বিয়ে নিয়ে কিছু বাস্তবিক অভিজ্ঞতা
'বিয়ে নিয়ে কিছু বাস্তবিক অভিজ্ঞতা'
[ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো ]
: পাত্রীর বয়স ২৬? আমি আসলে ২৫ বছরের বা আরও কম বয়সের কাউকে খুঁজছি।
: মেয়ে তো অনেক খাটো। আমার সাথে মানাবে না।
: পাত্রী শ্যামলা। আমি আসলে উজ্জ্বল শ্যামলা বা ফর্সা কাউকে খুঁজছি।
: পাত্রী মহিলা কলেজে পড়ে? পাবলিক বা প্রাইভেট ভার্সিটি বা মেডিকেলে পড়লে ভালো হয়।
: পাত্রী মোটামুটি সুন্দর কিন্তু আমি আরও একটু সুন্দর মুখশ্রীর কাউকে চাচ্ছি।
এখানে অল্প কিছু উদাহরণ দিলাম শুধু।
এমন আরো শত শত এক্সকিউজ আছে।
নিজের পছন্দ না হলে "মা না করে দিয়েছে বা বাসা থেকে সামনে আগাতে চাচ্ছে না।"
বলে সরে আসাও খুব কমন। আপনাদের ডিমান্ডগুলোতে কারো সমস্যা নেই। সমস্যা মহৎ সাজার জন্য সুন্দর করে বায়োডাটায় মিথ্যা বলাতে। দ্বীনদারিতাকে প্রাধান্য দিবেন বলেও ছোট ছোট বিষয়গুলোর জন্য রিজেক্ট করে দিচ্ছেন পাত্রীপক্ষকে। তাহলে দ্বীনদারিতাকে প্রাধান্য দিলেন কখন?!
বায়োডাটা দেখার পর পাত্রীর আকীদা কি, কুরআন কতটুকু মুখস্থ, দ্বীনের পড়ায় কতোটা এক্টিভ, রোজ কতক্ষণ দ্বীনের পথে ব্যয় করে, এসব তো জিজ্ঞেস করা হয় না। দ্বীনদারিতা দেখে নেওয়ার আগেই তো সৌন্দর্য, উচ্চতা, বয়স দেখে রিজেক্ট করে দেন। তাহলে বায়েডাটায় মিথ্যা লিখলেন না? আমি বলছিনা সৌন্দর্য একদমই দেখতে হবেনা। সুন্দর জীবনসঙ্গী চাওয়া দোষের কিছুনা তবে বায়োডাটায় তা উল্লেখ করে দিবেন। আপনারা বায়োডাটায় লিখেন দ্বীনদারিতা ছাড়া সব দিকেই ছাড় দিতে পারবেন। আসলে ঘটনা উল্টো! দ্বীনদারিতার ক্ষেত্রেই ছাড় দেওয়া হয়৷ অন্য কিছুতে না। মেয়েকে শিক্ষিত হতে হবে, সুন্দরী হতে হবে, লম্বা হতে হবে, দ্বীনদার হতে হবে! সবাই অলরাউন্ডার না। এটা মাথায় রেখে বিয়ের চিন্তা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সৌন্দর্য, বংশমর্যাদা, সম্পদ ও দ্বীনদারিতার মধ্যে দ্বীনদারিতাকে বেশি প্রধান্য দিতে। তাই হয়তো আপনারা আবেগের বশে লিখে ফেলেন দ্বীনদারিতাকে প্রাধান্য দিবেন। কিন্তু দিনশেষে দ্বীনদারিতা থাকে লেস প্রায়োরিটিতে।
আপনি দ্বীনদার বিয়ে করবেন না সুন্দরী তা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তবে বায়োডাটাকে কিউট বানানোর জন্য মিথ্যা লিখে বোনদেরকে হয়রানি করার কোনো মানে হয় না। আপনি যদি উল্লেখ করে দেন চাঁদের মতো মুখ হতে হবে, দুধে-আলতা গায়ের রঙ হতে হবে, জিরাফের মতো লম্বা হতে হবে তাহলে যারা এসব যোগ্যতা রাখেনা তারা আপনার বায়োডাটায় রেসপন্স করবেনা। আর যারা বাবা-মায়ের বাধ্য সন্তান, মায়ের পছন্দ হয়নি তাই বিয়ে করতে পারবেন না বলে চলে যান তাদের বলবো, কনভিন্স করার ক্ষমতা নেই আপনাদের? বিয়ে আপনি করবেন, সংসার আপনার হবে, বউও আপনার৷ কিন্তু পছন্দ হতে হবে আপনার মায়ের! আপনার মায়ের পছন্দ না হলে তাকে কনভিন্স করার ক্ষমতা এটলিস্ট থাকা উচিত। এমন অনেক ভাই আছে আলহামদুলিল্লাহ, যারা শুধু দ্বীনদারিতায় মুগ্ধ হয়ে, পাত্রী না দেখে, বাবা-মায়ের চাহিদার বিষয়ে কর্ণপাত না করেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়৷ বাবা-মায়ের চাহিদা দুনিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাদের চাহিদা মিটাতে গেলে তো দ্বীন পাবেন না আনল্যাস আপনার পরিবার দ্বীনি হয়। কারণ দ্বীনি পরিবার হলে তাদের চাহিদা দ্বীনকে ঘিরে হবে। তাই এই বিষয়টা মাথায় রাখা উচিত।
একচেটিয়া ভাইদের দোষ দিবো তা নয়। বোনদেরও দোষ আছে। তবে বলতে গেলে বোনদের হাত-পা অনেকটাই বাঁধা। বাবা-মায়ের চাহিদা দুনিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ জেনেও তাদের চাহিদার বিষয়াদি বায়োডাটায় যোগ করে দিতে হয়। কিছু করার থাকেনা। কারণ সব মেয়ের বাবারা কনভিন্স হবার নয়। বায়োডাটাতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই লিখতে হয় কেমন পেশা, কেমন পড়াশোনা চাচ্ছে। তবে কিছু বোন মনের মধ্যে সুপ্ত দুনিয়াবি চাহিদা রাখেন৷ তাদের বলবো ছাড় দিতে শিখুন। দ্বীনদার একজন মানুষকে খুঁজুন। সব দিক মিলবেনা। বাবা-মায়ের চাহিদা মিললে আপনার দ্বীনের চাহিদা মিলবে না আর আপনার দ্বীনের চাহিদা মিললে বাবা-মায়ের চাহিদা মিলবে না। তাই ছাড় দিতে শিখতে হবে। তবে যদি কখনো দ্বীনদার একজন মানুষের সন্ধান পেয়ে যান যে কিনা আপনার বাবা-মায়ের চাহিদা পুরোপুরি মিলাতে না পারলেও অনেকাংশে মিলে তাহলে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন তাদের বুঝানোর। কাজটা কঠিন তবুও চেষ্টা করতে হবে নিজের ভালোর জন্য।
বিয়ে একটা সেনসিটিভ ইস্যু। একটা মানুষের অনেক স্বপ্ন থাকে বিয়ে নিয়ে। দ্বীনদার না হলে হুট হাট নিজের পছন্দ মতো একজনকে বিয়ে করে নেওয়া যায়। অথবা বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। কিন্তু দ্বীনদার হলে আমরা বুঝতে পারি বিয়ে করাটা আমাদের জন্য প্রয়োজন ফিতনাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। আবার নিজে পছন্দ মতো খুঁজার সুযোগ নেই। পরিবারকে বলেও লাভ নেই কারণ তারা নিজেরাই দ্বীন বুঝেনা। তাই নিজেই কোনো উপায় বের করার চেষ্টা করতে হয়। তারপর সামনে আসে অনলাইনের পেইজ গুলো। হাজার হাজার বয়োডাটার মাঝে নিজের জীবনসঙ্গী খোঁজার চেষ্টা চালানো হয়। অতঃপর আস্তে আস্তে মাস যায়, বছর যায়। একসময় হতাশা এসে ভিড় জমায়, কান্না, বয়স বেড়ে যাচ্ছে বলে পরিবারের প্রেশার, সব মিলিয়ে একটা অসহ্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। চারপাশে বিয়ে নিয়ে এতো বেশি হতাশার গল্প আর অশ্রু! অনেক বোনদের বলতে শুনি, বিয়ে না করা গেলে ভালো হতো! অথচ এমনটা কিন্তু হওয়ার কথা ছিলনা।
মেয়েদের বিষয়টা একটু জটিল। ছেলেদের বয়স বেড়ে যাওয়া নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না কেউ। কিন্তু মেয়েদের বয়স অনেক বড় একটা ইস্যু। বেশিরভাগ ভাইয়েরা চায় ২৫ বছরের নিচের কাউকে বিয়ে করতে। ২৫ পার হয়ে গেলেই মেয়েরা বুড়ি হয়ে যায়! তাই বুড়ি হওয়ার আগেই বিয়ে করতে হবে এমন একটা ভাব! আমাদের সমাজেও এমন চিন্তা ভাবনার প্রচার প্রসার ঘটেছে। তাই দেখা যায় পরিবার প্রেশার দেয় বয়স বেড়ে যাচ্ছে, আবার দ্বীনদার কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। একটা সময় পর পরিবার পাত্র খুঁজা শুরু করে। আর দেখা মেলে দ্বীনহীন কিছু মানুষের। এই একটা কারণেই বেশিরভাগ বোন যারা দ্বীনদার পরিবারের নয় তারা পরিবারকে পাত্র খুঁজতে বলতে ভয় পায়। আর নিজে পাত্র খুঁজে না পেলে, বয়স বেড়ে গেলে হয়তো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে দিয়ে দিবে দুনিয়ায় ১০০/১০০ পাওয়া কোনো এক পাত্রের সাথে বিয়ে। নিজের চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে, বাবা-মায়ের মুখপানে তাকিয়ে তখন পরাজয় স্বীকার করে নিজের স্বপ্নকে দাফন করে দিতে হবে।
[আমাদের মেইন সমস্যা হলো :] আমরা ছাড় দিতে নারাজ। ভাইয়েরা খোঁজেন রাজকন্যা আর বোনেরা খোঁজেন রাজপুত্র। মনে রাখতে হবে এটা রূপকথার গল্প নয়। তাই সব গুণসম্পন্ন একজন মানুষ আসবেনা আমাদের জীবনে। লক্ষ্য স্থির করতে হবে আমরা আসলে আমাদের জীবনসঙ্গীর মধ্যে কোন গুণটা দেখতে চাই। আর সেই ঠিক করা লক্ষ্য অনুযায়ী আগাতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দু'আ করতে হবে। তিঁনি চাইলেই চক্ষু শীতলকারী মানুষটিকে পাঠিয়ে দিতে পারেন। তাই তাঁর নিকট বেশি করে দু'আ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, যেমন দ্বীনদার জীবনসঙ্গী প্রত্যাশা করছি আমরা তার মতো করে, তার যোগ্য করে তুলতে হবে নিজেকে। আমল বাড়াতে হবে। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়াতা'আলা) বিয়ে সহজ করে দিক সবার জন্য।
[বি.দ্র. ভাইদের এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে খুব একটা ধারণা নেই আমার। বোনদের হতাশা, দীর্ঘশ্বাসের গল্পগুলো আমাকে ভাবায় বিয়ে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিয়েটা সহজ করা প্রয়োজন। লেখাটা আমার একজন খুব প্রিয় বোনেরর জন্য।] লিখছেন: ফারহানা বিনতে কামাল। কিছুটা সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।
Comments
Post a Comment