কলেজ আলাদা।ওর শর্ত একটা তাহল ওকে কলেজ থেকে আমাকেই নিয়ে আসতে হবে।জানেন একদিন বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতে ওকে আনতে যেতে ভুলে যাই। বাসায় এসে পরি।সন্ধ্যায় আন্টি আসে বলে ও বলে বাসায় আসে নি।আমার আর বুঝতে যে কিসের জন্য আসেনি।আমি তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাই আন্টিকে বললাম আমি ওকে নিয়ে আসতেছি।আপনি চিন্তা করবেন না।
বাসায় থেকে বের হয়েই একটা রিকশা নিয়ে সোজা ওর কলেজের দিকে যাই।গিয়ে দেখি পাগলীটা দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখতেই এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।বুঝতে পারলাম ভয় পেয়েছে।আমারই ভুল হয়েছে জানি।যাক যা হবার হয়েছে এখন বাসায় নিয়ে যেতে হবে আংকেল আন্টি চিন্তা করছে ওর জন্য।
--ওই ছাড় সবাই দেখছে।কি ভাববে??
--যা ভাবার ভাবুক(সুমু)
--বাসায় যাবি না নাকি এইভাবে ধরে দাঁড়িয়ে থাকবি।অবশ্য আমার কিন্তু ভালই লাগছে।
-- শয়তান (ছেড়ে দিয়ে)তুই কথা বলবি না আমার সাথে।(সুমু)
--সরি ভুল হয়ে গেছে।আর কোন দিন ভুল হবে না।বাসায় চল তাড়াতাড়ি আংকেল আন্টি চিন্তা করছে অনেক।
রিকশায় উঠে বাসার দিকে যেতে লাগলাম।
সুমাইয়া আমার হাত অনেক শক্ত করে ধরে আছে।
বাসার কাছে এসে পড়েছি ম্যাডাম।হাতটা ছেড়ে দেন আর চলেন বাসায় নিয়ে যাই আপনাকে।
বাসায় ঢুকতেই আন্টি বলে উঠল সুমুকে কই ছিলি তুই মা।
এই কাজ সারছে যদি বলে দেয় আমার জন্য এইসব করছে তাহলে আমি শেষ।(মনে মনে)
---আম্মু আমি আমি অর্নিলার বাসায় গিয়েছিলাম। দরকার ছিল।(সুমু)
তো গিয়েছিস ঠিক আছে।একটা ফোন দিবি তো। আচ্ছা চল আমি খাবার টেবিলে দিচ্ছি তুই ফ্রেস হয়ে আয়।সজল তুমিও খেয়ে যাবে(আন্টি)
না আন্টি আমি বাসায় গিয়ে খাব। আম্মু অপেক্ষা করছে।(আমি)
আমি বলছি তোমার বাসায়।থাকো তুমি আমি আসতেছি।(আন্টি)
সুমু চলে গেল।রাগ করছে।রাগটা ভাঙ্গাতে হবে। কিন্তু যে অবস্থা দেখতেছি কথা বলতে গেলে কি যে করবো ওই জানে। আজকে তো কেন আগামী এক সপ্তাহ কথা বলবো নাকি সন্দেহ আছে।
আমি টিভি দেখতেছি। আন্টি খাবার টেবিলে রেখে দিয়ে আমাদের ডাক দিলেন। আমি তো চলে আসছি কিন্তু মহারানীর কোন খোঁজ নেই।
ও আসতেই আমার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল ওর দিকে।কালো রঙের ড্রেস কপালে ছোট একটা টিপ সাথে চোখে হালকা করে কাজল দিয়েছে আর ভেজা চুল। এতোটা সুন্দর লাগছে ওকে যে চোখটাই সরাতে পারছি না। পাশে যে আন্টি আছে সেদিকে খেয়াল নেই।ও আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। অবশ্য ওকে আরও সুন্দর লাগছে। খেতে বসতেই আমার পায়ে নখের চাপ অনুভব করতে লাগলাম। এইটা ওরই কাজ।
আস্তে আস্তে বেশি চাপ দিতে লাগল। এখন ব্যাথা লাগতেছে। আন্টি আছে বলে কিছু বলতে পারছি না। আন্টি না চিল্লাচিল্লি শুরু কইরা দিতাম।আর এই সুযোগে নিজের রাগ আমার উপর ঢালতেছে আর মনে মনে বলতেছে আমাকে দাঁড়া করিয়ে রাখার শাস্তি তোর।
যতই পা সরিয়ে আনতে চাচ্ছি আরো বেশি করে নখ দিয়ে পা চেপে ধরছে। এদিকে ব্যাথায় আমি মইরা গেলাম।আজ বুঝতে পারলাম মেয়েরা নখ রাখে কেন। একটা উপায় তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে পড় নাহলে তোর পা শেষ আজকে। খেয়ে উঠে পড়লাম।পা চামড়া তুলে ফেলেছে একটু। বাসায় আসার পরেই সে এসে হাজির সাথে ওষুধ আর একটা টিফিন বক্স নিয়ে। এসেই আমার রুমের দরজা লক করে পায়ে মলমটা লাগিয়ে দিতে লাগল।পা ধরতে না দেওয়ায় এমন ভাবে তাকাল যে ওর কাছে ছুরি থাকলে পেটে ঢুকিয়ে দিত। নিজের হাতে পায়েস রান্না করে আনছে। কারণ ও জানতো আমি পায়েস অনেক পছন্দ করি। নিজের হাতে সেদিন খাইয়ে দিয়েছিল আজকেও তাই করছে কিন্তু কারণ অন্য। এইটা আমার শেষ পায়েস খাওয়া তোর হাতে তোর রান্না করা। আমার কাছে হয়তো বেশি সময় নেই। ডাক্তার এক সপ্তাহের কথা বলেছিল বেঁচে থাকার সময়। হ্যাঁ আমার ব্লাড ক্যান্সার।।আর কিছু করার নেই। এখন শুধু মৃত্যুর প্রহর গুনছি। সাতদিন শেষ হয়ে আজ আট দিন চলছে। আল্লাহ হয়তো আমার আর এই একটা দিন বেশি দিয়েছিলেন। কিছু মানুষের কপালে সব থাকে না।সুমু আমাকে অনেক ভালোবাসতো। তবে পাগলামো একটু বেশি করতো।ওর ইচ্ছে ছিল আমাদের বিয়ের পর আমাদের টুইনস বেবি হবে। আমিও অনেক ইচ্ছে ছিল পাগলীটার সাথেই বৃদ্ধ হবো আমাদের রুমের বারান্দায় বসে জোৎস্না রাতে চাঁদ দেখবো। আজ ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হয়ে রয়ে গেল।
আপু চলো জয় ভাইয়া মানে তোমার বর এসে পড়ছে। আপু তুমি কান্না করতেছো। মনে নেই ভাইয়া চলে যাওয়ার আগে বলছিল না কান্না করবে না ওর কথা ভেবে। তাহলে ও কষ্ট ভাবে। তুমি তাড়াতাড়ি এসো আমরা বসে আছি রুমে। (সানজিদা)
দেখসিস সানজিদা তোর ছোট্ট বোন আজ বড় হয়ে গেছে সব কিছু সামলাতে শিখছে।।আজ ও অনেক খুশি কিন্তু আজও ওর মন কারণ ওর ইচ্ছে ছিল আমি ওর ভাবী হয়ে আসবো।ওর ইচ্ছেটাও আমাদের ইচ্ছেটার মতো অপূর্ণ রয়ে গেল । কিন্তু বুঝতে দেয় না। সজল আজ পাঁচ বছর হয়েছে তুই চলে গিয়েছিস।জানিস তুই চলে যাওয়ার পর জয় আমাকে তোর মতো ভালোবাসে। আমার অনেক যত্ন নেয়।ও তোর মতো। জানিস আজকে আমার বিয়ে জয়ের সাথে।জানোস তোকে আজ অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তুই অনেক দূরে চলে গেছিস। আচ্ছা তুই কি আমাকে দেখতে পারোস?জানি না পারোস কিনা।তোর শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করতে যাচ্ছি।তুই বলছিলি না এক ভালো ছেলেকে পছন্দ করে বিয়ে করতে যাকে আমি ভালবাসবো।
কিন্তু তুই আমার প্রথম ভালোবাসা। তুই থাকবি।
আপু তুমি এখন কান্না করছো। তুমি কান্না করলে ভাইয়ারও কষ্ট পাবে।
ভাইয়া বলছিল না চলে যাওয়ার আগে কোনো যদি অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে মনে তাহলে ভাইয়া সুখেই আছে আর ভাইয়া সুখে থাকবে তখনই যখন আমরা তার জন্য চোখের পানি না ফেলবো।(সানজিদা)
হুম।(সুমু)
চলো তো জয় ভাইয়াকে আর কত অপেক্ষা করাবা।আর অপেক্ষা করলে পাগল হয়ে যাবে।
দুইজনেই হেসে উঠলো।
জানিস সানজিদা আজকে মনে হইতেছে সজল আমাদের আশেপাশেই আছে।(সুমু)
হুম। ভাইয়া সব সময় আমাদের সাথেই আছে।এখন চলো। দেরি হয়ে যাচ্ছে।(সানজিদা
হুম চল।(সুমু)
পিছনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম ভালো থাকিস যেখানেই থাকিস।
যাওয়ার আগে আমার মতো চাঁদের দিকে হয়তো সুমু আপু এইটাই বলল ভালো থাকিস যেখানেই থাকিস।
Comments
Post a Comment