বিড়াল
বাসর ঘরে আতিক নিজের বউকে একটি বিড়াল গিফট করে। নেহা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
আপনি আমাকে বিড়াল গিফট দিচ্ছেন? তাও বাসর রাতে।
আতিক মিষ্টি হেসে হ্যাঁ বলল।
নেহার খুব রাগ হল। কারণ বিড়ালকে একটুও পছন্দ করে না নেহা। ভীষণ ভয় পায় বিড়ালকে সে।
আতিক বিয়ে করা বউয়ের রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে রহস্যজনক হাসি দিয়ে বলল,
এই বিড়াল কিন্তু কোনো স্বাভাবিক বিড়াল না।
নেহা রাগী চেহারা নিয়ে প্রশ্ন করলো,
আপনি বিড়াল সরাবেন, আমার পছন্দ না বিড়াল।
আতিক বিড়ালকে নিজের কোলে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল,
এই বিড়ালের বর্তমান মূল্য এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার টাকা।
নেহা তিন কবুলে স্বামী বানানো পুরুষটির দিকে তাকালো। বাসর রাতে কেউ এমন করে? হ্যাঁ করে, সেটা তার স্বামীই।
নেহা আর কিছু না ভেবে বলল,
এই আপনি কী বলুন তো? এমন নাটক কেন করছেন? এই দেশি বিড়ালের দাম এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার টাকা? বোকা পেয়েছেন আমায়?
আতিক মুচকি হেসে বলল।
বিশ্বাস হলো না তো? যেদিন বিড়ালটা চুরি হবে সেদিন ঠিকই বুঝবে এর মূল্য। আমি হলাম তোমার স্বামী। অভিনয় পারি না বলে অপেক্ষা বইয়ের ইমনের বাবা হয়ে অভিনয়টা আর করা হয়ে উঠে নি আমার।
নেহা এবার বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। খুব রাগ হচ্ছে তার, বাবা মা তাকে এ-কোন ছেলের সাথে বিয়ে দিলো?
এই আপনি আমায় রাগাচ্ছেন কেন বলুন তো?
আতিক হাসলো। তার হাসিটি মিষ্টি হলেও, নেহার কাছে হাসিটা শীতকালের বৃষ্টির মতোই লাগছে।
এই রুম থেকে বিড়াল না সরালে আমি বাথরুমে যেয়ে বসে থাকবো।
আতিক এবার একটু মনোযোগ দিলো নেহার দিকে।
আমি কিন্তু মজা করছি না। সত্যিই এই বিড়ালটির দাম এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার টাকা।
নেহা এবার আরো বেশি রেগে যায়।
এই আপনি কী আমাকে এসব বিশ্বাস করাতে পারবেন। যেখানে একটি বিদেশি বিড়াল কয়েক হাজার টাকায় পাওয়া যায়, সেখানে এই দেশি বিড়াল কি-না আকাশ ছোঁয়া দাম।
আতিক মুচকি হেসে বলল।
বিড়ালটা দেশি হতে পারে, কিন্তু ওর ভিতরে যা আছে তা কিন্তু অনেক দামী।
নেহা এবার প্রশ্ন করল।
কী আছে?
স্ত্রীর প্রশ্নে এবার আতিক বিছানা ছেড়ে দাঁড়ালো। বিড়ালটিকে ফ্লোরে ছেড়ে দিলো, আর বলল।
মনে করো আজ আমাদের বাসর রাত। ধুর কচুর মাথা বিড়ালের গায়ের কাঁথা, আজ তো আমাদের বাসর রাতই। তুমি এই মুহূর্ত কল্পনা করতে থাকো, আমি বলে যাচ্ছি। তোমার আমার বিয়ে হলো। তুমি নতুন বউ সেজে বসে আছো বাসর ঘরে। চুপটি করে বসে আছো, মনের ঘরে কতো কিছু ভেবে যাচ্ছো, আর মাঝেমধ্যে লজ্জা পাচ্ছো। তোমার ভাবনার সমাপ্তি হলো আমার আগমনে। তুমি অপেক্ষা করছো আমি কী বলবো তা শোনার জন্য। তোমার অপেক্ষাকে আর হুমায়ুন আহমেদের মতো দীর্ঘ করলাম না, বেশি অপেক্ষায় চুল পাকে। তাই পিছনের হাতজোড়া সামনে আনলাম। তুমি তাকালে, হাতে একটি পাঁচ টাকা দামের টিফিন কেক দেখলে। তা দেখে তোমার মনে কালো মেঘ জমলো, টিফিন কেক? কিপ্টে বর। কিন্তু কেক হাতে নেওয়ার পর সেই কেকের মধ্য জায়গায় একটি ডায়মন্ড এর আংটি পেয়ে তুমি ভীষণ খুশি।
নেহা স্বামীর লম্বা রচনা শুনে আলোগতিতে প্রশ্ন ছুড়ল,
কল্পনা করে কী হবে। আপনি তো আর তা আমায় দেন নি। দিয়েছেন এই বিড়াল। যা আমার একবারেই পছন্দ না। আচ্ছা বলুন তো এসব বলে লোভ দেখাচ্ছেন কেন?
আতিক মন খারাপ করে বলল।
তুমি কল্পনা ভাঙলে কেন। তারপর সেই টিফিন কেকটি এই বিড়াল খেয়ে নিয়েছে। সাথে ডায়মন্ড এর আংটিটিও খেয়ে নিয়েছে এই দেশি বিড়াল। এবার কল্পনা ভেঙে বাস্তবে আসো। মন দিয়ে ভাবো, আমি কী কী বললাম এতক্ষণ।
নেহা এবার কিছুই ভাবলো না। সে যা বুঝে নেওয়ার বুঝে নিয়েছে। ফ্লোরে বিড়ালটি দৌড়াদৌড়ি করছিল গোলাপের পাপড়ি নিয়ে। নেহা বিড়ালটিকে নিজের কোলে নিলো৷
এই আপনার বিড়ালটি তো খুব সুন্দর।
আতিক হাসলো। নারী এবার ঠিক বিড়ালের প্রেমে পরবে। সে বলল,
এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার টাকার বিড়াল, সুন্দর তো হবেই।
নেহা লজ্জা ভেঙে বলল,
ওর ভিতর থেকে আংটিটা বের করবো কীভাবে?
আতিক বলল,
কী ভাবে আর, ওই যে বিড়ালটা যখন তার প্রাকৃতিক কাজ করবে। তখন সেগুলোর মধ্যে পেতে পারো। এই একটাই তো রাস্তা আংটিটি পাওয়ার।
নেহার বমি আসলেও চুপ থাকলো। স্বামীর দেওয়া আংটিটি তার পাওয়াই লাগবে। আতিক ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলল,
আর হ্যাঁ শুনো। বিড়ালটি যে ডায়মন্ড এর আংটি খেয়েছে এই কথা কিন্তু আমার বড় ভাবি আর আমার ছোট ভাই দেখেছে। ওদের কিন্তু এই বিষয়ে কিছু বলবা না। নয়তো বিড়ালকে কিছু করে ফেলবে ওরা। বিড়ালের কিছু হলেই এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার টাকা হাত ছাড়া হবে।
নেহা মাথা নাড়িয়ে বোঝালো কাউকেই বলবে না সে।
আতিক আর নেহার আজ বিয়ের ৬বছর।
এই ছয়টা বছর ধরে প্রতিটা সকাল বিড়ালের প্রাকৃতিক করা কাজের অংশগুলো খুব সতর্কতার সাথে ফেলেই যাচ্ছে সে। কিন্তু আংটিটি আর পায়নি সে৷ কাউকে বলতেও পারছে না। পেটেও কথা রাখতে পারছে না।
তবে নেহা অবাক হয়েছিল বিয়ের তিন দিনের মাথায়। স্বামী তার আঙুলে খুব সুন্দর একটি ডায়মন্ড এর আংটি পরিয়ে দেয়। তখন নেহা বলেছিল। আপনি আরেকটি আংটি কিনলেন কেন? আমি তো বিড়ালের পেটের ভিতর থাকা আংটিটিই পাইলে খুশী হতাম। কেন আবার নতুন করে টাকা খরচ করলেন।
আতিক সেদিন শুধু হেসেছিল।
নেহা এখন তিন বাচ্চার মা। বড় ছেলে মাস্টার্সে পড়ে। ছোট দুই মেয়েও কলেজে উঠেছে।
সেই বিড়ালটি দুনিয়া ছেড়েছে ১১বছর আগেই। নেহা আর পায়নি সেই বিড়ালের পেটের ভিতর থাকা আংটিটি।
আতিক পাকা লোমে ভরা হাতে একটি কাগজ নেহার হাতে দিলো।
নেহা সেটা পড়ে আতিকের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।
কাগজে যা লেখা ছিলো,
প্রিয় স্ত্রী ক্ষমা করে দিয়ো সবটুকু পড়ে, আর ক্ষমা না করলে তোমার পাকা চুলগুলোতে উকুন হবে। বুড়ো বয়সে মাথায় উকুন মানেই সেই সুখ। আচ্ছা কী বলি শুনো,
তুমি বিড়াল পছন্দ করো না। সেটা তোমার বোন বলেছিল আমায়। কিন্তু বিড়াল খুব পছন্দের আমার। প্রিয়া(বোন) বলেছিল তুমি এই বাড়িতে এসে যদি বিড়াল দেখো, তাহলে নাকি বিড়ালকে ফেলে দিবে। কিন্তু বিড়াল যে আমার খুব পছন্দের। তাই ভাবলাম তোমাকে বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে হবে। তাই আমার এই কাজ। আসলে বিড়াল আর ডায়মন্ড এর আংটি, নাটকটি আমার মনগড়া ছিলো।
বিশাল বাড়ির সব জায়গা ছেড়ে বিড়াল তার প্রাকৃতিক কাজ আমার রুমে করত। রাতের প্রথম অংশে যদি তার প্রাকৃতিক কাজ পেতো, তাহলে আমার রুমের দরজা যদি রাতের শেষ অংশে খুলতাম, তাহলে সে আমার রুমেই করবে। ততক্ষণ বসে থাকবে আমার দরজা খোলার অপেক্ষায়।
ঘর পরিষ্কার কে করবে? বিয়ের পূর্বে ভাবি আর মা আমাকে দিয়েই করাতো। কারণ বিড়াল যে আমি একাই পছন্দ করি।
ভাবলাম কষ্ট করি। বিয়ের পর বউ করবে নে পরিষ্কার।
তাই নাটক সাজালাম।
আমি কিন্তু তোমাকে ডায়মন্ড এর আংটি সত্যি সত্যি দিয়েছি।
তুমিও কিন্তু বিড়ালটিকে ভালোবেসে ফেলছিলে।
নেহা সেই কাগজ পড়ে হেসেই যায়, এক বিড়ালকে পছন্দ করানোর জন্য কতো কী?
আতিক বাজারে যায়। নেহা তাকে অনেক বড় লিস্ট দিয়েছে। মেয়ে দেখতে আসবে আজ। প্রথম বার দেখায় যেন ওদের পছন্দ হয়ে যা। কোনো কমতি রাখবে না নেহা নিজের মেয়ের এই অনুষ্ঠানে। তাই স্বামীকে খুব বড় লিস্ট দিয়ে বাজারে পাঠায়। বলেছে বাজারে যেয়ে যেন কাগজ খুলে।
বড় দোকানে যায় আতিক। কাগজ খুলে দোকানের কর্মচারীর কাছে দিয়ে বলে সে,
যা আছে লেখা তা দিয়ে দাও।
আতিক মাত্র চেয়ার টেনে বসতে যাচ্ছিল দোকানের মালিকের সাথে গল্প করতে, কিন্তু কর্মচারীর হাসির শব্দে তা আর হলো কই।
কর্মচারী জোরে জোরে পড়তেছে।
ওগো স্বামী, বিড়ালের ঘটনা আমি বিয়ের পরের দিন শুনতে পাই ভাবির থেকেই।
কর্মচারীকে আর পড়তে দেয় নি সে। নিজের হাতে নিলো। আর মনে মনে পড়তে শুরু করল,
আমাকে দিয়ে বিড়ালের প্রাকৃতিক করা কাজ পরিষ্কার করানোর জন্যই তুমি সেই কথা বলেছো। সেসব আমার শাশুড়ী আর ভাবি বলে দিয়েছিলেন পরের দিনই।
নিজেকেই বুদ্ধিমান ভাবো।
এবার আসো আবার, এসে বাজারের লিস্ট নিয়ে যাও। সাবধান! ফোন দিবে না। আমি যখন জানতে পেরেও তোমায় কিছুই বলিনি। তাহলে তুমিও ফোন না দিয়ে বাড়ি এসে আবার বাজারের লিস্ট নিয়ে যাবে। এটাই তোমার শাস্তি।
আতিক মুচকি হাসলো,
ভাগ্যিস হেটে যেতে বলে নি, ৩০টাকার ভাড়া যেখানে, সেখানে হেটে যাওয়া মানে কঠিন শাস্তি।
#বিড়াল
লেখক: হানিফ আহমেদ
Comments
Post a Comment