পরিবর্তনের গল্প

[এক]
স্বপ্ন ছাড়া জীবন হালবিহীন নৌকার মতো।জীবনে একটা সুন্দর লক্ষ্য না থাকলে বেচেঁ থাকাটাই যেনো পানসে লাগে।সেও স্বপ্ন দেখতো।সেও ঠিক করেছে তার জীবনের লক্ষ্য।স্বপ্নটা যেনো ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে তার।স্বপ্নটা তার জীবনের যেনো এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। প্রতিটা মুহুর্ত, প্রতিটা সেকেন্ড স্বপ্ন তাকে হাতছানি দেয়। ফোনের ওয়ালপেপার, প্রোফাইল পিক,ব্যাকগ্রাউন্ড পিক কোনো কিছুই বাদ রাখে নি, যেখানে  তার স্বপ্ন টার উপস্থিতি নেই।সে প্রস্তুত হচ্ছে ধীরে ধীরে। শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়ে।স্বপ্ন পূরণ করতে তার শারীরিক সক্ষমতাও যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। 

[দুই]
ক্যান্টনমেন্ট থাকে খুব করে টানে।রাইফেল যেনো তার অন্যরকম ভালোবাসার সঙ্গি। কোথাও 'সেনাবাহিনী' নামটা দেখলে অজান্তেই এক মূহুর্তের জন্য থমকে দাড়াঁয় সে।ওই জলপাই রঙের পোশাকটা যেনো অদ্ভুত মায়াময়। কালো বুটটা যেনো খুব আপন তার।খুব করে অনুভব করার চেষ্টা করে,সেও একদিন ওই জলপাই রঙের পোশাক জড়িয়ে নিবে তার জীবনে তার শরীরে। কালো বুটটা ও।সাথে নিবে তার সঙ্গি প্রিয় রাইফেলটাও।রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করবে অপরাজেয় ভাবে।নিজেকে সে কল্পনা করে একজন ''সৈনিক' হিসেবে। প্রচন্ড আত্নবিশ্বাসের সাথে বলে উঠে...

    "  I'm a soldier,
  born to die"
"সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা সর্বত্র আমরা দেশের তরে"

মূলমন্ত্র টা যেনো পুলোকিত করে তাকে, আন্দোলিত হয় তার অন্তর।
কম্পিত হয় হৃৎপিণ্ড। 

[তিন]
শুধু যে কল্পনার জগতে সে তার স্বপ্ন নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকতো তা কিন্তু নয়।সে তার স্বপ্নকে বাস্তব রুপ দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। অনলাইন, অফলাইন থেকে সেনাবাহিনী সম্পর্কিত সব তথ্য সযত্নে আয়ত্ব করে নেয়।শারীরিকভাবে ও নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে সে।মা বাবা,ভাইবোন,আত্নীয় -স্বজন,বন্ধুমহল প্রায় সবাই জানে তার স্বপ্নের কথা।সৈনিক হওয়ার অদম্য ইচ্ছা ঘুমাতে দেয় না থাকে।মাধ্যমিক শেষ করে 'BNCC' তে ভর্তি হবে সে।'BNCC' ক্যাডেট হওয়া তার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ।তার পর যাবে মাঠ করতে।এটাই তার পরিকল্পনা,  এমনটাই তার ইচ্ছা,স্বপ্ন। প্রচন্ড আত্নবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে,স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কোনো কাটাঁই যেনো বাধা হয়ে দাড়াঁতে পারছে না তার জন্য।সে অদম্য সাহসী,দৃঢ় তার লক্ষ্যে।
 
[চার

কিন্তু আল্লাহ সুবাহানানহু ওয়াতাআ'লার পরিকল্পনা যে ভিন্ন,উত্তম আর কল্যাণকর।করোনার মাঝামাঝি হঠাৎ করেই তার মাঝে পরিবর্তনের চাপ দৃশ্যমান। পরিবর্তন অনুভব করলো নিজের মধ্যে, চিন্তাধারার মধ্যে। দ্বীনের পরশ তার অন্তর টাকে আলোকিত করে দিলো।সে নিজেকে আবৃত করতে লাগলো পর্দায়।সব স্বপ্ন ছুড়ে ফেললো। অবিশ্বাস্য লাগছে তার নিজের!
যে নিজেকে প্রতিটা ক্ষণ ''সৈনিক' হিসেবে কল্পনা করতো,দেখতে চাইতো।যে স্বপ্নের জন্য এতো উদ্দীপনা, উৎসাহ,আত্নবিশ্বাস কোথায় যেনো হারিয়ে যেতে লাগলো সব।যে মেয়েটা নিজেকে 'সৈনিক ' হিসেবে গড়ে তোলার সব বন্দোবস্ত করতো সে কিনা এখন নিজেকে চার দেয়াল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছে!
আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল।
রব্ব তার অন্তরে নূর ঢেলে দিয়েছেন।হেদায়েত  নামক সুশীতল বাতাস বইয়ে তার অন্তরকে শীতল করেছেন।
যুদ্ধ কিন্তু সে প্রতিনিয়ত করছে।মডারেটর মুসলিম পরিবারে দ্বীন পালন করা কতোটা কঠিন সেটা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে।প্রতিনিয়ত নফসের সাথে লড়াই করাটা রণক্ষেত্রে লড়াই করার চেয়ে কোনো ক্ষেত্রে কম নয়।সে এখন ও স্বপ্ন দেখে সৈনিকের,আল্লাহর জমিনে একদল মুজাহিদ গঠনের স্বপ্ন। দ্বীন পালনের আরও অনেক সংগ্রাম রয়ে গিয়েছে বাকি,বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে সংগ্রাম করতে করতে।আল্লাহ সহজ করুন। 
সে শুধু এটা ভেবেই অবাক হয় যে, যে স্বপ্ন পূরণের পথে কোনো বাধাই তাকে আটকাতে পারছিলো না।কিন্তু হটাৎ করে করেই তার নিজের মধ্যেই পরিবর্তন শুরু হলো যেটা সম্পূর্ণ তার কল্পনার বাইরে!
আমাদের কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে না,যেটা আল্লাহ সুবাহান আনহু ওয়াতাআ'লা চান না।তিনিই আমাদের সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী,এবং অন্তর সমূহের নিয়ন্ত্রণ তারই হাতে।
 : 'ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি, ছাব্বিত কালবি আলা দ্বীনিকা। ' অর্থ : 'হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অবিচল রাখুন।
(সুনান তিরমিজিঃ৩৫২২)
পূর্বের স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় কোনো আফসোস নেই তার মধ্যে। তার রব্ব তার জন্য সুন্দর, কল্যাণকর, উত্তম সবকিছুই করছেন।
আলহামদুলিল্লাহ 
হয়তো উত্তম মুসলিমাহ হতে পারেনি।তুলনামূলক তেমন কোনো ইলম,আমল করতে পারেনি।তবুও  রবের দেওয়া নিয়ামাহ,সরল সঠিক যে পথের সন্ধান পেয়েছে সেটা থেকে বিচ্যুত হতে চায় না সে।
এটাই সর্বোত্তম, সহজ সরল আর সুন্দর দ্বীন ইসলাম।
রব্ব তাকে কবুল করুন। সুমাইয়া(রাঃ)র মতো দ্বীনের জন্য তার অন্তরে মুহব্বত সৃষ্টি করুণ, আর তাকে আয়েশা(রাঃ)র মতো উত্তম আখলাক,ধৈর্য, জ্ঞান, আর হিকমাহ দান করুন।
আ-মীন।
রিয়া থেকে রব্বুল আল আমীন এর কাছে পানাহ চাই।
[নোট ___ অনুকরণীয় তেমন কিছুই নেই এই নগন্য বান্দীর মধ্যে। তবুও একটুও যদি কোনো বোনের দ্বীন পালনের পথে সামান্যতম  অনুপ্রেরণা যোগাতে পারি এজন্যই লিখা।কতোটুকু উত্তম হয়েছে জানিনা,ভুলত্রুটির জন্য আফওয়ান]
🖋️📝~আয়েশা খাতুন সুমাইয়া

Comments

Popular posts from this blog

একজন পতিতার প্রেমের গল্প

What are the benefits of exercising in the morning?

Know the right time to exercise